নিউইয়র্ক সিটির ব্রুকলিনে চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড রাস্তায় বায়তুল জান্নাহ মসজিদে ঈদ জামাত। নিউইয়র্ক সিটির ব্রুকলিনে চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড রাস্তায় বায়তুল জান্নাহ মসজিদে ঈদ জামাত।বাংলাদেশিসহ বিশ্ব-মানবতার কল্যাণ প্রার্থনা করে নিউ ইয়র্কসহ পুরো যুক্তরাষ্ট্রে ঈদুল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার প্রায় সব খানে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় সবগুলো ঈদ জামাতেই মুসল্লিদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
মুসলিম আমেরিকানদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে কর্মরত ‘কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশনস’ (কেয়ার) এর তথ্য অনুসারে, তিন হাজারের বেশি মসজিদের ব্যবস্থাপনায় ঈদের জামাতে ৩০ লাখের বেশি মানুষ অংশ নিয়েছেন।বেশ কয়েকটি মসজিদের উদ্যোগে পাশের খোলা মাঠ অথবা সড়কে নামাজ আদায় করা হয়।
বাংলাদেশিদের ব্যবস্থাপনায় বড় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় নিউ ইয়র্ক সিটির জ্যামাইকা, ওজোনপার্ক, এস্টেরিয়া, ব্রুকলিন ও ব্রংকসে। এগুলোর অনেক স্থানে বিশেষ নামাজের ব্যবস্থা ছিল নারীদের জন্যও।
নিউ জার্সি, পেনসিলভেনিয়া, ফ্লোরিডা, মিশিগান, লস অ্যাঞ্জেলেস, ভার্জিনিয়া, বস্টন, অ্যারিজোনা, আটলান্টা থেকেও বাংলাদেশিদের বড় ধরনের ঈদ জামাতের সংবাদ এসেছে।
নিউ ইয়র্ক সিটির জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের ব্যবস্থাপনায় এবারও ১০ হাজারের অধিক মানুষের সমাগমে এলাকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
বায়তুল জান্নাহ মসজিদের ব্যবস্থাপনায় ব্রুকলিনে চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড এলাকার রাস্তায় ঈদ জামাতে হাফেজ নাজমুল সাকিব ইমামতি করেন।
চাঁদ রাতে নিউ ইয়র্ক সিটি
ঈদের চাঁদ দেখার আনুষ্ঠানিক সংবাদের পর বৃহস্পতিবার রাতে নিউ ইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে ‘বাংলাদেশ স্ট্রিটে’ নারী-পুরুষের উচ্ছ্বল উপস্থিতি শুরু হয়। স্কুল-কলেজগামী তরুণীরা টেবিল আর টোল নিয়ে রাস্তার ধারে বসে ছিলেন আগতদের মেহেদী দিয়ে রাঙাতে।
হাজার হাজার নারীর অধিকাংশই ছিল তরুণী, যারা গভীর রাত পর্যন্ত হাতে মেহেদীর সাজে সজ্জিত হন। সামান্য পারিশ্রমিকে (যাকে বলা হয় ঈদের বকশিস) তারা রাঙিয়ে দেন অনেককে। বাংলাদেশি তথা দক্ষিণ এশিয়ান অধ্যুষিত ৭৩ ও ৭৪ স্ট্রিট ছাড়াও ৩৭ অ্যাভিনিউ এবং ৩৭ রোডেও ছিল একই দৃশ্য।জ্যামাইকা, ব্রংকস ও ব্রুকলিনেও চাঁদ রাতে মেহেদী রাঙানোর আমেজ তৈরি হয় যাতে সহস্রাধিক নারী-পুরুষের সমাগম ঘটে।
চাঁদ রাতে জ্যাকসন হাইটসে বাংলাদেশ স্ট্রিটে প্রবাসীদের উল্লাস।
পাশাপাশি জ্যাকসন হাইটসে ঈদের আনন্দ বাড়িয়েছে প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীদের অংশগ্রহণে ‘চাঁদ রাত উদযাপন’ অনুষ্ঠান। ইফতারের পর থেকে মধ্যরাত অবধি প্রবাসী শিল্পীদের গানে নেচে-গেয়ে ঈদকে স্বাগত জানান হাজারো মানুষ।
‘জ্যাকসন হাইটস এলাকাবাসী’র ব্যানারে এ আয়োজনের সমন্বয় করেন নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়রের উপদেষ্টা ফাহাদ সোলায়মান ও জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের (জেবিবিএ) নেতা মোহাম্মদ আলম নমী।নাচ আর গানের বিরতিতে ঈদ মোবারক জানাতে মঞ্চে ওঠেন মূলধারার রাজনীতিকসহ কমিউনিটির বিশিষ্টজনরা।
করোনাভাইরাস মহামারী কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার এবারের ঈদ ঘিরে বিশেষ আবহ দেখা গেলেও কেনাকাটায় তেমন গতি ছিল না বলে জানাচ্ছেন দোকানিরা।
বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, দুবাই থেকে কাপড়সহ স্বর্ণাংলংকার আমদানি করেছিলেন অনেক ব্যবসায়ী। কিন্তু বিক্রি হয়েছে খুব কম।
জেবিবিএর সভাপতি মাহাবুবুর রহমান টুকু জানান, “মানুষের মধ্যে আনন্দের ঢেউ পরিলক্ষিত হলেও কেনাকাটায় তা অনুধাবন করতে পারিনি। অর্থনৈতিক সঙ্কটে প্রায় সকলেই। ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে আরেকটি মন্দার। এ জন্যই হয়তো অনেকে ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত পোশাক-আশাক ক্রয় করেননি।
“স্বর্ণ ব্যবসায়ীরাও একই কথা বলেছেন। তবে রমজানের পুরো মাসেই চুটিয়ে ব্যবসা হয়েছে গ্রোসারি আর রেস্টুরেন্টে। মূল্যও হাঁকানো হয়েছে আগের তুলনায় অনেক বেশি।”