ভ্রমণপিপাসুদের কাছে খাগড়াছড়ি নামটি খুবই জনপ্রিয়। আকাশ-পাহাড়ের এক বৈচিত্র্যপুর্ণ মিশেল দেখতে অনেকেই বেছে নেন চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত এই উপজেলাটিকে। বর্তমানে খাগড়াছড়ি জেলার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক উন্নত করার সাথে সাথে গুরত্ব দেয়া হয়েছে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থাকেও। আর এমনই একটি স্থানের নাম হল ‘রুন্ময় রিসোর্ট’। রুন্ময় রিসোর্টটি মূলত খাগড়াছড়ির দীঘিনালা সেনানিবাসে অবস্থিত (সাজেক রোড, সাজেক)। খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালার দূরত্ব প্রায় ২৭ কিলোমিটার, সময় লাগে প্রায় ১ ঘন্টার মতো। রিসোর্টটি রাস্তার পাশেই অবস্থিত। তবে বলা বাহুল্য যে, মেঘের সাথে থাকার এক উপযুক্ত স্থান এই রিসোর্টটি।রুন্ময়রিসোর্ট :রুন্ময় দোতলা ছোট একটি রিসোর্ট। এতে আছে মোটেমাত্র ৫টি রুম। নিচ তলায় রুম আছে ৩টি, আর দোতলায় আছে ২টি। তবে রিসোর্ট প্রাঙ্গণে আছে ৪টি তাবু। আছে দোলনা আর মাচাং। তবে সবথেকে আকর্ষণীয় হলো এর প্রাকৃতিক দৃশ্য! চোখ যেনো ফিরতেই চায় না। মেঘ আর সবুজ পাহাড় যেনো এখানে মিশে গেছে। রিসোর্টের বারান্দায় দাঁড়িয়েই দেখা যায় সাদা মেঘের আনাগোনা।আপনি চাইলে দোলনা, কিংবা মাচাং-এ বসে গরম চায়ের সাথে উপভোগ করতে পারেন এই দৃশ্য। রিসোর্ট থেকে যতদূর চোখ যাবে দেখা যাবে পাহাড়ি উপত্যকার উপর ভেসে চলা মেঘ। কখনও কখনও হয়তো গাঁয়ে এসে লাগবে আপনার। ভেবে দেখুন তো একবার দৃশ্যটা! রিসোর্টের মাচাংটি ধাপে ধাপে একটু নিচে নেমে গিয়েছে, তাই সেখান থেকে নিচে তাকালে শুধুই উপত্যকার সবুজ চোখে পড়বে। আরও আকর্ষনীয় ব্যাপার হলো এই রিসোর্টের ছাউনিগুলো। লাল রঙের ছাউনি আর সাজসজ্জা সহজেই নজর কেড়ে নেয়। এখান থেকে খাগড়াছড়ি ও সাজেক কোনোটাই তেমন দূরে নয়। তাই সহজেই ঘুরে আসা যায় আশেপাশের অন্যন্য স্থানগুলো। তাই মেঘের সাথে সময় কাটাতে ‘রুন্ময়’ হতে পারে শীর্ষ পছন্দ।রুমভাড়াসম্পর্কিততথ্য :নিচতলা : নিচ তলার প্রতিটি রু্মের ভাড়া হলো : ৪,৪৫০ টাকা।দোতলা : দোতলার প্রতিটি রুমের ভাড়া : ৪,৯৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।অতিরিক্তবেড : অতিরিক্ত বিছানার ব্যবস্থা নিতে চাইলে দিতে হবে-৬০০ টাকা।
প্রতিটি কক্ষে অতিথি থাকতে পারবেন– ২জন। নিচ তলা ও দোতলার জন্য একই ব্যবস্থা। তবে অতিরিক্ত বেডের ব্যবস্থা করে তিন জন করেও থাকতে পারবেন।
