বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:২০ অপরাহ্ন

যে কারণে লন্ডনে যেতে ইচ্ছুক সিলেটি তরুণ-তরুণীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ

  • আপডেট সময় বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৪

মো. মাহফুজুল হক ফাহাদ। বাড়ি সিলেরে দক্ষিণ সুরমায়। সদ্য আইএলটিএস পরীক্ষায় ৬ পয়েন্টে পেয়ে পাস করেছেন। দক্ষিণ সুরমার একটি কলেজ থেকে এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হয়ে অধ্যয়ন করছেন  সিলেটের একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

এবার উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে চান যুক্তরাজ্যে। কিন্তু সদ্য পাওয়া একটি খবর তার কপালে এঁকে দিয়েছে দুশ্চিন্তার রেখা। খবরটি হচ্ছে- সে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আর্থিক চাপ সামলাতে দেশি-বিদেশি স্টুডেন্টদের টিউশন ফি বাড়ানোর প্রস্তাব জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত হলে ফাহাদসহ অনেক সিলেটি তরুণ-তরুণীর  লন্ডন তথা বিলেতে পড়ালেখার স্বপ্ন মলিন হয়ে যাবে

জানা গেছে, নেট মাইগ্রেশনের পরিমাণ কমাতে আগের কনজারভেটিভ পার্টির সরকার ফরেন স্টুডেন্টদের আসার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করে। এতে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফরেন স্টুডেন্ট আসা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। ফরেন স্টুডেন্টদের ভিসার ওপর বিধিনিষেধ আরোপের ফলে যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইসিসের সম্মুখীন হচ্ছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই আর্থিক চাপ সামলাতে  স্টুডেন্টদের টিউশন ফি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।

বর্তমানে স্টুডেন্টদের টিউশন ফি ৯ হাজার ২৫০ পাউন্ড। এটি বাড়িয়ে ১২ থেকে ১৩ হাজার পাউন্ড করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

১৪১টি হায়ার এডুকেশন ইনস্টিটিউটের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটিজ ইউকের প্রেসিডেন্ট স্যালি ম্যাপস্টোন বলেছেন, গত বছর এ নিষেধাজ্ঞা আসার পর থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয় সংকটের মধ্যে রয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদেরকে দুটি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। একটি হলো- আমাদের হায়ার এডুকেশন সিস্টেমকে পতনের দিকে ঠেলে দেওয়া অথবা বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক এই সেক্টরে সবার সঙ্গে মিলিয়ে একসঙ্গে কাজ করা।

হাউস অব কমন্সের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২২-২৩ সালে ব্রিটিশ হায়ার এডুকেশন সেক্টরে মোট আয় ছিল মাত্র ৫০ বিলিয়ন পাউন্ড। এই আয়ের বেশির ভাগই টিউশন ফি এবং গ্রান্ট থেকে এসেছে। সাধারণত ফরেন স্টুডেন্টরা যুক্তরাজ্যের দেশীয় শিক্ষার্থীদের তুলনায় টিউশন ফি বেশি দেয়। ফরেন স্টুডেন্টদের দেওয়া টিউশন ফি অনেক প্রতিষ্ঠানের আয়ের একটি লাভজনক উৎস হয়ে উঠেছে।

কিন্তু কনজারভেটিভ পার্টির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ফরেন স্টুডেন্টদের ভিসার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেন। নেট মাইগ্রেশনের পরিমাণ রেকর্ড সর্বোচ্চ হওয়ায় ক্র্যাকডাউনের অংশ হিসেবে ফরেন স্টুডেন্টদের সঙ্গে ডিপেন্ডেন্টদের আনা নিষিদ্ধ করা হয়।

সে দেশের সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৪ সালের প্রথম চার মাসে ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় বিদেশ থেকে ৩০ হাজার কম আবেদন এসেছে। আয় কমে যাওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কয়েক মাস ধরেই সতর্ক করে আসছে। এতে অর্থ সংকটের কারণে কোর্স কমিয়ে দেওয়া হতে পারে। ফরেন স্টুডেন্ট কমে যাওয়ায় শিক্ষা ও গবেষণা খাতে প্রায় ৭ বিলিয়ন পাউন্ড ঘাটতি তৈরি হয়েছে। তাই বিশ্বমানের এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ ধরে রাখতে ব্রিটিশ সরকারকে বিনিয়োগ করা এবং বরাদ্দ বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।

যুক্তরাজ্যে পড়তে যেতে ইচ্ছুক মাহফুজুল হক ফাহাদ সিলেটভিউ-কে বলেন- ‘আমার এবং আমার পরিবারের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন হচ্ছে; উচ্চশিক্ষার জন্য আমি যাতে লন্ডনে যাই। এ লক্ষ্যে আইইএলটিএস পাস করে প্রস্তুতি শুরু করেছি। কিন্তু এরই মধ্যে এই টিউশন ফি বৃদ্ধির আলোচনা দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। আমরা যারা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল পরিবারের সন্তান নই, তাদের জন্য এটি দুঃসংবাদ। এত বিশাল অংকের টাকার যোগান দেওয়া আমাদের মতো পরিবারের পক্ষে খুবই কঠিন হয়ে পড়বে।’

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com