1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
যুক্তরাষ্ট্রে বিয়ের মাধ্যমে গ্রিন কার্ডপ্রত্যাশী অভিবাসীরা এখন নির্বাসনের মুখোমুখি
রবিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:৪৩ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :

যুক্তরাষ্ট্রে বিয়ের মাধ্যমে গ্রিন কার্ডপ্রত্যাশী অভিবাসীরা এখন নির্বাসনের মুখোমুখি

  • আপডেট সময় শনিবার, ৯ আগস্ট, ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকের সঙ্গে বিবাহিত অভিবাসীরা ধরে নিয়েছিলেন যে, গ্রিন কার্ড পাওয়ার প্রক্রিয়া চলাকালে তাদের দেশ থেকে বিতাড়নের সম্ভাবনা নেই। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন সম্প্রতি একটি নতুন নির্দেশনা জারি করেছে, যেখানে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে—বিয়ের মাধ্যমে বৈধ আবাসিক মর্যাদা (গ্রিন কার্ড) চাওয়া অভিবাসীদেরও এখন নির্বাসনের মুখোমুখি হতে হতে পারে। এই নীতি মুলত যাদের আবেদন এখনো বিচারাধীন, তাদের ওপরও প্রযোজ্য।

মার্কিন নাগরিকত্ব ও অভিবাসন পরিষেবা (ইউএসসিআইএস) থেকে আগস্ট মাসে জারি করা নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, যেসব অভিবাসীদের বৈধ অবস্থান নেই কিন্তু তারা নাগরিক স্বামীর বা স্ত্রীর মাধ্যমে স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে এখন সরাসরি রিমুভাল প্রসিডিংস বা বিতাড়ন প্রক্রিয়া শুরু করা যেতে পারে।

এই নীতিটি শুধুমাত্র নাগরিক স্বামী বা স্ত্রীর মাধ্যমে নয়, বরং অন্যান্য নাগরিক আত্মীয়ের মাধ্যমে গ্রিন কার্ড চাওয়া আবেদনকারীদের ওপরও প্রযোজ্য।

অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারীরাই শুধু এই ঝুঁকিতে পড়বেন না। নির্দেশনা অনুযায়ী, যদি কারও ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায় বা তারা সেই প্রায় ১০ লাখ অভিবাসীর অন্তর্ভুক্ত হন, যাদের ‘টেম্পোরারি প্রোটেকটেড স্ট্যাটাস’ (টিপিএস) ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে প্রত্যাহার করা হয়েছে, তারাও এই নীতির আওতায় পড়বেন।

নতুন নীতিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে—পরিবারভিত্তিক অভিবাসন আবেদন স্বয়ংক্রিয়ভাবে কোনো অভিবাসন মর্যাদা দেয় না, বরং এটি কাউকে দেশ থেকে বিতাড়নের হাত থেকেও রক্ষা করে না।

ইউএসসিআইএস জানিয়েছে, এই পরিবর্তনের উদ্দেশ্য হলো “সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে সঠিকতা নিশ্চিত করা এবং প্রতারণামূলক, ভিত্তিহীন ও অযোগ্য আবেদন চিহ্নিত করে বাদ দেওয়া।” সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে, “এই নির্দেশনা আমাদের যোগ্য বিবাহ এবং পারিবারিক সম্পর্ক যাচাই করার সক্ষমতা বাড়াবে, যাতে নিশ্চিত করা যায় যে সেগুলো বাস্তব, যাচাইযোগ্য এবং সমস্ত আইন মেনে চলেছে।”

এই পরিবর্তন ১ আগস্ট থেকেই “তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর” হয়েছে।

২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে অভিবাসীরা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা ৫ লক্ষাধিক আই-১৩০ পিটিশন দাখিল করেছেন, যা বৈবাহিক বা পারিবারিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গ্রিন কার্ড পাওয়ার প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ। বর্তমানে ২৪ লাখের বেশি আই-১৩০ আবেদন বিচারাধীন রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ২০ লাখ আবেদন ছয় মাসের বেশি সময় ধরে ঝুলে আছে।

পূর্বে ইউএসসিআইএস আবেদনকারীদের অনুপূর্ণ নথি সম্পর্কে অবহিত করত, বা আবেদন বাতিল করার আগে একটি নোটিশ পাঠাত, যাতে তারা সংশোধনের সুযোগ পেতেন। কিন্তু এখন ইউএসসিআইএস আবেদন সরাসরি খারিজ করে অভিবাসী আদালতে পাঠাতে পারে।

পরিবারভিত্তিক অভিবাসন জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী আবাসিক মর্যাদা পাওয়ার সবচেয়ে বড় ও কার্যকর পথ হিসেবে বিবেচিত হয়। ইউএসসিআইএস তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর নতুন গ্রিন কার্ডধারীদের অর্ধেকই এই পথেই আসেন।

