মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৩ অপরাহ্ন

লন্ডনে বেক্সিমকোর ‘দুই যুবরাজের’ ৮৪৬ কোটি টাকার ফ্ল্যাট-বাড়ি

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বাংলাদেশের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ও তার ভাই সোহেল রহমানের ছেলে যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরের সবচাইতে অভিজাত এলাকায় ৮৪৬ কোটি টাকায় ৬টি ফ্ল্যাট কিনেছেন। সবচাইতে মূল্যবান ফ্ল্যাটের দাম ২৬ দশমিক ৭ মিলিয়ন পাউন্ড বা ৪১৬ কোটি টাকা, সর্বনিম্নটির মূল্য ১ দশমিক ২ মিলিয়ন পাউন্ড বা ১৯ কোটি টাকা। সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং ভাতিজা আহমেদ শাহরিয়ার রহমান—দুজনই ব্রিটিশ নাগরিক।

কথা হলো, ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী শাহরিয়ার এবং শায়ান কী করে যুক্তরাজ্যের বিলাসী জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত শীর্ষ ১ শতাংশ ব্রিটিশদের মতো জীবনযাত্রার অর্থ ব্যয়ের সক্ষমতা অর্জন করলেন?

আজ মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) বাংলা আউটলুকে প্রকাশিত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে জানা যায়, বাকিংহাম প্যালেসের খুব কাছের সবচেয়ে দামি এলাকার একটি হলো লন্ডনের এক গ্রোসভেনর স্কয়ার এলাকা। এই এক গ্রোসভেনরে স্কয়ারেই বিশ্বের অতি ধনীদের অতি বিলাসবহুল একটি আবাসিক ভবন অবস্থিত।

২০২২ সালের ৭ মার্চ এই ঐতিহাসিক আবাসিক ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি অ্যাপার্টমেন্ট ৪১৬ কোটি ২২ লাখ ৭০ হাজার টাকায় (২৬ দশমিক ৫ মিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড) বিক্রি হয়। এই ভবনটিতে ২৪ ঘণ্টা পাঁচ তারকা হোটেলের সুযোগ-সুবিধা এবং দূতাবাসস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে।

আর এর ক্রেতা হলেন ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসে নিবন্ধিত ওয়ান গ্রোসভেনর স্কয়ার নামের একটি কোম্পানি। যার সুবিধাভোগী হলেন সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান। সবচেয়ে বড় কথা, এই অ্যাপার্টমেন্টই লন্ডনে শায়ানের একমাত্র স্থাবর সম্পত্তি নয়। লন্ডনে তার আরও সম্পত্তি আছে।

এই এক গ্রোসভেনর স্কয়ার থেকে মাত্র ৩৫০ মিটারেরও কম দূরত্বে ১৭ গ্রোসভেনর স্কয়ারে ১৭শ শতকের আরও একটি ঐতিহাসিক বাড়ি আছে। যেটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে রূপান্তর করা হয়েছে।

২০১০ সালের ২৫ জুন এই ঐতিহাসিক ভবনের ষষ্ট তলার একটি অ্যাপার্টমেন্ট ৭২ কোটি ১৩ লাখ ৪৩ হাজারের বেশি টাকায় (৬ দশমিক ৫৫ মিলিয়ন পাউন্ডে) ক্রিকলউড বেঞ্চার নামের একটি কোম্পানির কাছে বিক্রি করা হয়। এই ক্রিকলউড বেঞ্চারও ওই আইল্যান্ডের বাসিন্দার নামে নিবন্ধিত কোম্পানি। যার সুবিধাভোগী ৪২ বছর বয়সী শায়ান।

ক্রিকলউড ভেঞ্চার নিবন্ধনে যে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে সেই একই ঠিকানা তিনটি ট্রাস্টে ব্যবহৃত হয়েছিল, যাদের নাম প্যান্ডোরা পেপার্সে (অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ বিদেশে নিয়ে লুকানোর এবং কর ফাঁকির গোপন জগত নিয়ে অনুসন্ধানী এক রিপোর্ট) এসেছিল।

লন্ডনে শায়ানের আরও একটি বাড়ি আছে। আর সেটি লন্ডনের গোল্ডার্স গ্রিনের অভিজাত পাড়ায় অবস্থিত একটি সেমি-ডিটাচড বাড়ি। এই বাড়িটি ২০১১ সালের ২৮ জানুয়ারি ১৮ কোটি ৮৪ লাখ ৮০ হাজার টাকায় (১.২ মিলিয়ন পাউন্ড) কেনা হয়। আর বাড়িটির মালিকানায় রয়েছে লেডিবার্ড প্রোপার্টি। ক্রিকলউড ভেঞ্চার ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপের যে ব্যক্তির ঠিকানায় নিবন্ধিত, সেই একই ঠিকানায় এই লেডিবার্ড প্রোপার্টিও নিবন্ধিত। আর এর সুবিধাভোগীও শায়ান। এই বাড়িটিতেই বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোটবোন শেখ রেহানা বিনা ভাড়ায় থাকেন বলে ২০২২ সালের শুরুর দিকে সংবাদমাধ্যম নেত্র নিউজে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়।

