পৃথিবীতে ফ্রেশওয়াটার সোয়াম্প ফরেস্ট বা স্বাদুপানির জলাবন আছে মাত্র ২২টি। ভারতীয় উপমহাদেশ আছে এর দুইটি, একটা শ্রীলংকায়, আরেকটি বাংলাদেশে সিলেটের রাতারগুল, গোয়াইনঘাটে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে কাছ থেকে দেখতে ঘুরে আসতে পারেন এই রাতারগুল। খরচ খবই কম, মাত্র ৭০০ টাকায় আপনি ঢাকা থেকে ঘুরে আসতে পারবেন সেখান থেকে।
অবস্থান
সিলেট শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে এই রাতারগুল। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের গুয়াইন নদীর দক্ষিণে রাতারগুলের অবস্থান। প্রায় ৩১০ একর জমির ভূমির ওপর জলের মধ্যে ভেসে থাকা সবুজ বৃক্ষ, তার মাঝ দিয়ে নৌকায় করে রাতারগুলে ঘুরে বেড়ানোর যাবে মাত্র এক থেকে ২ ঘন্টায়। চাইলে আরো বেশি সময় কাটাতে পারেন। বন বিভাগের তথ্যমতে, বনের আয়তন ৩ হাজার ৩শ ২৫ দশমিক ৬১ একর। ১৯৭৩ সালে বনের ৫০৪ একর বনভূমিকে বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়। স্থানীয় মানুষজনের কাছে এইটা “সুন্দরবন” নামেই বেশি পরিচিত।
যা দেখবেন
অদ্ভুত এই জলের রাজ্য। কোনো গাছের কোমর পর্যন্ত ডুবে আছে পানিতে। একটু ছোট যেগুলো, সেগুলো আবার শরীরের অর্ধেকটাই ডুবে আছে জলে। ঘন হয়ে জন্মানো গাছপালার কারণে কেমন যেন আলো-আধারির এক মাদকতাময় খেলা। বনের মাঝ দিয়ে চলতে গেলে ভ্রমণ পিসাসুদের জড়িয়ে ধরবে নানা ধরনের গাছপালা। বৈশিষ্ট্যে এ বনের সাথে মিল রয়েছে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের আমাজনের। ডিঙিতে চড়ে বনের ভিতর ঘুরতে ঘুরতে দেখা যাবে প্রকৃতির রূপসুধা। জলমগ্ন বলে এই বনে সাঁপের আবাসটাই বেশি, তবে ভাগ্য ভালো হলে দেখা হয়ে যেতে পারে দু-একটা বানরের সঙ্গে। তাছাড়া চোখে পরার মত বনে সাদা বক, কানা বক, মাছরাঙ্গা, টিয়া, বুলবুলি, পানকৌড়ি, ঢুপি, ঘুঘু, চিলসহ নানা জাতের পাখিতো আছেই।বনের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া এই রাতারগুলে চলে পাখির ‘ডুবো খেলা’।
বনজুড়ে চড়ে বেড়ায় নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী। হাওর আর নদী বেষ্টিত অপূর্ব সুন্দর বনের দক্ষিণ পাশে সবুজের চাদরে আচ্ছাদিত জালি ও মূর্তা বেত বাগান। এর পেছনেই মাথা উঁচু করে আছে সারি সারি জারুল-হিজল-কড়চ।গাছের মধ্যে করচই বেশি। হিজলে ফল ধরে আছে শয়ে শয়ে। বটও চোখে পড়বে মাঝেমধ্যে। তবে রাতারগুলের বেশ বড় একটা অংশে বাণিজ্যিকভাবে মুর্তা লাগিয়েছে বন বিভাগ। মুর্তা দিয়ে শীতল পাটি হয়। মুর্তা বেশি আছে নদীর উল্টো পাশে। ওদিকে শিমুল বিল হাওর আর নেওয়া বিল হাওর নামে দুটো বড় হাওর আছে। বড়ই অদ্ভুত এই জলের রাজ্য। কোথাও চোখে পড়বে মাছ ধরার জাল পেতেছে জেলেরা। ঘন হয়ে জন্মানো গাছপালার কারণে কেমন অন্ধকার লাগবে পুরো বনটা। মাঝেমধ্যেই গাছের ডালপালা আটকে দিবে পথ। হাত দিয়ে ওগুলো সরিয়ে তৈরি করতে হবে পথ। চলতে হবে খুব সাবধানে।
রাতারগুল যাওয়ার পথ
প্রথম উপায়– সিলেটের বন্দর বাজার পয়েন্ট থেকে সিএনজি নিয়ে মটরঘাট (সাহেব বাজার হয়ে) পৌঁছাতে হবে, এরপর মটরঘাট থেকে সরাসরি ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে বনে চলে যাওয়া যায়।
দ্বিতীয় উপায় – সিলেটের আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে সিএনজি নিয়ে গোয়াইনঘাট পৌঁছানো যায়। ওসমানী এয়ারপোর্ট, শালুটিকর হয়ে যাওয়া এই রাস্তাটা বর্ষাকালে খুবই সুন্দর। এরপর একইভাবে গোয়াইনঘাট থেকে রাতারগুল বিট অফিসে আসবার জন্য ট্রলার ভাড়া করতে হবে। বিট অফিসে নেমে ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে বনে ঢুকতে হবে।
তৃতীয় উপায়– সিলেট থেকে জাফলং-তামাবিল রোডে সারীঘাট হয়ে সরাসরি গোয়াইনঘাট যেতে পারেন। এরপর গোয়াইনঘাট থেকে রাতারগুল বিট অফিসে আসবার জন্য ট্রলার ভাড়া করতে হবে। বিট অফিসে নেমে ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে বনে ঢুকতে হবে।
সতর্কতা
নৌকায় করে ঘোরার সময় পানিতে হাত না দেওয়াই ভালো কারণ জোকসহ বিভিন্ন পোকামাকড় তো আছেই, বিষাক্ত সাপও পানিতে বা গাছে দেখতে পাওয়া যায় প্রায়। যারা সাঁতার জানেন না, সঙ্গে লাইফ জ্যাকেট রাখতে পারেন। তবে বনের পরিবেশ নষ্ট করবেন না। পলিথিন, বোতল, চিপস, বিস্কুটের প্যাকেট ইত্যাদি পানিতে ফেলবেন না। আমাদের নিজেদের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব আমাদেরই।