দিন দিন বাড়ছে জনসংখ্যা। কমছে থাকার জায়গা। পৃথিবীর সব জায়গাতেই এখন কমবেশি এই ছবি দেখা যায়। মুম্বাই, কলকাতা হোক বা বিদেশের কোনও শহর, মাথা গোঁজার একটা ছাদ খুঁজতে হিমশিম খেতে হয় সাধারণ মানুষকে। সেখানে এখনও পৃথিবীতে এমন দেশ রয়েছে, যেখানে মাইলের পর মাইল হাঁটলেও কোনও মানুষ দেখা যায় না। যে দেশে মানুষের থেকে ঘোড়ার সংখ্যা বেশি।
এ রকমই এক দেশ মঙ্গোলিয়া। সেখানে মানুষের থেকে ঘোড়ার সংখ্যা বেশি। সম্প্রতি সেখানে ঘুরতে গিয়ে এমন দাবিই করেছেন এক ভ্লগার।
মাইলের পর মাইল বালিতে ঢাকা ধু ধু প্রান্তর। মাঝেমধ্যে নীল জলাশয়। তাকে চারপাশ থেকে ঘিরে রেখেছে সবুজ। গোটা মঙ্গোলিয়া জুড়ে এই দৃশ্যই দেখা যায়।
১৫ লক্ষ ৬৪ হাজার ১১৬ বর্গ কিলোমিটার ভৌগোলিক এলাকা নিয়ে মঙ্গোলিয়া। পৃথিবীর ১৯তম বৃহত্তম দেশ। আলাস্কার থেকে সামান্য ছোট।
২০২১ সালের জনগণনা অনুসারে, মঙ্গোলিয়ার মোট জনসংখ্যা মাত্র ৩১ লক্ষ ৯৮ হাজার ৯১৩। মোট জনসংখ্যার নিরিখে পৃথিবীতে ১৩৪তম স্থানে রয়েছে সে দেশ।
মঙ্গোলিয়ায় প্রতি বর্গ কিলোমিটারে মাত্র দু’জন করে বাস করেন। জনঘনত্বের দিক থেকে পৃথিবীর সব দেশগুলির মধ্যে সবচেয়ে নীচে রয়েছে এই দেশ। অর্থাৎ এই দেশে জনঘনত্ব গোটা দুনিয়ায় সব থেকে কম।
সারা দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক বাস করেন রাজধানী উলানবাতারে। জনসংখ্যার নিরিখে তার পরেই রয়েছে উত্তরের ডারহান শহর। বাকি দেশের বহু অংশ মাইলের পর মাইল ফাঁকা।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪০০০ মিটার উচ্চতায় রয়েছে মঙ্গোলিয়া। দেশের বেশির ভাগ জমি চাষযোগ্য নয়। হয় বালিতে ঢাকা মরুভূমি, নয়তো দুর্গম। সে কারণে চাষবাস প্রায় হয় না বললেই চলে।
মঙ্গোলিয়ার নাগরিকেরা তাই সব্জি বা শস্যের বদলে খাওয়ার জন্য মাংস এবং দুগ্ধজাত খাবারেই বেশি ভরসা করেন। এ দেশের বাসিন্দারা বিভিন্ন রকম চিজ় তৈরি করতে পারেন। সেগুলি সংরক্ষণ করাও সুবিধাজনক।
এ দেশের বেশির ভাগ নাগরিকের জীবিকাও পশুপালন। দুধ, দুগ্ধজাত খাবার, মাংস বিক্রি করে সংসার চালান তাঁরা।
মঙ্গোলিয়ার অন্যতম বৈচিত্র্য হল ঘোড়া। সে দেশে প্রায় ৪০ লক্ষ ঘোড়া রয়েছে। অর্থাৎ মানুষের থেকেও দেশে ঘোড়ার সংখ্যা বেশি।
হাজার হাজার বছর ধরে মঙ্গোলিয়ায় দাপিয়ে বেড়ায় ঘোড়া। বলা হয়, মঙ্গোল সম্রাট চেঙ্গিস খানকে বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল এই দুর্ধর্ষ ঘোড়ার দল।
মঙ্গোলিয়ান ঘোড়ার উচ্চতা কম। কিন্তু বিভিন্ন প্রজাতির ঘোড়ার থেকে এরা জোরে ছোটে। দুর্গম এলাকায় যুদ্ধ বা শিকারে এরা পারদর্শী। দুর্গম এলাকায় যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম হল এই ঘোড়া।
মঙ্গোলিয়ার ঘোড়া হিমাঙ্কের ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস নীচে থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উষ্ণতাতেও অনায়াসে মানিয়ে নিতে পারে। এদের বিশেষ কোনও খাবারেরও প্রয়োজন নেই। মাঠের ঘাস আর মাঝেমধ্যে জল পেলেই চলে যায়।
না থেমে টানা ১০ কিলোমিটার দৌড়তে পারে মঙ্গোলিয়ার ঘোড়া। সে কারণে এই দুর্গম দেশে তাদের সংখ্যাবৃদ্ধি হয়েছে সহজে। যেখানে জনসংখ্যা খুব একটা বাড়তে পারেনি।
মঙ্গোলিয়ায় জনঘনত্ব কম হওয়ার অন্যতম কারণ দুর্গমতা, চাষবাসের অসুবিধা, চরম আবহাওয়া, দারিদ্র, স্বাস্থ্য পরিষেবার অভাব। দেশের ৩৬ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস করেন। এই সব প্রতিকূলতার সঙ্গে সহজেই মানিয়ে নিয়েছে ঘোড়াকুল। সে কারণে মঙ্গোলিয়ায় মানুষের থেকে ঘোড়ার বাস বেশি।