যখন কোথাও ঘুরতে যাই, কোন প্রস্তুতি থাকে না বললেই চলে। এলোমেলো উদ্দেশ্যহীন বেড়ানোতে যেই আনন্দ … তা আর পাই না কোথাও। কিন্তু এবারের ভ্রমণ খুবই পরিকল্পিত … বিশাল এক টিম, একচুলও এদিক-ওদিক হবার সুযোগ নেই। যাত্রা শুরুর দুই দিন আগেই পুরো প্রোগ্রামের সিডিউল হাতে ধরিয়ে দেয়া হল। ভবঘুরে হবার সুযোগ নাই।
ভ্রমণ প্রথমে তোমাকে নির্বাক করে দেবে তারপর তোমাকে গল্প বলতে বাধ্য করবে … ইবনে বতুতার কথা। তবে আমার কখনই এমনটা হয় না। কোথাও থেকে ঘুরে আসার পর বেশিরভাগ সময়ই সামনে যাকেই পাই বক বক করে সব শোনাতে ইচ্ছে করে। মনে হয় … সামনে যে জন … আমার এই গল্পটা না শুনলে তার জীবন বৃথা। আমি গায়ে পরে তার উপকার করছি। লিখে লিখে সময় নষ্ট করার সময় কই। যতক্ষনে লিখে ফেলবো ততক্ষনে আরও দু’চার পাঁচজন কে শুনিয়ে দিতে পারলে জাতি বেঁচে যায়।
এ দেশে নাকি প্রথম এসেছিল ফরাসিরা। তাদের উদ্দেশ্য করে আদিবাসীরা আঞ্চলিক ভাষায় বলত ‘আমাদের গ্রামে এসো’ … অর্থাৎ ‘কানাডা’, সেখান থেকেই এ দেশের নাম কানাডা। কানাডিয়ানদের এই অভ্যর্থনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি অনাগত কাল থেকে তাদের সংস্কৃতিরই একটা অংশ।
কানাডা … উত্তর আমেরিকার উত্তরাঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকা জুড়ে থাকা এক দেশ। আয়তনের দিক থেকে এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। তবে জনসংখ্যায় এর অবস্থান ৩৮তম। দেশটির বিভিন্ন শহরে প্রতি বছর হাজার হাজার দর্শনার্থী বেড়াতে আসেন।
আমারা যখন গেলাম তখন ছিল গ্রীষ্মকাল। যদিও সন্ধ্যা আর রাতে মাঝে মধ্যে কিছুটা ঠান্ডা পড়ে। তবু সারা দিনের আবহাওয়া বেশ নাতিশীতোষ্ণ। সবাই বলছিল এবার নাকি বেশ গরম পড়েছে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর প্রভাব। আমাদের কাছে এ আর এমন কি ?