শায়ানের চাচাতো ভাই বেক্সিমকোর চেয়ারম্যান আহমেদ সোহাইল ফাসিহুর রহমানের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমানও লন্ডনে সম্পদ কেনায় কম যাননি। শাহরিয়ার লন্ডনের টনি মেফেয়ার এলাকায় বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন। শায়ানের বাড়ি থেকে অল্প  দূরেই (ঢিল ছোড়া দূরত্বে) ৫ গ্রোসভেনর স্কয়ারে ভবনটি অবস্থিত। অভিজাত পাড়া হওয়ায় এই ভবনটিও অতি ধনীদের আবাসস্থল হিসেবেই পরিচিত।

২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি জার্সিতে নিবন্ধিত নর্থ ডিউক হোল্ডিংস নামের একটি কোম্পানি ওই ভবনে দুটি ফ্ল্যাট কেনে। প্রতিটি ফ্ল্যাটের মূল্য ছিল ৪৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকার বেশি (৩ দশমিক ১ মিলিয়ন পাউন্ড) করে। নর্থ ডিউক হোল্ডিংসের সুবিধাভোগী হলেন ৪৬ বছর বয়সী শাহরিয়ার যিনি শ্যারি নামে অধিক পরিচিত। আর এই নর্থ ডিউক হোল্ডিংস যে ঠিকানায় নিবন্ধিত সেই একই ঠিকানা আরও ছয় ব্যক্তি ব্যবহার করেছেন, যাদের নাম পানামা পেপার্সে (গোপনীয়তা রক্ষাকারী হিসেবে স্বীকৃত পৃথিবীর অন্যতম প্রতিষ্ঠান মোস্যাক ফনসেকা, যেটি পানামার একটি আইনি প্রতিষ্ঠান, সেখান থেকেই ফাঁস হয় ১১ মিলিয়ন নথিপত্র। ওই নথিপত্রগুলোকেই বলা হচ্ছে পানামা পেপার্স) এসেছিল।

সাত বছর পর শাহরিয়ার আরেকটি শেল কোম্পানির (ভুঁইফোড় বা নামকাওয়াস্তে কোম্পানি) আওতায় একই ভবনে আরেকটি ফ্ল্যাট কেনেন ১৪১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ( ৯ মিলিয়ন পাউন্ড) দিয়ে। আর এই কোম্পানিটিও নর্থ ডিউকের ঠিকানায় নিবন্ধিত। এছাড়াও এই ফ্ল্যাট থেকে ৫ মিনিট হাঁটা দূরত্বে তার আরেকটি বাড়ি আছে।

এই বাড়িটি ২০১০ সালের ২১ অক্টোবর ৭০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা (৪.৫ মিলিয়ন পাউন্ড) দিয়ে কেনা হয়েছিল। এটা কেনা হয়েছিল আইল্যান্ডে নিবন্ধিত ক্রেগ্গান কনসালটেন্সি নামে আরেক শেল কোম্পানির আওতায়।

এইসব ফ্ল্যাট বাড়ির পাশাপাশি বিলাসী পণ্যের বিশ্বখ্যাত কোম্পানি লোরো পিয়ানার ‘বিলিয়ননিয়রস লোফারস’ (ধনকুবেরদের জুতা) আর স্যাভিল রো টেইলর টার্নবুল অ্যান্ড অ্যাসারের বেস্পোক শার্ট এবং স্যুট পরা শাহরিয়ার টানেন ডেভিডফ সিগারেট এবং ব্যক্তিগত ক্লাবের সদস্যপদও আছে তার। এ ছাড়া তার আরেকটি শখ আছে। আর তা হলো দামি দামি ব্র্যান্ডের ঘড়ি সংগ্রহ করা। তার সংগ্রহে থাকা বিভিন্ন দামি দামি ঘড়ির মূল্য ৩৯ কোটি ২৬ লাখ ৬৭ হাজারের (২.৫ মিলিয়ন পাউন্ডের উপরে) বেশি।

