ঘুষ ও দুর্নীতি মাধ্যমে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি সম্পদ গড়েছিলেন উজবেকিস্তানের সাবেক স্বৈরশাসক ইসলাম করিমভের মেয়ে গুলনারা করিমোভা। খবর বিবিসির
বর্তমানে গুলনারার দিন কাটছে কারাগারে। তবে এককালে পপ তারকা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন তিনি। বিভিন্ন পপ ভিডিওতে দেখা গেছে তাকে। এছাড়া তিনি একটি গয়নার দোকান চালিয়েছেন। স্পেনে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এক সময় বিভিন্ন দেশে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি সম্পদ কিনেছিলেন গুলনারা কারিমোভা। এই অর্থ দিয়ে বাড়ি এবং ব্যক্তিগত বিমান ক্রয় করেন। সেজন্য তিনি ব্রিটেনের কোম্পানি ব্যবহার করেছেন। তার এই অর্থের উৎস ছিল ঘুষ এবং দুর্নীতি। এমনটাই বলেছে মানবাধিকার সংস্থা ফ্রিডম ফর ইউরেশিয়ার এক গবেষণায়।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই কাজের জন্য লন্ডন এবং ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডের কিছু অ্যাকাউন্টিং ফার্ম সহায়তা করেছে। এর ফলে অবৈধ সম্পদ মোকাবিলায় ব্রিটেনের প্রচেষ্টাকে আবারও নতুন করে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। বহু বছর ধরে এমন অভিযোগ রয়েছে, বিদেশি অপরাধীরা যেভাবে ব্রিটেনের সম্পদ ব্যবহার করে অর্থ পাচার করছে সেটি বন্ধের জন্য ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, কারিমোভা যত সহজে যুক্তরাজ্যের সম্পদ অর্জন করেছে তা আসলেই ‘উদ্বিগ্ন’ হবার মতো।
এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে, যারা সম্পদ পাচারের জন্য এসব কোম্পানির হয়ে যারা কাজ করছিল তারা গুলনারা কারিমোভার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি জানতো না। এমনকি অর্থের উৎস যে সন্দেহজনক হতে পারে সেটিও তাদের ধারণা ছিল না। ব্রিটেনের যারা এই সেবা দিয়েছে তাদের কারো বিরুদ্ধেই তদন্ত বা জরিমানা করা হয়নি।
একটা সময় মনে হয়েছিল গুলনারা কারিমোভা তার বাবা ইসলাম কারিমোভার উত্তরসূরী হবেন। ইসলাম কারিমোভা ১৯৮৯ সাল থেকে শুরু করে ২০১৬ সালে তার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
কিন্তু এরপর ২০১৪ সালে তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান। পরে জানা যায় যে, তার বাবা ক্ষমতায় থাকার সময়েই তিনি দুর্নীতির দায়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তার বাবা মারা যাবার পরে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে গৃহবন্দীর শর্ত ভাঙার অভিযোগে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
গুলনারা কারিমভের বিরুদ্ধে প্রসিকিউটররা অভিযোগ আনেন যে তিনি একটি অপরাধী গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত – যারা ব্রিটেন, রাশিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ ১২ টি দেশে এক বিলিয়ন ডলারের সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ফেলো এবং ফ্রিডম ফর ইউরেশিয়ার একজন গবেষক টম মেইনি বলেন, ‘কারিমোভার ঘটনাটি সর্বকালের সবচেয়ে বড় ঘুষ আর দুর্নীতির ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্যতম।’
যদিও কারিমোভা আর তার সহযোগীরা এরই মধ্যে কিছু সম্পদ বিক্রি করে দিয়েছেন, যেগুলো দুর্নীতির অর্থ দিয়ে অর্জিত হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
ফ্রিডম ফর ইউরেশিয়া সম্পদ ও ভূমি রেজিস্ট্রি রেকর্ড নিয়ে গবেষণা করে অন্তত ১৪টি সম্পদের উল্লেখ পেয়েছে যা তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার আগে যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, দুবাই এবং হংকংসহ বিভিন্ন দেশে সন্দেহজনক তহবিল ব্যবহার করে কিনেছিলেন।
এই রিপোর্টে লন্ডন ও এর আশেপাশের পাঁচটি সম্পদের বিবরণ দেওয়া হয়েছে, যেগুলোর বর্তমান মূল্য ৫০ মিলিয়ন পাউন্ড। এর মধ্যে রয়েছে বাকিংহাম প্যালেসের পশ্চিম দিকে বেলগ্রাভিয়াতে তিনটি ফ্ল্যাট, মেফেয়ারে বাড়ি, এবং ১৮ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সারে ম্যানর হাউস যার সাথে একটি ব্যক্তিগত লেকও রয়েছে।
বেলগ্রাভিয়ার দুটি ফ্ল্যাট ২০১৩ সালে কারিমোভা গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বিক্রি করা হয়েছিল। ২০১৭ সালে মেফেয়ারের বাড়ি, সারে ম্যানশন এবং বেলগ্রাভিয়াতে তৃতীয় ফ্ল্যাটটি জব্দ করা হয় গুরুতর জালিয়াতির অভিযোগে।
ফ্রিডম ফর ইউরেশিয়ার প্রতিবেদনে লন্ডন এবং ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে কয়েকটি ফার্মের নাম উল্লেখ করা হয়, যেগুলো কারিমোভা বা তার সহযোগীরা সম্পদ বা ব্যক্তিগত জেটলাইনার কেনার প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করেছিল।
কারিমোভার প্রেমিক রুস্তম মাদুমারভ এবং আরো কয়েকজন যারা তার সন্দেহভাজন সহযোগী তাদেরকে দাপ্তরিক নথিতে ‘সুবিধাভোগী মালিক’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি একটি আইনি শব্দ যা ব্যবহার করা হয়েছে আসলে যে ব্যক্তি যুক্তরাজ্য, জিব্রাল্টার এবং ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে থাকা কোম্পানিগুলো নিয়ন্ত্রণ করে তাকে বোঝাতে। কিন্তু প্রতিবেদনে বলা হয় যে তারা আসলে কারিমোভার ছায়া হিসেবে ব্যবহৃত হতো, যারা এসব ফার্ম ব্যবহার করে কোটি কোটি ডলার পাচার করেছে।