কানাডার দক্ষিণ-পূর্ব অংশে অবস্থিত অন্টারিও প্রদেশের রাজধানী শহর ‘টরন্টো’। অর্থনৈতিক ভাবে কানাডার সবচেয়ে সমৃদ্ধ প্রদেশ অন্টারিও-র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর বলে এটি দেশটির অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক প্রাণকেন্দ্র। নিরাপত্তা, জীবনযাত্রার ব্যয়, বসবাসযোগ্যতা, ইত্যাদি বিবেচনায় বিশ্বের সেরা শহর টরন্টো। টরন্টো শহরটি অন্টারিও হ্রদের উত্তর-পশ্চিম তীরে অবস্থিত। শহরেও সবুজ উদ্যানের অভাব নেই। বেশিরভাগ বাড়ির সামনে ম্যাপল গাছ চোখে পড়ে। আগেই জেনেছি এই ম্যাপলের পাতা কানাডার প্রতীক। জাতীয় পতাকা থেকে শুরু করে প্রায় সব জায়গায় লাল ম্যাপল পাতার ছবি।
কানাডার কথা আসলেই প্রথমে আসবে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা। কিন্তু এখানে আসার আগে আমার কানাডা সম্পর্কে ভুল ধারনাই ছিল। শুধুই বরফ, তুষারপাত আর ঠান্ডায় জর্জড়িত জীবন। আর জানা ছিল একটা গল্প। আড্ডায় প্রায়শই বলতাম। আজকে আবার বলি। ভিজিলেন্স টিম এসেছে স্কুল পরিদর্শন করতে। এক ক্লাশে এসে জিজ্ঞেস করলেন আচ্ছা বল তো … কানাডা কোথায় ? কেউ কিছু বলছে না দেখে ছাত্রদের মধ্যে একজন আড়াল থেকে বলল … স্যার, কানা’ডা চোহে কম দেহে। হের লাইগা হেড স্যারে ওরে লাস্ট বেঞ্চে বসাইয়া কতা কইতে না করছে।
আমার অবস্থাও সেই আড়াল থেকে বলা ছেলেটার মতো। তার মনে ছিল সরল স্বীকারক্তি, কুটিলতা বিবর্জিত অভিব্যক্তি … এখানে আমিও তাই। দারুণ সব লোকজন, স্বর্গীয় ল্যান্ডসক্যাপ, উয়াল্ড-লাইফ … … সবকিছুর পর … Nation of immigrants। বহু ধর্ম-বর্ণের মানুষ মিলেমিশে পাশাপাশি বাস করছে। আর নতুনদের ব্যাপারে কানাডিয়ানদের দৃষ্টিভঙ্গি ভীষণ রকমের সহযোগিতামূলক। এই শহরে নাকি ১৪০টি ভাষার প্রচলন আছে। এইসব কারণ ছাড়াও বিশাল এই দেশে জন ঘনত্ব কম হওয়ায় ভ্রমণ এবং রোড ট্রিপের জন্য এটা সারা পৃথিবীর ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য এক আদর্শ জায়গা।
লেক অন্টারিও এর বিকেল
আমরা আসার পর প্রথমেই গেলাম লেক অন্টারিও দেখতে। প্রকৃতির অপরূপ রূপের এক অনন্য নিদর্শন লেক বা হ্রদ। লেকের স্বর্গরাজ্য কানাডার লেকগুলোর রয়েছে অন্যরকম এক আবেদন। বিশেষ করে পশ্চিম কানাডার রাজ্য ব্রিটিশ কলাম্বিয়া এবং আলবার্টার লেকগুলোর সৌন্দর্য নাকি চোখ ধাঁধিয়ে দেয় … তথ্যগুলো জানালেন শরিফ ভাই। কানাডা প্রবাসী শরিফ ভাই টরেন্টোতে অবস্থানকালীন আমাদের সর্বক্ষণ দেখভাল করেছেন।
কানাডার বেশিরভাগ হ্রদই পাহাড়ী হলেও অন্টারিও প্রদেশে অবস্থিত লেক অন্টারিও বেশি বড় নয়। তবে সৌন্দর্য আর ভৌগলিক অবস্থানের গুরুত্বের দিক দিয়ে ঠিকই বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছে এটি। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত নায়াগ্রা ফলসের নিচে অবস্থিত এই লেকটি প্রথমে সেইন্ট লরেন্স নদীতে মিলিত হয়েছে। তারপর পড়েছে আটলান্টিক মহাসাগরে। লেকের তীরে স্বগর্বে দাঁড়িয়ে আছে বাতিঘর। লেকের পাড়ে কানাডার বিখ্যাত শহর টরেন্টো অবস্থিত। লেক অন্টারিও থেকে একইসাথে শহুরে এবং প্রাকৃতিক দৃশ্যের দেখা মেলে। সারাটা বিকেল কাটলো লেকের পাড়ে ঘুরাঘুরি করে। যে যার মতো ছবি তুললো। ফুরফুরে বাতাস, সোনালী রোদ আর নীল জলে মন ভরে গেল।
নায়াগ্রা দেখা হলো
কানাডা ভ্রমণ করবেন অথচ নায়াগ্রা জলপ্রপাত দেখবেন না এমন একজন পর্যটকও খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমরাও যাবো। কতদিন কতজনার মুখে নায়াগ্রার গল্প শুনেছি। বিশ্বের সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত এই নায়াগ্রা। দেখার ইচ্ছে আজীবনের। বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২০ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত প্রকৃতির এক বিস্ময়কর দৃশ্য স্বচক্ষে দেখতে পাব। আহা!
