ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ১ লাখ ৪৬ হাজার ডলার বেহাত হয়ে গেছে। সন্দেহজনক লেনদেন এবং অ্যাকাউন্টটি হঠাৎ বন্ধ করে দেয়ার প্রেক্ষিতে বিষয়টি দূতাবাসের উচ্চ পর্যায়ের নোটিশে আনে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
ওয়াশিংটনে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনকারী রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিনের বিদায় এবং পরবর্তী রাষ্ট্রদূত এম শহিদুল ইসলামের দায়িত্ব গ্রহণের মুহূর্তে (ট্রানজিশন পিরিয়ডে) ওই ঘটনা ঘটে। যা সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার নজরে এসেছে। এ নিয়ে ওয়াশিংটন দূতাবাস এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রীতিমতো তোলপাড় চলছে। অনেকটা গোপনে তদন্ত শুরু হয়েছে। দায়িত্বশীলরা জানার চেষ্টা করছেন- কোন অজুহাতে বিপুল অঙ্কের ওই অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে। এর ব্যয় কীভাবে দেখানো হয়েছে? অর্থ উত্তোলনের প্রক্রিয়া এবং কার কার মধ্যে এটি ভাগবাটোয়ারা হয়েছে সেটিও খোঁজা হচ্ছে।
প্রাপ্ত রেকর্ডপত্রে দেখা যায়, সেভিংস ফর ইমার্জেন্সি বা দুর্যোগ তহবিল হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সিটি ব্যাংকে ওয়াশিংটনের দূতাবাসের পৃথক একটি অ্যাকাউন্ট ছিল। বহু বছর ধরে জমা হওয়া ওই অ্যাকাউন্টে ২০২০ সালে অক্টোবর পর্যন্ত মোট ১ লাখ ৪৬ হাজার ডলার জমা পড়েছিল। সুদ-আসল মিলেই তহবিলটি সমৃদ্ধ হয়েছিল। টাকার হিসেবে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় দেড় কোটি টাকা।
দূতাবাস সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যেকোনো দূতাবাসের আয়-ব্যয়ে একটি অ্যাকাউন্ট থাকে। যাকে মাদার বা মূল অ্যাকাউন্ট বলা হয়। সরকারের অনুমতি নিয়ে বাড়তি অ্যাকাউন্ট খোলা বা বন্ধ করতে হয়। ‘সেভিংস ফর ইমার্জেন্সি’ ছিল ওয়াশিংটন মিশনের স্বতন্ত্র অ্যাকাউন্ট। যার নাম্বার ছিল সিটি বিজনেস আইএমএমএ-১৫২৮৩৩২১। জানা যায়, ২০০৭ সালে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর ইমার্জেন্সি ওই হিসাব খোলা হয়েছিল। শুরুতেই এতে জমা হয়েছিল বেশ অর্থ। কিন্তু অনেকদিন এতে লেনদেন না হওয়ায় অনেকটা ফ্রিজ বা স্থিতাবস্থা ছিল। আকস্মিক এই অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ উত্তোলন এবং অস্বাভাবিক দ্রুততার সঙ্গে ৪টি লেনদেনে অ্যাকাউন্টটি খালি করে ফেলায় সন্দেহ হয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষের। তাৎক্ষণিক তারা বিষয়টি দূতাবাসের নোটিশে আনে। কিন্তু দু’মাসের ব্যবধানে তা পুরোপুরি ক্লোজ করে ফেলা হয়। দূতাবাসের তৎকালীন হেড অব চ্যান্সারি (ডিডিওর বাড়তি দায়িত্ব) ছিলেন ৩০ ব্যাচের কর্মকর্তা মাহমুদুল ইসলাম। তার স্বাক্ষরে ব্যাংকের হিসাবটি ক্লোজ করা হয়। এতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সন্দেহ আরো বাড়ে এবং ব্যাংক ও দূতাবাসের মধ্যে চিঠি চালাচালি চলতে থাকে। যার ফলশ্রুতিতে বিষয়টি স¤প্রতি বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিগোচর হয়।