মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৮ পূর্বাহ্ন

যেসব কারণে বিমানবন্দর নেই এই ৫ দেশে

  • আপডেট সময় রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪

দ্রুত যাতায়াতের জন্য উড়োজাহাজ সবারই পছন্দের একটি যানবাহন। কিন্তু এই ২০২৪ সালে এসেও যদি আপনাকে শুনতে হয় বিশ্বে এমন দেশও আছে, যেখানে বিমানবন্দর নেই, তাহলে নিশ্চয় পিলে চমকে উঠবে। তাও একটি-দুটি নয়, বিমানবন্দর ছাড়া এমন দেশের সংখ্যা পাঁচটি। বিমানবন্দর কেন নেই—এমন প্রশ্ন যদি করেন, তবে বলতে হয় এই দেশগুলো আকারে একেবারে ছোট। তার পরও কোনো কোনোটিতে জায়গা থাকলেও পাহাড়ি ভূপ্রকৃতির কারণে তাদের সীমানার মধ্যে বিমানবন্দর স্থাপন কঠিন। চলুন তবে পরিচিত হই বিমানবন্দর নেই এমন দেশগুলোর সঙ্গে।

1.-lichenstein

লিচেনস্টাইনের মোট আয়তন ১৬০ বর্গ কিলোমিটারের তিন ভাগের দুই ভাগ দখল করে আছে ছোট পাহাড়গুলো। ছবি: পিক্সাবে

লিচেনস্টাইন
জাতিসংঘের হিসাবে লিচেনস্টাইনের জনসংখ্যা ৪০ হাজারের কাছাকাছি। রাটিকন পর্বতমালার পাদদেশের ছোট পাহাড় এবং ২ হাজার ৫৯৯ মিটার উঁচু চূড়া গ্রসপিটজের জন্য আলাদা নাম আছে এর।

ছোট্ট এ দেশের মোট আয়তন ১৬০ বর্গ কিলোমিটারের তিন ভাগের দুই ভাগ দখল করে আছে ছোট পাহাড়গুলো। এমনিতে ছোট্ট দেশ, তারপর পার্বত্য এলাকা, পুবে রাইন নদী, পশ্চিমে অস্ট্রিয়ার পর্বতমালা—সব মিলিয়ে লিচেনস্টাইনের ভাগ্যে কোনো বিমানবন্দর জোটেনি। তবে দক্ষিণ লিচেনস্টাইনের ব্লেইজারস গ্রামে একটি হেলিপোর্ট আছে। আর কাছেই আছে ছোট্ট দুটি বিমানবন্দর—সুইজারল্যান্ডের স্যান্ট গ্যালেন-অ্যাল্টেনরাইন এয়ারপোর্ট ও জার্মানির ফ্রেডরিচশ্যাফেন এয়ারপোর্ট।

সহজে যাওয়া যায় এমন বড় বিমানবন্দর জুরিখ এয়ারপোর্টের দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার। কার কিংবা বাসেই লিচেনস্টাইন থেকে সেখানে পৌঁছে যাওয়া যায়।

তবে আকারে ছোট হলে কী হবে, আল্পস পর্বতমালার কিছুটা অংশ দেশটির সীমানায় পড়ায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য আলাদা নাম আছে এর। ভাদুজ দুর্গও টানে পর্যটকদের।

2.-monaco

ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থান মোনাকোর। ছবি: উইকিপিডিয়া

মোনাকো
লিচেনস্টাইনের মতো মোনাকোর অবস্থানও ইউরোপ মহাদেশে। ৩৭ হাজারের আশপাশে এর জনসংখ্যা। এর আয়তন শুনলে চমকে উঠবেন, কেবল দুই বর্গ কিলোমিটার। অর্থাৎ আয়তনে স্বাধীন দেশগুলোর মধ্যে কেবল ভ্যাটিকান সিটি তার চেয়ে ছোট। আর তাই কম জনসংখ্যার দেশ হলেও মোনাকো খুব ঘনবসতিপূর্ণ এক দেশ।

ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত মোনাকোকে তিন দিক থেকেই ঘিরে আছে ফ্রান্স। ইতালির সীমানাও বেশি দূরে নয়, মাত্র ১০ মাইল। ২.১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশটির জনসংখ্যা ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ৩৮ হাজার ৪০০। দেশ ছোট্ট হলে কী হবে, এর মোটামুটি গোটাটাই পাহাড়ি ভূভাগ, পর্যটকদেরও প্রিয় গন্তব্য এই মোনাকো। ক্ষুদ্র আয়তন আর পাহাড়ি এলাকার কারণে দেশটিতে কোনো বিমানবন্দর নেই।

এখন নিশ্চয় ভাবছেন, বিমানবন্দর না থাকলে এই পর্যটকেরা সেখানে যান কীভাবে? আর দেশটির নাগরিকেরাই বা কী করেন? কোনো সমস্যা নেই। ফ্রান্সের নিস কোতে দে জিও বিমানবন্দরে নেমে একটি ক্যাব ভাড়া করে এমনকি নৌকা নিয়েও পৌঁছে যেতে পারবেন মোনাকোয়।