৩ জুলাই রাতে টরেন্টো থেকে নায়াগ্রার উদ্দেশে যাত্রা করলাম। টরেন্টো থেকে নায়াগ্রার দূরত্ব প্রায় ১৫০ কিলোমিটার। এই জলপ্রপাত আমেরিকা এবং কানাডা দুই দেশজুড়েই বিস্তৃত। দুই দেশ থেকেই পর্যটকরা নায়াগ্রা দর্শন করলেও মূলত কানাডা থেকেই বেশি দর্শক নায়াগ্রার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে। এক পাড়ে আমেরিকা অন্য পাড়ে কানাডা। নায়াগ্রা জলপ্রপাতের পানির প্রবাহে দুই পাহাড়ের মাঝখানে বিশাল খরস্রোতা নদীর সৃষ্টি হয়েছে। সেখান থেকে ২৫০/২৭৫ ফিট নিচে সশব্দে পড়ছে। ফলে বাষ্পের মেঘ উড়ছে অনেক উপর পর্যন্ত। জোড়া রংধনু অপরূপ দৃশ্যের অবতারণা করে আছে।
সেই খরস্রোতা নদীতে স্টীমারে করে পর্যটকরা রেইনকোট গায়ে প্রপাত থেকে ২৫/৩০ মিটারের কাছাকাছি ঘুরে আসছে। আমরাও সেই লঞ্চে ঘুরেছি। একটু দূরে বাফেলো ব্রিজ। ওপাড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাফেলো শহর। একই সাথে দুই দেশের লঞ্চ চলাচল করছে। উভয় লঞ্চেই দুই দেশের পতাকা উড়ছে।
কানাডার দিকটায় জলপ্রপাতের ধারেই অনেকগুলো পার্ক। গাছ গাছালির আধিক্য নেই। তবে বাগান আর ফুলের আধিক্য। এলোমেলো ঘুরে বেড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত জায়গা আছে। বিকেলের পুরোটা আমাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। যে যেমন পারে ঘুরে বেড়াক। আমি আর কোথায় যাই। এই স্বর্গীয় দৃশ্য ফেলে কোথাই যাই।
How can I love when I’m afraid to fall ?
But watching you stand alone,
All of my doubt suddenly goes away somehow.
কতবার যে গানটা শুনলাম একা একা পার্কের এক কোনায়। কেউ কি খেয়াল করলো। হাজার হাজার দর্শনার্থীর ভীড়ে কোন একজনের ভাবনাগুলো কাউকেই ছুঁয়ে যাবে না। প্রকৃতিও আজ থমকে দাঁড়াবে না। নায়াগ্রার হাজার হাজার মেট্রিকটন জলরাশি প্রতি মূহুর্তে আছড়ে নিচে পড়ছে, এতোটুকু তার কোন ক্লান্তি নেই, নেই এতোটুকু আক্ষেপ, নেই কোন হতাশা, নেই কোন গ্লানি। ক্রমাগত আছড়ে নিচে পড়ে যাওয়াই তার স্বার্থকতা, সফলতা। শুধু আমরাই পড়ে যাওয়ার ভয় পাই, একবার আছড়ে পড়ে গেলে আর যদি উঠতে না পারি।
থাউজেন্ড আইল্যান্ডে
আচ্ছা, থাউজেন্ড আইল্যান্ডে আসলে কতগুলো দ্বীপ আছে ?
