শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের নানা প্রান্তে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জানাতে।
“৫০৫০১” নামে পরিচিত এই আন্দোলনের অর্থ – ৫০টি প্রতিবাদ, ৫০টি রাজ্যে, একটি আন্দোলন। এটি যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনার ২৫০তম বার্ষিকীর সাথে মিল রেখে আয়োজন করা হয়েছিল।
হোয়াইট হাউসের সামনে, টেসলা শোরুমের বাইরে এবং দেশজুড়ে বিভিন্ন শহরের কেন্দ্রস্থলে আন্দোলনকারীরা তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
অনেকেই কিলমার আব্রেগো গার্সিয়ার ফেরত আনার দাবি জানান, যাকে ভুলবশত এল সালভাদরে নির্বাসিত করা হয়েছিল।
রাজনৈতিক বিক্ষোভ এখন যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমেই সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে – যেমন গত এপ্রিলের শুরুতে অনুষ্ঠিত “হ্যান্ডস অফ” বিক্ষোভেও দেশজুড়ে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিল।
গ্যালাপের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম প্রান্তিকে ৪৫% ভোটার তার কাজের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যা প্রথম মেয়াদের একই সময়ে ছিল ৪১%। তবে এটি এখনো ১৯৫২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে নির্বাচিত সব প্রেসিডেন্টের গড় প্রথম প্রান্তিক সমর্থনের (৬০%) চেয়ে অনেক কম।
শনিবারের বিক্ষোভে ট্রাম্পের একাধিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা হয়, যার মধ্যে অন্যতম “ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি (DOGE)” – একটি কর্মসূচি যার মাধ্যমে সরকারী খরচ কমানো ও কর্মসংস্থান ছাঁটাই করা হচ্ছে। এছাড়া, গার্সিয়ার দেশে ফেরানোর বিষয়ে প্রশাসনের অনীহাও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে গিহাদ এলজেন্ডি জানান, তিনি হোয়াইট হাউসে বিক্ষোভে যোগ দেন কিলমার গার্সিয়ার নির্বাসনের প্রতিবাদ জানাতে। তিনি বলেন, “ট্রাম্প চাইলেই এল সালভাদরের উপর চাপ সৃষ্টি করে তাকে ফিরিয়ে আনতে পারতেন।”
বিক্ষোভগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শান্তিপূর্ণ ছিল। তবে ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি সুহাস সুব্রামনিয়াম “এক্স”-এ একটি ভিডিও পোস্ট করেন, যেখানে এক ট্রাম্প সমর্থককে ব্যানার হাতে ভিড় ঠেলে সামনে এসে তাকে তিরস্কার করতে দেখা যায়।
বিক্ষোভকারীদের অনেকের হাতে ছিল “No Kings” লেখা পোস্টার – যা যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিটিশ রাজশক্তির বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মরণে তৈরি।
ম্যাসাচুসেটসের লেক্সিংটন ও কনকর্ডের যুদ্ধ, এবং পল রিভিয়ারের ঐতিহাসিক ঘোড়সওয়ার অভিযানের বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত উৎসবে একই ধরণের প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে। বোস্টনেও শনিবার “৫০৫০১” আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
থমাস ব্যাসফোর্ড, যিনি তার সঙ্গী, কন্যা ও দুই নাতিকে সঙ্গে নিয়ে বস্টনে অংশ নিয়েছেন, বলেন, “এটি যুক্তরাষ্ট্রে স্বাধীনতার জন্য একটি অত্যন্ত সংকটময় সময়। আমি চাই আমার নাতিরা দেশের ইতিহাস জানুক – কখনো কখনো আমাদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতে হয়।”
ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা হ্রাস পেয়েছে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক ইস্যুতে। গ্যালাপ জরিপ অনুযায়ী, জানুয়ারিতে তার সমর্থন ছিল ৪৭%, যা সাম্প্রতিক রয়টার্স/ইপসস জরিপে নেমে এসেছে ৪৩%-এ।
একই জরিপে দেখা গেছে, অর্থনীতিতে তার পারফরম্যান্সে সন্তুষ্টির হার ৪২% থেকে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩৭%।
এই মাসের শুরুতে, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্প বিরোধী সবচেয়ে বড় আন্দোলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল – যেখানে ৫০টি অঙ্গরাজ্যের ১,২০০ জায়গায় লাখ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছিল। সেই বিক্ষোভগুলো শনিবারের চেয়ে আরও ব্যাপক ছিল।