তবে, অভিবাসন সংস্কার সম্পর্কিত শ্বেতপত্রটি কার্যকর করার আগে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের দুই কক্ষের অনুমোদন প্রয়োজন হবে৷
অভিবাসন সম্পর্কিত শ্বেতপত্রটি মঙ্গলবার (১ জুলাই) পার্লামেন্টে উত্থাপন করা হয়েছে৷ ৮২ পৃষ্ঠার এই শ্বেতপত্রর লক্ষ্য শুধু দেশটিতে অভিবাসীর সংখ্যা কমিয়ে আনা নয়, বরং অভিবাসন ব্যবস্থার অপব্যবহারও বন্ধ করতে চায় সরকার৷
শ্বেতপত্রটির ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার উল্লেখ করেছেন, ‘‘এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভিসা আবেদন প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গেছে৷’’
তিনি আরো বলেছেন, ‘‘কিন্তু এখন আরো দ্রুত এবং আরো এগিয়ে যাওয়ার সময়৷ ব্রিটিশ জনগণকে আশ্বস্ত করে বলতে চাই, পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ৷’’
যুক্তরাজ্যের অভিবাসন ব্যবস্থাপনা ‘পুনঃস্থাপন’
অভিবাসন সম্পর্কিত এই সংস্কার বাস্তবায়নে প্রথমে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমনস-এর অনুমোদন লাগবে৷ সরকার চলতি জুলাইয়ের শেষ দিকে এটি কার্যকর করতে চায়৷ সেক্ষেত্রে তার আগেই পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডস-এর যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হতে হবে৷ আশা করা হচ্ছে, আগামী ২২ জুলাই এই সংস্কারটি পাসে পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হতে পারে৷
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার বলেছেন, ‘‘এই নতুন নিয়মগুলোর অর্থ হলো অভিবাসন কমাতে, অভিবাসন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং যুক্তরাজ্যে দক্ষতা ও প্রশিক্ষণে বিনিয়োগের উপর আমাদের মনোনিবেশ নিশ্চিত করতে এটি আরো শক্তিশালী পদক্ষেপ৷’’
তিনি আরো বলেন, সরকার ‘‘সঠিক নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আমাদের অভিবাসন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ঢেলে সাজাচ্ছে৷’’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করে, এই সংস্কারগুলোর মধ্য দিয়ে প্রতি বছর যুক্তরাজ্যে আসা মানুষের সংখ্যা এক লাখ পর্যন্ত কমে আসবে৷
দক্ষ কর্ম ভিসা প্রকল্প থেকে বাদ পড়ছে ১১১টি পেশা
অভিবাসন সম্পর্কিত শ্বেতপত্রে তুলে ধরা পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে, যুক্তরাজ্যে আসতে ইচ্ছুক দক্ষ কর্মীদের আয় এবং দক্ষতার সীমাকে ঊর্ধ্বমুখী করা৷
অনেক ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মীদের তাদের দক্ষতা এবং যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়৷ ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে৷ তবে, দক্ষতার স্তরকে বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রির সমমান বা তার উপরে হতে হবে৷
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, এসব কারণে ১১১টি পেশায় ওয়ার্ক ভিসার সুযোগ কমে আসবে৷
এছাড়া, শ্বেতপত্রে ইংরেজি ভাষার দক্ষতাকে কমন ইউরোপিয়ান ফ্রেমওয়ার্কস ফর রেফারেন্স ফর ল্যাঙ্গুয়েজ (সিইএফআর) অনুযায়ী বি-ওয়ান থেকে বি-টু পর্যায়ে উন্নীত করার পরিকল্পনাও করা হচ্ছে৷ এমনকি, ওয়ার্ক ভিসা পাওয়ার আবেদন খরচও বাড়ানো হচ্ছে৷
হুমকির মুখে সামাজিক পরিচর্যা খাত
এসব পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবে সামাজিক পরিচর্যা খাত৷ যুক্তরাজ্যে এই খাতটি অনেকাংশে বিদেশি কর্মীদের উপর নির্ভরশীল৷
এই খাতে ভিসা বাতিলের পদক্ষেপ উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে৷ যুক্তরাজ্যের বৃহত্তম ট্রেড ইউনিয়নগুলোর মধ্যে অন্যতম জেনারেল, মিউনিসিপ্যাল অ্যান্ড বয়লারমেকার্স ইউনিয়ন বা জিএমবির কর্মকর্তা উইল ডাল্টন বলেছেন, এই পদক্ষেপ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে৷
তিনি উল্লেখ করেন, যত্ন খাতটি ‘সম্পূর্ণভাবে অভিবাসী কর্মীদের উপর নির্ভরশীল’ এবং এখনও যুক্তরাজ্যে এক লাখ ৩০ হাজারের বেশি শূন্যপদ রয়েছে৷
সরকার অবশ্য ভিন্ন যুক্তি দিয়েছে৷ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বলা হয়েছে ‘ব্যাপক নির্যাতন এবং শোষণ’-এর কারণে সামাজিক পরিচর্যা কর্মীর ভিসা প্রোগ্রামটি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে৷
এতে আরো বলা হয়েছে, ‘‘সরকার অভিবাসনকে আরো সীমাবদ্ধ করতে দ্বিধা করবে না, যদি কোনো খাতে নির্যাতন এবং শোষণের প্রমাণ পাওয়া যায়৷’’
নিম্ন দক্ষতার কাজের সুযোগ
শ্বেতপত্রের সুপারিশে বলা হয়েছে, যেসব খাতে কর্মী সংকট রয়েছে সেসব খাত নিয়ে ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা পেশ করা হবে৷ তখন বিশ্বিবিদ্যালয় মানের ডিগ্রি নেই এমন বিদেশি কর্মীরাও আবেদন করতে পারবেন৷ তবে, কম দক্ষতার কর্মীরা তাদের পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাজ্যে আনতে পারবেন না৷
২০২০ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে যুক্তরাজ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মীর বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে৷
ইংলিশ চ্যানেলে থামছে না নৌকা
সরকার যখন সংস্কারের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে তখন ফরাসি উপকূল থেকে ব্রিটিশ উপকূলে আসা অনিয়মিত অভিবাসীর সংখ্যা নতুন রেকর্ড ছুঁয়েছে
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ফ্রান্স থেকে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে অন্তত ২০ হাজার অভিবাসী যুক্তরাজ্যে এসেছেন৷
সংখ্যাটি ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি এবং ২০২৩ সালের তুলনায় ৭৫ শতাংশ বেশি৷