আমাদের জানানো হলো কানাডার অন্টারিও এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক স্টেটের সীমান্তঘেষে সেন্ট লরেন্স নদীর উপর প্রায় ১৮০০ এর উপর ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে এই থাউজেন্ড আইল্যান্ড। বহমান এই প্রশস্থ নদীর তীর ঘেষে, কোথাও কোথাও নদীর মাঝখানে সবুজ গাছগাছালিতে বেষ্টিত এই দ্বীপগুলো হয়ে উঠেছে পর্যটন আর অবকাশ যাপনের এক আকর্ষণীয় স্থান।
থাউজেন্ড আইল্যান্ডে চমৎকার ক্রুজ আছে। ক্রুজে যেতে হলে গ্যানানক অথবা কিঙস্টনের যেতে হবে, সেখান থেকেই জাহাজে চড়ে বসতে হবে। গ্যাননাকের ক্রুজটা পাঁচ ঘন্টার, মাঝে দুই ঘন্টা … একটা দ্বীপে নামিয়ে দেয়। সেটি আবার পড়েছে আমেরিকান সীমানায়। যাদের সাথে আমেরিকান পাসপোর্ট না থাকে তাদের জাহাজেই বসে থাকতে হয়। কিঙস্টনের ক্রুজটা তিন ঘন্টার। কোনো দ্বীপে নামার ব্যাপার নাই। আমরা কিঙস্টন থেকেই ক্রুজে চড়বো।
কিংস্টন থেকে জাহাজটায় চড়ে একেবারে ছাদে উঠেই সবাই ছবি তুলতে শুরু করলাম। কারও যেনো তর সইছিল না। সেন্ট লরেন্সের বুক চিড়ে দুই পাশে চোখ ধাঁধানো সবুজের হাতছানি উপেক্ষা করেই যেনো চলতে থাকে জাহাজটা। সাউন্ড সিস্টেমে অনবরত ভেসে আসতে থাকে প্রতিটি আইল্যান্ডের বর্ননা আর তার সাথে জড়িয়ে থাকা ইতিহাসের বিবরন। সবারই উৎসুক দৃষ্টি যেনো পানি আর সবুজের অপূর্ব এক জলরাশির দিকে। জাহাজটার ডেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সীমাহীন দিগন্তে হারিয়ে যেতে চায় মন।
দূরে কাছে অনেক ছোট ছোট আইল্যান্ড দেখা যাচ্ছিল। কোথাও নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে এক চিলতে ঘর। আবার কতগুলো যেন ছোট ছোট গ্রাম। আইল্যান্ড বা দ্বীপ হলেও এগুলো আমাদের দেশের মতো সাধারণ দ্বীপ নয়। এখানে ভাঙ্গা-গড়ার কোন বালাই নেই। দ্বীপগুলোর মালিক সব বিশাল বিশাল ধনীরা। প্রাসাদ তৈরি করেছেন অবকাশ যাপনের উদ্দেশ্যে। কোনটির নাম Deer আইল্যান্ড, হার্ট আইল্যান্ড, Ironsides আইল্যান্ড, ইত্যাদি। “Just Room Enough” আইল্যান্ডটি আমেরিকার অন্তর্গত বসবাসযোগ্য সবচেয়ে ছোট দ্বীপ। আবার, জাভিকন দ্বীপটিতে ৩২ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি সেতু আছে যা বিশ্বের সবচেয়ে ছোট আন্তর্জাতিক সেতু হিসাবে বিবেচিত হয়। এটি সেন্ট লরেন্স নদীর মধ্যবর্তী একটি আমেরিকান দ্বীপের সাথে একটি কানাডিয়ান দ্বীপকে সংযুক্ত করেছে।
চারপাশে সবুজ ঘাস, গাছ-গাছালি ঘেরা শান্ত পরিবেশ। মাথার ওপরে গাঢ় নীল আর আর নিচের নীল জল মিলে এক অপার্থিব পরিবেশ তৈরী হয়েছে। আকাশে অচিন পাখি ডানা ঝাপটায়। সেই বিকেলটা আমার দেখা অন্য সব বিকেলের চেয়ে ভিন্ন। শান্ত জলের বুক চিরে লঞ্চ এগিয়ে চলছে। পাখিগুলো উড়ে উড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে আর লুটোপুটি খাচ্ছে জলের সঙ্গে।
টরেন্টোর বন্ধুরা
