শহরে পরিবার নিয়ে সময় কাটানোর সুযোগ কোথায়? ফেসবুকে তরুণ পেশাজীবী নাজিয়া হাসান এমনটাই লিখেছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই পোস্টের নিচে অনেক ঠিকানার ভিড় জমে যায়। এত সব রেস্তোরাঁর ভিড়ে কোথায় যাবেন নাজিয়া? মিরপুর ২ নম্বর সেকশনে নিজ বাসার আশপাশে কোনো ঠিকানা খুঁজছিলেন। চোখে পড়ল স্কাই লাউঞ্জ–এর নাম। এক শনিবার বিকেলে বন্ধুদের নিয়ে হাজির হলেন সেই ঠিকানায়। সনি স্কয়ার কয়েক বছর ধরেই মিরপুরের আলোচিত জায়গা। সিনেপ্লেক্স থেকে শুরু করে নামীদামি ব্র্যান্ডের বিশাল বিশাল শোরুম। এই সিনেপ্লেক্সের ছাদেই স্কাই লাউঞ্জ।
ঢুকেই চমকে যান নাজিয়া ও তাঁর বন্ধুরা। নাজিয়া জানান, ‘ঢাকার রুফটফ রেস্টুরেন্ট মানেই যেন একপাশে বসার জায়গা, আরেক পাশে খোলা ছাদ। কিন্তু স্কাই লাউঞ্জে একেক দিকে একেক রং। আমরা গিয়েছিলাম বিকেলে, পরিষ্কার আকাশের আবহে পুরো জায়গাটায় তখন ছিমছাম ভাব। আবার সন্ধ্যার পর মুম্বাই-দিল্লির ক্যাফে স্টাইলের আবহ।’
বন্ধুদের সঙ্গে পুরো রেস্তোরাঁ ঘুরে দেখলেন নাজিয়া। ঢাকায় হাতে গোনা লাউঞ্জের মধ্যে স্কাই লাউঞ্জ কেন আলাদা, টের পেলেন। একদিকে সমুদ্রের আবহ, অন্যদিকে সমুদ্রতটের দৃশ্যপটে কখন যে সময় পার হয়ে যায়, টেরই পাওয়া যায় না। স্কাই লাউঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা মোঃ মহসিন হাসান (রিয়েল) জানান, ‘ভোজনরসিক মানুষ এখন শুধু খেতেই চান না, উপভোগ করতে চান পরিবেশ ও আবহ। প্রতিবেশী দেশ ভারতে এই সংস্কৃতি বেশ জনপ্রিয়। আমাদের দেশে এমন আবহেই ভিন্নতা আনতে চেষ্টা করছি আমরা। এখানে খাবারের প্লেট সামনে নিয়ে প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বলতে বলতে লাউঞ্জের যেকোনো আবহে হারিয়ে যাবেন।’
কোনায় কোনায় ভিন্নতা
চিত্রনায়ক মামনুন হাসান ইমন ফেসবুকে স্কাই লাউঞ্জ নিয়ে লিখেছেন, ‘ঢাকা শহরের অন্যতম সেরা রেস্টুরেন্ট।’ তাঁর সঙ্গে দেখা গেল নায়ক রিয়াজ ও নায়িকা নিপুণকে। স্কাই লাউঞ্জের বিশাল বিশাল লাইটপোস্টের সামনে স্টাইলিশ সব ছবি তুলেছেন তিনি। নিচেই তো সিনেপ্লেক্স, তাই ফেসবুকে মারিয়া আফরোজ লিখেছেন, “‘সুড়ঙ্গ” দেখা শেষে ঘুরে আসলাম স্কাই লাউঞ্জ। আর খানাপিনাও করেছি।’ লেখার সঙ্গে স্বামী–সন্তানের সঙ্গে সিনেমা দেখা ও স্কাই লাউঞ্জের দারুণ সব ছবি শেয়ার করেছেন।
স্কাই লাউঞ্জের একেক কোণে একেক আবহ। এই যেমন প্রবেশ করতেই আপনার সামনে পড়বে কিছু পুরোনো জিনিস। নব্বইয়ের দশকে যাঁরা বড় হয়েছেন, তাঁরা বিশাল টেপরেকর্ডার কিংবা টেলিফোন, গ্রামোফোন দেখে একটু অতীতে হারিয়ে যেতেই পারেন। অভ্যর্থনা পেরিয়ে আপনি যেদিকেই পা রাখবেন, সবুজের ছোঁয়া। আর দেখবেন নানান প্রাকৃতিক অনুষঙ্গ। এই পাথরের আস্তরণ, এই নানা জাতের বিশাল বিশাল গাছ। খাবার টেবিলগুলো যেন সবুজ প্রকৃতির এখানে–সেখানে ছড়িয়ে আছে। এক কোণে সমুদ্রতটের আবহ। রীতিমতো সমুদ্রের পাশে কুঁড়েঘরে বসে খাবার আমেজ মিলবে।
খাবারের গল্প
টার্কিশ বিখ্যাত আদানা কাবাব থেকে শুরু করে আরব্য রজনীর অনেক খাবার এখানে আছে। কোরাল, স্টেক, চিকেন কর্ডন ব্লিউ , ন্যাশভিল হট চিকেন, কাবসা, নানান পদের স্যুপ, কাশ্মীরি চিকেন বটি, আফগানি চিকেন তন্দুরি, বিফ পেশোয়ারি কাবাবসহ নানান পদের খাবার এখানে মিলবে। খাবারের গন্ধ আর নানা গল্পে গমগম করতে থাকে পুরো জায়গা।
সবুজের সংযোগ
পুরো স্কাই লাউঞ্জের ছাদ যেন এক টুকরা বনানী। ইটপাথরের জঙ্গলের ভিড়ে বনের মধ্যে বারবিকিউ খাওয়ার স্বাদ পাবেন। রীতিমতো উনুন থেকে গরম মাংস আপনার সামনে আসবে, আর আপনি প্রিয়জনের চোখে চোখ না রেখেই সাবাড় করে দেবেন সুস্বাদু সব খাবার।
দেশি–বিদেশি নানা গাছের আবহে বন্ধুদের সেলফি দিয়ে চমকে দিতে পারেন। যাঁরা শুধু দেশি-বিদেশি ভিন্ন খাবারই অনুসন্ধান করেন না, সঙ্গে পরিবেশ আর আবহকেও গুরুত্ব দেন, তাঁদের জন্য স্কাই লাউঞ্জের অভিজ্ঞতা এককথায় অনন্য হবে।