সৌদি আরবের অর্থনীতি মূলত জ্বালানি তেলনির্ভর। জ্বালানি তেলনির্ভরতা কমাতে সৌদি কর্তৃপক্ষ নানা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এসবের উদ্দেশ্য অর্থনীতিতে জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসা। একই সঙ্গে ব্যবসা ও বিনিয়োগে বৈচিত্র্য আনা। সৌদি আরবের অর্থনৈতিক রূপান্তর নিশ্চিত করা ব্যয়বহুল ১০টি মেগা প্রকল্প নিয়ে এ প্রতিবেদন।
১. নরলানা: এটি নতুন অতি আধুনিক আবাসন কেন্দ্র। এনইওএম নামের নতুন শহরের অংশ হিসেবে নরলানা উত্তর-পশ্চিম সৌদি আরবে গড়ে উঠছে। আকাবা উপসাগরের উপকূলে অবস্থিত নরলানার আশপাশে রয়েছে অসংখ্য প্রাকৃতিক টিলা। টিলাগুলোর সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হবে প্রাসাদ, অ্যাপার্টমেন্ট ও ভিলাসহ ৭১১টি প্রপার্টি। এখানে ১২০ বার্থের জাহাজ, ১৮ গর্তের গলফ মাঠ, অশ্বারোহী কেন্দ্র, ওয়াটারস্পোর্টস এবং নৌযান চালানোর সুবিধাসহ বিলাসবহুল জীবনযাপনের সব উপকরণ থাকবে।
২. উতামো: এটি শিল্প ও বিনোদনের জন্য নতুন গন্তব্য। উত্তর-পশ্চিম সৌদি আরবের আকাবা উপকূলরেখা বরাবর এর অবস্থান। এটি দেখতে অবিকল একটি পাহাড়ি রেশমের গুটি। আশপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে এর স্থাপত্য নিবিড় সংযোগ তৈরি করবে। এ ভবনে উন্নত অডিও-ভিজ্যুয়াল সিস্টেমের মাধ্যমে সংগীত, শিল্প ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। মূলত এটি হবে একটি ভেন্যু।
৩. সিরান্না: এটি হবে পর্যটন গন্তব্য। সৌদি আরবের উত্তর-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল আকাবার পাশে এর অবস্থান। ৬৫টি বিলাসবহুল হোটেল ও ৩৫টি অভিজাত আবাসিক প্রপার্টি নিয়ে সিরান্না গঠিত। এসব ঘর থেকে দেখা যাবে লোহিত সাগর। উপত্যকা এবং এর জীববৈচিত্র্যের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে এসব ভবনের নকশা তৈরি করা হয়েছে। বিচ ক্লাব, স্পা, আরাম-আয়েসের সুযোগ-সুবিধা এবং খাদ্য পর্যটকদের সময়কে রাঙিয়ে তুলবে।
৪. এপিকোন: আকাবা উপসাগরের আরেকটি অভিজাত পর্যটন গন্তব্য হচ্ছে এপিকোন। এখানে ২৭৫ মিটার দীর্ঘ দুটি টাওয়ার থাকবে। অনেকটা থ্রিডি ইমেজের মতো। ৪১টি আল্ট্রা-প্রিমিয়াম হোটেল ও বিলাসবহুল আবাসন থাকবে। এছাড়া ১২০ কক্ষের রিসোর্ট ও উপকূলমুখী ৪৫টি ভিলা থাকবে। প্রতিদিনের চাপ কমাতে এখানকার বাসিন্দা ও অতিথিদের জন্য আতিথেয়তার নতুন উদাহরণ তৈরি করবে সৌদি আরব।
৫. লেইজা: এ স্থান পাহাড়ের জন্য বিখ্যাত। ৪০০ মিটার উঁচু পাহাড়ের চারপাশে ছোট-বড় অসংখ্য উপত্যকা রয়েছে। আকাবা উপসাগরের কাছাকাছি এর অবস্থান। ৯৫ শতাংশ ভূমি অবিকল রেখে এর নকশা তৈরি করা হয়েছে। ভ্রমণকারীদের থাকার জন্য এখানে তৈরি করা হয়েছে ৪০ কক্ষের কয়েকটি হোটেল। এসব হোটেলের রান্নাঘরে বিশ্বখ্যাত শেফদের নিয়োগ দেয়া হবে।
৬. দ্য লাইন: ১৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ কার্বনশূন্য শহর। এখানে কোনো ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করা যাবে না। হাঁটার জন্য থাকবে পর্যাপ্ত স্থান। বাসা, বিদ্যালয়, কর্মস্থান, পার্কের পাশাপাশি গণপরিবহন হিসেবে থাকবে বাস ও ট্রেন।
৭. ত্রোজেনা: এটি হবে বরফাচ্ছাদিত এলাকা। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় এনইওএম শহরের একটি অংশ হবে ত্রোজেনা। এর অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫০০-২৬০০ মিটার উঁচুতে। প্রায় ৬০ বর্গকিলোমিটারজুড়ে এর বিস্তৃতি। শীতকালে শূন্য ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা নেমে আসবে। থাকবে স্কিসহ অন্যান্য শীতকালীন ক্রীড়ার ব্যবস্থা। এখানে ২০২৯ সালে এশিয়ান উইন্টার গেমসের আয়োজন করা হবে। প্রতি বছর এখানে সাত লাখ পর্যটক আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
৮. অক্সাগন: সুয়েজ খালের কাছাকাছি লোহিত সাগরে ভাসমান শহর হবে অক্সাগন। এটি মূলত শিল্প খাতের কেন্দ্র হবে। যেখানে থাকবে কারখানা ও উৎপাদন-সংশ্লিষ্ট সব সুযোগ-সুবিধা। নবায়নযোগ্য জ্বালানি, খাদ্য উৎপাদন, ডিজিটাল টেকনোলজি সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে। টেকসই এবং শূন্য কার্বনসহ বিশ্বের প্রথম বন্দর হবে এটি। যেখানে সরবরাহ চেইন হবে পরিবেশবান্ধব।
৯. সিনদালা: ছোট একটি দ্বীপ সিনদালা। ৮ লাখ ৪০ হাজার বর্গমিটার আয়তন। চলতি বছর এটি চালু হওয়ার কথা রয়েছে। এখানে তিনটি বিলাসবহুল রিসোর্ট, একটি ইয়ট ক্লাব, ৫০টি বিলাসবহুল ব্র্যান্ড এবং ৮৬টি উপকূলীয় সাঁকো থাকবে। প্রায় সাড়ে তিন হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। ২০২৮ সালে দৈনিক ২ হাজার ৪০০ দর্শনার্থী এখানে আসার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
১০. নিউ মুরাব্বা: ১৯ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত এলাকা। বাণিজ্য ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটানো হবে এখানে। ১৫ মিনিট হাঁটা পথে থাকবে অবকাশযাপন কেন্দ্র এবং ২০ মিনিট হাঁটা দূরত্বে থাকবে বিমানবন্দর। গাছগাছালিতে ঢাকা এ শহরে থাকবে বাইসাইকেলের আলাদা লেন। এখানে তিন লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে।
—অ্যারাবিয়ান বিজনেস অবলম্বনে