পুরানো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলো বহুকাল পর …… রিয়াদ, রুমী, মাসুম, শরীফ, মহিউদ্দিন এবং সহকর্মী আফরোজ কে কাছে পেলাম। একেবারেই খাঁটি বাঙ্গালী রেষ্টুরেন্ট Cafe D Taj এ সন্ধ্যা থেকে আড্ডা জমলো। বন্ধুরা কয়েকজন মিলে রেষ্টুরেন্টটি চালাচ্ছে। সবাইকে দেখে এতো ভাল লাগলো। টরন্টোতে ওরা ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন পুরনো বন্ধু থাকে। প্রায় ৭/৮ বছর বা তারও বেশি পরে তাদের সাথে দেখা হলো। যেনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই দিনগুলোতেই ফিরে গেলাম। ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে সাংস্কৃতিক অভিঘাতের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে সবাই এখন অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্য জীবন যাপন করছে। মাসুম ও মহিউদ্দিন তো এখন পুরোদস্তুর সফল ব্যবসায়ী। তাদের আন্তরিক ভালবাসায় সিক্ত হয়েছি সুদূর এই প্রবাসে এসে। এটি আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। এখনও মিস করছি এই অধ্যায়টুকু। স্বুস্বাদু দেশী খাবারের জন্য মাছুমকে আলাদা করে ধন্যবাদ দেয়া উচিত। সব ওর পছন্দের মেনু। রিয়াদকে ধন্যবাদ পুরো আয়োজন করার জন্য। আর রুমীকে ধন্যবাদ প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত থেকে তারপর লিফট দেয়ার জন্য।
কিছু জ্ঞানার্জন হয়ে যাক
এসে কি শুধু ঘোরাঘুরিই হবে, কিছু পড়ালেখা হবে না তা কি হয়। এবার কিছু কাজকর্মে মনযোগ দেয়া যাক। কানাডার পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিষয়ে ধারনা নেয়ার জন্য আমরা দুইটি অফিসে ভিজিট করি … প্রথমটি একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পরেরটি সরকারি অফিস … “Ryerson University” এবং “The Office of Small and Medium Enterprises (OSME)”।
Ryerson University
একদিন সকালে পুরো টিম সহ আমরা গেলাম Ryerson University ক্যাম্পাসে। Ryerson University টরন্টোর ব্যস্ততম অঞ্চল ডাউন টাউনে অবস্থিত কানাডার একটি নামকরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। ক্যাম্পাসের ঝকঝকে পরিবেশ দেখে খুব লোভ হলো। ইশশশ … একবার যদি … … তাহলে আমিও … …। থাক আর না বলি।
১৮৫২ সালে প্রতিষ্ঠা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০০১ সালে Ryerson University নাম ধারন করে। এখানে প্রায় ৪০ হাজারে মতো স্নাতক, আড়াই হাজার স্নাতকোত্তর ছাত্র অধ্যয়ন করছে। এটা কানাডার অন্যতম বৃহত্তম একটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। আলোচনায় জানা গেল অনেক বাংলাদেশি ছাত্র ছাত্রীও এখানে পড়াশোনা করছে। আমাদের এপোয়েনমেন্ট ছিল Ted Rogers School of Management ডিপার্টমেন্টে।