ক্যাসিনো ও ফর্মুলা ওয়ান রেসের জন্য বিখ্যাত মোনাকো ধনকুবেরদের খুব প্রিয় জায়গা।

3.-vatican

ভ্যাটিকান সিটির সেন্ট পিটার্স স্কয়ার। ছবি: উইকিপিডিয়া

ভ্যাটিকান সিটি
ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিওর দেওয়া তথ্য বলছে, ভ্যাটিকান সিটির জনসংখ্যা ৫০০ ছুঁই ছুঁই। জনসংখ্যা ও আয়তন দুই দিক থেকেই ভ্যাটিকান সিটি পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট স্বীকৃত রাষ্ট্র। ইতালির রোমের মধ্যে অবস্থিত দেশটির আয়তন ০.৪৪ বর্গ কিলোমিটার।

এখানে উড়োজাহাজ অবতরণের মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই। নেই কোনো নদী বা সাগর। এমনকি নেই অন্য ধরনের কোনো যাতায়াতব্যবস্থা। ছোট্ট দেশটি আপনি ভ্রমণ করতে পারবেন পায়ে হেঁটেই। ভ্যাটিকান সিটির ভ্যাটিকান প্যালেসে পোপের বাসস্থান। তবে স্বাধীন দেশটি কিন্তু পড়েছে ইতালির রোমের ভেতরে—দেশের ভেতরে আরেক দেশ বলতে পারেন একে। তাই বলে ভ্যাটিকানের বাসিন্দাদের খুব দুশ্চিন্তায় পড়তে হয় তা নয়! আশপাশেই আছে রোমের সিয়ামপিনো আর ফিওমিচিনো বিমানবন্দর। ভ্যাটিকান সিটি থেকে ট্রেনে আধা ঘণ্টায় পৌঁছে যেতে পারবেন সেখানে।

১৯২৯ সালে যখন ভ্যাটিকান সিটি প্রতিষ্ঠিত হয়, একই সময়ে ইতালিতে রোমান ক্যাথলিক ধর্মকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়। পোপের বাসস্থান এবং পবিত্র তীর্থস্থান হওয়ার পাশাপাশি সিস্টিন চ্যাপেল, সেন্ট পিটারস স্কয়ার এবং সেন্ট পিটারস ব্যাসিলিকা এখানকার দ্রষ্টব্য স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

4.-san-marino

ইউরোপ মহাদেশের অন্তর্ভুক্ত ছোট্ট এক দেশ সান মেরিনো। ছবি: পিক্সাবে

সান মেরিনো
ইউরোপ মহাদেশের অন্তর্ভুক্ত ছোট্ট এই দেশের জনসংখ্যা জাতিসংঘের হিোবে আনুমানিক ৩৩ হাজার ৬৪৪। আয়তন ৬১ বর্গ কিলোমিটার।

গোটা দেশটিকেই ঘিরে আছে ইতালি। আর জলপথে সেখানে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। বিমানবন্দর করার মতো উপযোগী কোনো জায়গা নেই ছোট্ট এই দেশে। তবে পাহাড়ে-সমতলে মেশানো দেশটির রাস্তা-ঘাটের অভাব নেই। জালের মতো ছড়িয়ে থাকা এই রাস্তাগুলো দিয়েই দেশের ভেতরে ও বাইরে যাতায়াত চলে। বাইরে বলতে ইতালিতে। এখান থেকে ইতালির রিমিনি বিমানবন্দর বেশ কাছেই। ফ্লোরেন্স, বলোগনা, ভেনিস আর পিসা বিমানবন্দরও দূরে নয় সান মেরিনোর সীমান্ত থেকে। দেশটিতে ঘুরতে আসা পর্যটকেরা এবং এখানকার বাসিন্দারা প্রায়ই যাতায়াতে ওই বিমানবন্দরগুলো ব্যবহার করেন।

ফিফার পুরুষ ফুটবল দলগুলোর র‍্যাঙ্কিংয়ে বেশির ভাগ সময়ে তলানিতে থাকা দেশটি মধ্যযুগের বিভিন্ন স্থাপত্য কীর্তির জন্য বিখ্যাত।

5.-andora

অ্যান্ডোরার প্রায় পুরোটাই পর্বতময়। ছবি: উইকিপিডিয়া

অ্যান্ডোরা
অ্যান্ডারো তালিকার অন্য চারটি দেশের তুলনায় বেশ বড়ই বলা চলে। ৪৬৮ বর্গকিলোমিটারের দেশটিতে অন্তত একটি বিমানবন্দর থাকতেই পারত। তবে সমস্যা হচ্ছে গোটা দেশটিই পর্বতময়। ফ্রান্স আর স্পেনের মাঝখানে অবস্থিত অ্যান্ডোরাকে ঘিরে আছে পিরেনিজ পর্বতমালা। এখানে প্রায় ৩ হাজার মিটার উচ্চতার চূড়াও আছে। সবকিছু মিলিয়ে তাই এই এলাকায় উড়োজাহাজ চালানো মোটেই সহজ নয়। তাই ইউরোপের এই দেশেও কোনো বিমানবন্দর নেই।

তাই বলে অ্যান্ডোরার বাসিন্দাদের সমস্যায় পড়তে হয় না। বার্সেলোনা, লেরিদা কিংবা জিরোনার মতো শহরগুলো অ্যান্ডোরার মোটামুটি ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে। সেখানে বাসে বা গাড়িতে চেপে গিয়ে উড়োজাহাজ ধরা যায়।

সূত্র: মস অ্যান্ড ফগ ডট কম, টাইমস অব ইন্ডিয়া, ব্রিটানিকা ডট কম, উইকিপিডিয়া

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com