কলাম্বিয়া ল’স্কুলের ইমিগ্র্যান্টস রাইটস ক্লিনিকের পরিচালক এলোরা মুখার্জি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ স্থায়ী মর্যাদা পাওয়ার এটি অন্যতম প্রধান উপায়।” তার মতে, “ইউএসসিআইএস-এর পুরনো নীতিগুলো অনুযায়ী কেউ আশা করত না যে বিবাহের মাধ্যমে বৈধতা পাওয়ার আবেদন করতে গিয়ে হঠাৎ করে অভিবাসী আদালতে যেতে হতে পারে।” কিন্তু এখন নতুন নির্দেশনার অধীনে “প্রক্রিয়ার যেকোনো পর্যায়ে” নির্বাসন শুরু হতে পারে, যা এমনকি নিয়ম মেনে চলা অভিবাসী পরিবারগুলোর মধ্যেও আতঙ্ক তৈরি করতে পারে। গ্রিন কার্ড পাওয়াও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়নের বিরুদ্ধে কোনো চূড়ান্ত সুরক্ষা দেয় না।

সম্প্রতি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলের গ্রেপ্তার এবং বিতাড়নের হুমকি বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে—প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একজন বৈধ স্থায়ী বাসিন্দার বিরুদ্ধে শুধুমাত্র তার সংবিধানসম্মত মতপ্রকাশের কারণে ব্যবস্থা নিয়েছেন কি না।

এর পাশাপাশি, গত মাসে কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন (সিবিপি) সতর্ক করে জানিয়েছে—“যদি কেউ আইন লঙ্ঘন করে বা অপব্যবহার করে, সরকার তাদের গ্রিন কার্ড বাতিল করার অধিকার রাখে।” সংস্থাটি আরও বলেছে, “ইমিগ্রেশন আইনে যারা দণ্ডিত হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় গ্রিন কার্ড দেখিয়েছে, তাদের বাধ্যতামূলক আটক হতে পারে।”

আরেকটি সাম্প্রতিক ইউএসসিআইএস মেমোতে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন এমনকি মার্কিন মাটিতে জন্ম নেওয়া শিশুদের নাগরিকত্বও বাতিল করতে চায়, যদি তাদের বাবা-মার স্থায়ী বৈধ মর্যাদা না থাকে, যদি তারা বৈধ ভিসাধারী, ডিএসিএ প্রাপক বা আশ্রয়প্রার্থী হন।

এই নীতি মূলত প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশের ভিত্তিতে জন্মগত নাগরিকত্ব পুনঃসংজ্ঞায়নের চেষ্টা, যা আদালতের রায়ের আগেই কার্যকর করার প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রশাসন।

যদিও ইউএসসিআইএস- এর প্রধান আইন উপদেষ্টার দপ্তর জানিয়েছে—একাধিক ফেডারেল কোর্ট এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ দিয়েছে, তবুও সংস্থাটি জুলাইয়ের এক মেমোতে বলেছে যে, “যদি আদেশ কার্যকর হওয়ার অনুমতি পায়, আমরা তা বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুত।”

এই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অবৈধ অভিবাসীদের শিশুদের আর জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না। এমনকি যারা বৈধ স্টুডেন্ট, ওয়ার্ক বা ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে থাকেন, তাদের সন্তানদেরও নাগরিকত্বের অধিকার থাকবে না।

ইউএসসিআইএস আরও বলেছে—এমন ১২টিরও বেশি অভিবাসী শ্রেণি রয়েছে, যাদের সন্তানদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হতে পারে, যদিও তাদের পরিবার যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে বসবাস করছে।

এই তালিকায় রয়েছে মানবিক কারণে নির্বাসন থেকে সুরক্ষাপ্রাপ্ত অভিবাসীরা, টিপিএস পাওয়া অভিবাসীরা এবং আরও অনেকে।

যদিও মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী স্পষ্টভাবে বলেছে, “যে কেউ যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ বা নাগরিকত্ব অর্জন করে, এবং এখানকার বিচারব্যবস্থার অধীন, তারা যুক্তরাষ্ট্র ও বসবাসরত রাজ্যের নাগরিক।”

এই সংজ্ঞা শত বছরেরও বেশি সময় ধরে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক সমর্থিত হয়েছে—যে, যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া সব শিশুই নাগরিক।

তবে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী, যদি মা অনিবন্ধিত হন বা অস্থায়ী ভিসায় থাকেন এবং বাবা নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা না হন, তাহলে সন্তান নাগরিকত্ব পাবে না।

আইনি চ্যালেঞ্জে বলা হয়েছে, এই আদেশ কার্যকর হলে প্রতিবছর প্রায় ১.৫ লাখ নবজাতক যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব হারাবে।

এই আদেশকে কেন্দ্র করে ১৪তম সংশোধনী নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যে মামলা হয়েছিল, সেটি এখনো সংবিধানগত প্রশ্নের পুরোপুরি সমাধান করেনি। তবে সরকারের আইনজীবীরা বুধবার জানিয়েছেন, তারা “অতি দ্রুত” সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে ট্রাম্পের জন্মগত নাগরিকত্ব বিষয়ক আদেশের বৈধতা নির্ধারণের অনুরোধ জানাবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com