এই স্কুলে মূলত ব্যবসা প্রশাসন বিষয় পড়ানো হয়। কিন্তু এখানে ভবিষ্যত ব্যবসার বিভিন্ন ধারনা নিয়েও গবেষণা চলে নিরন্তন। আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালের এই ডিপার্টমেন্টে আসার উদ্দ্যেশ্য ছিল ইলেকট্রনিক প্রকিউরমেন্টের বিভিন্ন সুবিধা অসুবিধা জানার পাশাপাশি উন্নত দেশগুলোতে তাদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে প্রকিউরমেন্ট সিস্টেমের ভবিষ্যত নিয়ে তথ্য সংগ্রহ ও আলোচনা করা।
অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আলোচনা হল। তবে সবচেয়ে যা নজর কাড়লো তা হলে আরটিফেশিয়াল ইন্টিলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। প্রকিউরমেন্ট সিস্টেমের ধারনা পুরোপরি বদলে দিবে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। ২১ শতকের ব্যবসা-বানিজ্য বা সরকারি ক্রয় কার্যক্রমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিটি কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের অপারেশনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠবে।
এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে কি করা যাবে সে আলোচনায় না গিয়ে বরং আলোচনা করা যায় কি করা যাবে না। সরকারি ক্রয়ের সব বিষয় এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় করা সম্ভব হবে বলে আমাদেরকে জানানো হল। এছাড়াও Strategic sourcing, সাপ্লাই-চেইন ম্যানেজমেন্ট, স্বয়ংক্রিয় দূর্ণীতির প্রতিরোধ ব্যবস্থা, ইত্যাদিও এর মাধ্যমে সহজেই করা যাবে। সরকারি ক্রয় কার্যক্রমে এক নতুন দ্বার উন্মোচন হবে।
এসব শুনতে শুনতে মনে মনে হাহাকার উঠে … আহা … ভবিষ্যতের প্রজন্ম না জানি কত সূখে টেন্ডার কার্যক্রম পরিচালনা করবে। তাদের আসলে কিছুই করতে হবে না। সব মেশিনই করে দিবে। আর আমরা এখন সারাদিন কম্পিউটারের সামনে মাউস আর কি-বোর্ড নিয়ে যুদ্ধ করতে করতে শেষ। এই সব ভাবতে ভাবতে মন হারিয়ে যায় অজানায়। কিন্তু সহকর্মীদের ডাকে বাস্তবে ফিরে এলাম। তাড়াতাড়ি বের হতে হবে।
পরের দিন আমাদের যেতে হবে কানাডার একটি সরকারি দপ্তরে যারা হাতে কলমে সরকারি ক্রয় নিয়ে কাজ করছে। উল্লসিত …
The Office of Small and Medium Enterprises
পরেরদিন বিকেলে গেলাম “The Office of Small and Medium Enterprises (OSME)” অফিস কিভাবে কাজ করে তা জানতে। কানাডায় ফেডারেল পর্যায়ের সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে Public Services and Procurement Canada (PSPC) এর অধীনে OSME এর কার্যক্রম। PSPC এর পূর্বের নাম ছিল Public Works and Government Services Canada (PWGSC)। ২০১৫ সালে এই নাম বদলে ফেলা হয়।
এখানেই বড় চমক অপেক্ষা করছিল তা কিছুক্ষন পরেই টের পেলাম। OSME অফিসের মূল প্রেজেন্টেশনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এক বাংলাদেশি ভদ্রলোককে। তিনি জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক। একেবারেই ছোটবেলায় বাবা-মার সাথে সেই চট্রগাম থেকে গিয়ে কানাডাতে নিবাস গেড়েছেন। তিনি এই অফিসের প্রকিউমেন্ট অফিসার। কর্তৃপক্ষ সেই সুবাদে তাকেই সামনে নিয়ে এসেছে। তিনি থাকায় আমাদের অসম্ভব কাজে লাগলো। খুঁটি-নাটি বিষয়গুলো সহজে বোঝা গেল।