তার সংগ্রহে রিচার্ড মিল, পাটেক ফিলিপ, কার্টিয়ের, অডেমারস পিগুয়েট, রোলেক্স ইত্যাদির মতো বিরল ব্র্যান্ডের ঘড়ি রয়েছে। এমনকি বিশ্বের ঘড়ি সংগ্রহকারীদের মধ্যে শাহরিয়ার খুবই সম্মানিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচিত এবং ফ্যাশন প্রকাশনাগুলো তার এই শখ ও তাকে নিয়ে ফিচারও করেছে। সেখানে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে তিনি পারিবারিক টেক্সটাইল ব্যবসা দেখাশোনা করেন।

অর্থ পাচারের সম্ভাব্য ইঙ্গিত

কথা হলো, ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী শাহরিয়ার এবং শায়ান কী করে যুক্তরাজ্যের বিলাসী জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত শীর্ষ ১ শতাংশ ব্রিটিশদের মতো জীবনযাত্রার অর্থ ব্যয়ের সক্ষমতা অর্জন করলেন। কারণ বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থ স্থানান্তরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধি-নিষেধ আছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রেকর্ড থেকে দেখা যায়, বেক্সিমকোর সহযোগী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের শ্রীলঙ্কায় কারখানা স্থাপনের জন্য ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাঠানোর অনুমতিপত্র আছে। বিদেশে সম্পদ কিনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে শায়ান এবং শাহরিয়ার কোনো অনুমতি নেননি। তার মানে হলো সেসব অর্থ বাংলাদেশ থেকে পাচার করা হয়েছিল। কারণ যুক্তরাজ্যে তারা এমন কোনো চাকরি বাকরিতেও যুক্ত ছিলেন না যেখান থেকে এতো বিপুল পরিমাণ অর্থ আসবে। তাই ওইসব সম্পদ কেনার অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

২০২২-২৩ অর্থ বছরের কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদনে বেক্সিমকো লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে শাহরিয়ারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ ছাড়াও তিনি  বেক্সিমকোর বিস্তৃত টেক্সটাইল বিভাগের সমন্বিত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।

আর শায়ান চলতি বছরের ১৪ আগস্ট পর্যন্ত ২.১১ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা নিয়ে আইএফআইসি ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল থেকে বেক্সিমকোর সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসেস ফ্যাশনের নামে ২৯১ কোটি ১৯ লাখ টাকার বেশি (২৪. ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) ঋণ নিয়ে খেলাপি হওয়ায় ১৪ আগস্ট তাকে আইএফআইসি ব্যাংক থেকে অপসারণ করা হয়।

শায়ান বেক্সিমকোর সহযোগী প্রতিষ্ঠান নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজের (New Dacca Industries)প্রতিনিধি হিসেবে আইএফআইসির বোর্ডে ছিলেন। আইএফআইসি ব্যাংকে বাংলাদেশ সরকারের শেয়ারের পরিমাণ ৩২.৭৫ শতাংশ। আর হাসিনা সরকারের মন্ত্রী পদমর্যাদার অধিকারী শায়ানের বাবা সালমান এফ রহমানের ব্যাংকটিতে শেয়ার ছিল ২ শতাংশ। আর তা নিয়েই তিনি ২০১০ সাল থেকে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন।

এদিকে, শাহরিয়ার-শায়ান এই দুই চাচাতো ভাই বেক্সিমকো লিমিটেড বা বেক্সিমকো ফার্মার পরিচালকের তালিকায় ছিলেন না। তাদের বাবারা এই দুই কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যান ছিলেন।

কীভাবে এতো অর্থের ব্যবস্থা হলো

ধারণা করা হচ্ছে, বিদেশে সম্পদ কেনার অর্থ তারা তাদের বাবাদের কাছ থেকে পেয়েছেন। তাদের কোম্পানিগুলো বছরের পর বছর লাভ করেছে। তারপরও কোম্পানি থেকে তারা যে লভ্যাংশ পেতেন তা দিয়ে লন্ডন এবং সিঙ্গাপুরের মতো অতি উচ্চ ব্যয়বহুল শহরে জীবনযাত্রা পরিচালনা করতে পারতেন না। কিন্তু গত ১৫ আগস্ট দেশের ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারে অবস্থা বেগতিক করে ‘জনতা ব্যাংক ছাড়ল বেক্সিমকো’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই দুই ভাই কোথায় থেকে বিদেশে সম্পদ কেনার অর্থ পেয়েছেন তার ইঙ্গিত পাওয়া যায়  এই প্রতিবেদন থেকে।

প্রতিবেদনে বলা, জুনের শেষে বেক্সিমকো গ্রুপের কাছে জনতার দেওয়া মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা। যা ঋণদাতার পরিশোধিত মূলধনের প্রায় ৯৫০ শতাংশ—এবং যা খুব সহজভাবেই ব্যাংকটির একক-ঋণগ্রহিতার ঋণসীমা অতিক্রম করে।

