বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বহরে আজ যুক্ত হতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির উড়োজাহাজ বোয়িং ড্রিমলাইনার ৭৮৭। মার্কিন কোম্পানি বোয়িংয়ের তৈরি এই উড়োজাহাজের প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইট শুরু হবে ১ সেপ্টেম্বর থেকে। নতুন এ উড়োজাহাজের নাম দেয়া হয়েছে আকাশবীণা।
বিমান কর্তৃপক্ষ বলছে, নতুন এ উড়োজাহাজ তাদের যাত্রীসেবার মানকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। এ উড়োজাহাজ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে সরাসরি ফ্লাইট চালুর পথ সুগম হবে। আকাশবীণা ছাড়াও এক বছরের মধ্যে আরও তিনটি বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমানের বহরে যোগ হবে। এগুলোর নামকরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাকি তিনটি ড্রিমলাইনারের নাম হলো হংসবলাকা, গাঙচিল ও রাজহংস। এর মধ্যে হংসবলাকা বিমানবহরে যোগ দেবে আগামী নভেম্বরে। আর গাঙচিল ও রাজহংস ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিমানের বহরে যুক্ত হবে। কিন্তু কী কী সুবিধা থাকবে আধুনিক এই বিমানে?
ড্রিমলাইনার ৭৮৭ হলো বোয়িংয়ের চতুর্থ প্রজন্মের যাত্রীবাহী বিমান। এটি বেশ হালকা ও ৭৬৭ মডেল উড়োজাহাজের চেয়ে ২০ শতাংশ জ্বালানিসাশ্রয়ী। যাত্রীদের জন্য এ উড়োজাহাজে আছে ওয়াইফাই ইন্টারনেট সংযোগ, টিভি দেখা ও টেলিফোনে কথা বলার মতো সুবিধা।
বিমানের ড্রিমলাইনার ৭৮৭ উড়োজাহাজে মোট ২৭১টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে ২৪টি বিজনেস ক্লাস ও ২৪৭টি ইকোনমি ক্লাসের। এসব আসন ১৮০ ডিগ্রি বাঁকিয়ে বিছানার মতো করা যাবে। একটি আসন থেকে আরেকটি পুরোপুরি আলাদা থাকবে।
বোয়িং থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সাল থেকে ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজের ব্যবহার শুরু হয়। এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে ৭৮টি প্রতিষ্ঠানের কাছে মোট ১ হাজার ৩৭৭টি ড্রিমলাইনার বিক্রি করা হয়েছে। আরও ৬৫০টির ক্রয় আদেশ রয়েছে।
বিমান কর্তৃপক্ষের দাবি, ড্রিমলাইনারে চড়ে যাত্রীরা সহজে ক্লান্ত হবেন না। কারণ, এ উড়োজাহাজে রয়েছে তুলনামূলক বড় জানালা, প্রশস্ত কেবিন, মুড লাইট ইত্যাদি সুবিধা। ৭৮৭ উড়োজাহাজে আছে চার প্যানেলবিশিষ্ট উইন্ডশিল্ড, শব্দরোধী শেভরন ইত্যাদি। এতে উড়োজাহাজের ভেতরে শব্দ আসে খুব কম। ইন্টারনেট ও ফোন করার সুবিধা
ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজে যাত্রীরা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৩ হাজার ফুট উচ্চতায় ফ্লাইটে ওয়াইফাই ইন্টারনেট ব্যবহার ও ফোনকল করার মতো সুবিধা পাবেন। ওয়াইফাই ইন্টারনেট হবে থ্রিজি গতিসম্পন্ন। বিমান বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যাত্রীদের বিনা মূল্যে ২০ মেগাবাইট ইন্টারনেট ডেটাও দেওয়া হবে।
বিবিসি, সিএনএনসহ ৯টি টেলিভিশন চ্যানেল সরাসরি দেখা যাবে এ উড়োজাহাজে। যাত্রীদের ইন্টারনেট সুবিধা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) অনুমোদন নেয়া হয়েছে।
এ উড়োজাহাজে আরও থাকছে বিশ্বমানের ইন-ফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেম (আইএফই)। এর মাধ্যমে ক্ল্যাসিক থেকে ব্লকবাস্টার হিট চলচ্চিত্র, বিভিন্ন ঘরানার সংগীত, ভিডিও গেম, অনলাইন কেনাকাটার সুবিধা, ক্রেডিট কার্ডে মূল্য পরিশোধ, ডিউটি ফ্রি শপসহ বিনোদনের নানা আয়োজন।
এটি যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিমান বহরে বিমানের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ১৫টিতে। দেশে পৌঁছানোর পর ড্রিমলাইনারকে ওয়াটার ক্যানন স্যালুটের মাধ্যমে স্বাগত জানানো হবে।
বিমানটি দেশে আনতে গত বুধবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালনা পর্যদের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) ইনামুল বারীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সিয়াটলে বোয়িং কোম্পানির এভারেট ডেলিভারি ও অপারেশন্স সেন্টারে যান।