Public Services and Procurement Canada (PSPC)
কানাডার সরকারের ফেডারেল বিভাগ এবং এজেন্সিগুলির জন্য এই অফিস কেন্দ্রীয় সংস্থা হিসেবে কাজ করে। আমাদের দেশের মন্ত্রণালয়ের মতো। এটি তাদের মূল ক্রয় কর্তৃপক্ষ, রিয়েল এস্টেট ম্যানেজার, একাউন্স, ইন্টিগ্রেটি সার্ভিস, বেতন ও পেনশন প্রশাসক, ইত্যাদি হিসেবে কাজ করে।
এই অফিস সরকারি ক্রয় নীতি, best practices, ক্রয় চুক্তির সম্ভবনা, ইত্যাদি সামনে নিয়ে আসে, ক্রয় প্রক্রিয়ার সমস্যা হ্রাসে সাহায্য করে, ক্রয়চুক্তি প্রক্রিয়া সহজতর করা সহ বিভিন্ন সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত সার্বিক বিষয় নিয়ে কাজ করে। ২০০৬ সালে সরকার ‘ফেডারেল একাউন্টিবিলিটি অ্যাক্ট’ অ্যাকশন প্ল্যানের মাধ্যমে Public Services and Procurement Canada কার্যক্রম আরও বৃদ্ধি করেছে এবং বর্তমানে সারা দেশে এর ছয়টি শাখা অফিস প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। এই দপ্তর ২০০৬ এর পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন আউটরিচ সেমিনার, ট্রেড শো, মিটিং, ইত্যাদির মাধ্যমে প্রায় ৫৩,০০০ এরও বেশি ব্যক্তি এবং সরবরাহকারীকে সহায়তা করেছে।
The Office of Small and Medium Enterprises (OSME)
পাবলিক সার্ভিসেস এবং প্রকিউরমেন্ট কানাডা ফেডারেল ক্রয় কার্যক্রমের ক্ষেত্রে এসএমই (SMEs) দের অংশগ্রহণের বাধা দূর করা নিয়েও কাজ করে। এর অংশ হিসেবে Public Services and Procurement Canada এর আওতায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগক্তা (এসএমই) দের সহযোগিতা করার জন্য ২০০৫ সালে The Office of Small and Medium Enterprises (OSME) গঠন করা হয়। OSME শুধুমাত্র সরকারের সঙ্গে ব্যবসা করতে ইচ্ছুক এসএমইকে পরামর্শ প্রদান করে। সরকারী চুক্তির মধ্যে এসএমই’র অংশগ্রহন নিশ্চিত করে এবং তাদেরকে সামনে এগিয়ে নেয়া থেকে শুরু করে তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানেও এই দপ্তর কাজ করে থাকে।
OSME এর প্রধান কার্যাবলীঃ
১। সরকারি ক্রয়ে ন্যায্যতা, উন্মুক্ততা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা;
২। কানাডিয়ান মূল্যবোধ অনুযায়ি সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা:
– সরকারি ক্রয় এবং অর্থনীতির মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা নেয়া;
– ফেডারেল পর্যায়ে সরকারী ক্রয় প্রক্রিয়ার অংশীদারিত্বে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলির (এসএমই) সহায়তা প্রদান;
– সরবরাহকারী এবং সরকারী ক্রয়কারিদের মধ্যে সেতু বন্ধন তৈরী করা, এবং
– এসএমইর পক্ষ থেকে সরকারী ক্রয়ের নীতি নির্ধারনে ইতিবাচক পরিবর্তন প্রভাবিত করা।