ব্যাংক নথির বরাতে ডেইলি স্টারের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, জনতার কাছে বেক্সিমকোর বকেয়া ঋণের ৭২ শতাংশের মতো খেলাপি হয়েছে। সালমান এফ রহমান ছিলেন হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা। তিনি জনতা ব্যাংকের বোর্ড এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচ্চপদস্থদের সহায়তায় ব্যাংকিং নিয়মকানুন উপেক্ষা করে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়েছিলেন। জনতা ব্যাংকের সাবেক এবং বর্তমানের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা এমনটাই বলেছেন ডেইলি স্টারকে।

জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে অকপটে বলেছেন, বড় ধরনের ঋণ পেতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ অনুমোদনের জন্য তিনি (সালমান এফ রহমান) শেখ হাসিনা প্রশাসনে থাকা তার প্রভাব কাজে লাগিয়েছেন।

জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, শুধু তাই নয়, তিনি সবসময় ঋণ পুনঃতফসিল করতেন এবং বেক্সিমকো যাতে ব্যাংক খেলাপিদের সঙ্গে তালিকাভুক্ত না হয় সেজন্য সহজ শর্তাবলী পেতেন।

যেমন ব্যবসায়ীক এ গোষ্ঠীটি তার ঋণের একটি বড় অংশ ২০২২ সালের জুনে পুনঃতফসিল করে এবং বাকিটুকু গত বছরের জুনে করে। এই ঋণের বড় একটি অংশ খেলাপি হয়ে গেছে। তারপরও গত ৩০ জুলাই ব্যাংকের বোর্ড সভায় নতুন একটি পুনঃতফসি প্যাকেজ প্রস্তাব করা হয়েছিল। যদিও নথিপত্র বলছে, ওই প্রস্তাব অনুমোদন হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনতা ব্যাংকের এক কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, এ কারণেই বেক্সিমকোর প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ খারাপ ঋণ হয়ে গেছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সোনালী, অগ্রণী এবং রূপালীর শীর্ষ ঋণগ্রহিতাদের মধ্যেও বেক্সিমকো রয়েছে। শেয়ার মার্কেটে নিয়ম ভাঙায়ও সালমান এফ রহমান নিজের প্রভাব কাজে লাগান। যেমন প্রভাব খাটিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন থেকে শরিয়াভিত্তিক বন্ড সুকুক অনুমোদন করতেও তিনি সক্ষম হন।

বেক্সিমকো সুকুকের মাধ্যমে তার দুটি সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অর্থায়ন এবং টেক্সটাইল বিভাগের সম্প্রসারণের জন্য তিন হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারের বিশেষ তহবিল থেকে সুকুক বন্ডে বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়, যা পুঁজিবাজারের এক্সপোজার থেকে বাদ দেওয়া হবে। ব্যাংকিং আইন অনুযায়ী, ব্যাংকগুলি তাদের মূলধনের ২৫ শতাংশ স্টকে বিনিয়োগ করতে পারে৷

এটিও সালমান এফ রহমানের কারসাজি বলে মনে করা হয়। এর মাধ্যমে তিনি আবারও নিজের প্রভাব খাটিয়ে নতুন ঋণ উপকরণের জন্য ক্রেতাদের অর্থায়ন করেন। এটি তার মস্তিষ্কপ্রসূত কাজই।

গাজীপুরের একটি অখ্যাত আবাসন প্রকল্প ছিল শ্রীপুর টাউনশিপ। যার অতীত কোনো ইতিহাস নেই। এমন একটি স্বল্প পরিচিত রিয়েল এস্টেট কোম্পানির জন্য বিএসইসির মাধ্যমে সালমান এফ রহমান এক হাজার কোটি টাকার বন্ড অনুমোদন করিয়ে নেন।

শ্রীপুর টাউনশিপের সুবিধাভোগী ছিল বেক্সিমকোর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো। সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, এই বন্ডের গ্যারান্টর ছিল আইএফআইসি ব্যাংক। স্বার্থের দ্বন্দ্বে প্রভাব খাটানোর সালমান এফ রহমানের এটি আরেকটি উদাহরণ।

এদিকে, বেক্সিমকোর দুটি বন্ডের অনুমোদন প্রক্রিয়াই খতিয়ে দেখতে গত ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

সালমান এফ রহমান একাধিক হত্যা মামলায় গত ১৩ আগস্ট থেকে পুলিশ হেফাজতে আছেন। তাই বাংলা আউটলুক তার বক্তব্য নিতে পারেনি। এ ছাড়া বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশের বাইরে পাচার এবং আর্থিকখাতে অনিয়মের বিভিন্ন অভিযোগকে কেন্দ্র করে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

বাংলা আউটলুক

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com