চারটি তাবুর প্রতিটিতে থাকতে পারবেন-৪ জন করে।
কোথায়খাবেন : হোটেল কিংবা রিসোর্ট সবজায়গায়ই আছে খাবাবের ব্যবস্থা। আগে থেকে বলে রাখলে পেয়ে যাবেন পছন্দ অনুযায়ী খাবারের সার্ভিসও। ইচ্ছে করলে বারবিকিউ ও করা যায় রিসোর্টগুলোতে। আবার আছে আদিবাসী ঘর। সেখানেও খাবার গ্রহণ করা যেতে পারে।
কীখাবেন : খাগড়াছড়িতে ঘুরতে গেলে সেখানে পাবেন বিভিন্ন স্বাদের খাবার, যা রান্না করা হয় আদিসাসী স্টাইলে। খাবারের রন্ধনশৈলীতে থাকে আদিবাসী ছোঁয়া। তবে যেনে নেয়া যাক এমন কিছু খাবারের কথা :
ব্যাম্বুচিকেন : স্বাদ আর গন্ধে খাবারটি অসাধারণ, খাগড়াছড়ি গেলে যা অবশ্যই পরখ করা উচিৎ। পাহাড়ি মসলা, সাবারাং পাতার সাথে রান্না করা হয় মোরগের মাংস। কাঁচাবাঁশের ভিতরে রান্নার সরঞ্জাম ঢুকিয়ে কলাপাতা দিয়ে বন্ধ করা হয় বাঁশের মুখ, তারপর এটাকে রান্না করা হয় কয়লার আগুনে।
থানকুনিপাতারসালাদ : আদিবাসী খাবার ঘরে এই খাবারটি সচরাচর পাওয়া যায়। থানকুনি পাতার অনেক ভেষজ গুণ আছে। এই পাতার সাথে কাঁচা শশা, পেয়াঁজকুচি, টমেটো আর ঝাল লংকা দিয়ে তৈরি করা হয় এই সালাদ।
কচিঁবাশেঁরভাজি : কচিবাশেঁর নরম অংশ বা বাশঁকোড়ল এর সাথে চিংড়ি শুটকি এর রসায়ন হলো এই রান্নাটি। তবে এটি পাওয়া যায় বর্ষাকালে, কারণ এই সময় কচিবাঁশ পাওয়া যায়।
সুচমরিচেরভর্তা : যারা ঝাল খেতে পছন্দ করেন খাবারটি তাদের পছন্দ হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের সবজির সাথে মরিচ যোগে এই খাবার রান্না হয়।
এসব খাবার ছাড়াও পাহাড়ি আনারস, কলা, পেঁপে, তেঁতুল ইত্যাদি ফল খুবই সুস্বাদু। আর যারা চা পান করতে ভালোবাসেন তারা স্থানীয় টং এর দোকানে ‘বাঁশের চা’ পান করতে পারেন।
কীভাবেযাবেন :
ফকিরাপুল : ফকিরাপুল থেকে এস.আলম সার্ভিস, শ্যামলী পরিবিহিনের বাস ছেড়ে যায় খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে।
আরামবাগ : আরামবাগ থেকে চালু আছে সেন্টমার্টিন পরিবহন।
গাবতলী : ঈগল পরিবহন, সৌদিয়া, শান্তি পরিবহন, হানিফ পরিবহন, ইকোনো পরিবহন, হিমাচল পরিবহন এই বাস গুলো চালু আছে খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে। খাগড়াছড়ি থেকে দিঘীনালার দুরত্ব প্রায় ২৩ কিলোমিটার, ঢাকা থেকে বাসে খাগড়াছড়ি এবং সেখান থেকে দিঘীনালা পর্যন্ত আছে লোকাল বাস, মোটরসাইকেল সার্ভিস।
যোগাযোগ : রুন্ময় রিসোর্ট দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি মোবাইলঃ +৮৮০১৮৬৫-৩৪৭৬৮৮