OSME সরকারি দপ্তরগুলো কীভাবে পণ্য ও পরিষেবাদি ক্রয় করে সে সম্পর্কে এসএমইকে আরও ভালভাবে বুঝতে সহায়তা করে। এক্ষেত্রে নিম্নলিখিত তথ্য ও সেবা সরবরাহ করে থাকেঃ
১। ফেডারেল পর্যায়ের ক্রয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইলেকট্রনিক পোর্টাল পরিচালনা করা,
২। উন্মুক্ত সেমিনার, ওয়েবিনার এবং বিভিন্ন সেশনের মাধ্যমে সরবরাহকারীদের ফেডারেল প্রকিউরমেন্ট সিস্টেম বুঝতে সহায়তা করে,
৩। সরবরাহকারীদের জন্য অনলাইন হেল্পডেস্ক সেবা দিয়ে থাকে,
৪। OSME এসএমইদের চ্যালেঞ্জ এবং সীমাবদ্ধতা নিয়েও কাজ করে:
– ফেডারেল পর্যায়ে ক্রয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণে বাধা বিপত্তি দূর করায় সহযোগিতা করে,
– এসএমই বিষয়ে সরকারী ক্রয়কারি এবং নীতি নির্ধারকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকে,
– ফেডারেল পর্যায়ে ক্রয় কার্যক্রমে এসএমই’র অংশগ্রহণকে উত্সাহিত করার জন্য এর প্রসেস উন্নয়নের সুপারিশ করে থাকে, ইত্যাদি।
MERXTM
MERXTM হচ্ছে দরপত্র প্রক্রিয়াকরণের জন্য একটি প্রাইভেট প্লাটফর্ম। পূর্বে MERXTM এর মাধ্যমে হোস্ট করা সরকারী ইলেকট্রনিক দরপত্র পরিষেবাদি (জিইটিএস) ব্যবহার করার জন্য ফি লাগতো। MERXTM এ পোস্ট করা কিছু চুক্তির (উদাহরণস্বরূপ, প্রাদেশিক ও ব্যক্তিগত খাত) অ্যাক্সেসের জন্য ব্যবহারকারীদের এখনও ফি দিতে হয়, তবে সরকারী দরপত্রের ক্ষেত্রে প্রাদেশিক পর্যায়ে কোন ফি দিতে হয় না।
Buyandsell.gc.ca
“Buyandsell.gc.ca” হলো কানাডা সরকারের ক্রয় বিষয়ক সরকারি ওয়েবসাইট। এর মাধ্যমে রেজিষ্টার্ড ব্যবহারকারিরা দরপত্রে অংশগ্রহন করে, অফার প্রদান যায়, সরবরাহ ব্যবস্থা সচল থাকে এবং চুক্তি সম্পর্কিত তথ্য open data’র মাধ্যমে সরবরাহ করে কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়। ওয়েবসাইটটি খুবই ব্যবহার বান্ধব (user-friendly)। কানাডা সরকারের সাথে ব্যবসা করার বিষয়ে তথ্য খুঁজে পেতে এটি প্রধান তথ্যকেন্দ্র। এই ওয়েবসাইটটি মূলতঃ কানাডা সরকারে বিভিন্ন সরকারি ক্রয়ের তথ্য এবং অন্যান্য পাবলিক সার্ভিসেস এবং প্রকিউরমেন্ট কানাডা (PSPC) ক্রয় সাইটগুলি থেকে বিভিন্ন তথ্য একত্রিত করে ব্যবহারকারীর প্রয়োজন অনুসারে সরবরাহ করতে পারে। এই ওয়েব সাইটের মাধ্যমে সরবরাহকারিদের অনলাইনে রেজিষ্ট্রেশন করতে হয়। তবে কোন রেজিষ্ট্রেশন ফি লাগে না।
২৫ হাজার কানাডিয়ান ডলারের নিচে কোন সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রয়কারি দপ্তরগুলো তা নিজেরাই করতে পারে। তবে এর উপরে ফেডারেল পর্যায়ের ক্রয়ের ক্ষেত্রে তা অবশ্যই OSME এর মাধ্যমে করতে হবে। কানাডাতে দরপত্র নির্বিশেষে এসএমই’র এর শেয়ার প্রায় ৭০%। এ থেকেই বোঝা যায় যে এসএমই’র অংশগ্রহন ব্যাপক এবং সরকার একে ভালভাবেই উৎসাহিত করে থাকে।
এসএমই কানাডার অর্থনীতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ
কানাডা সরকারের আইন অনুযায়ি কোন প্রতিষ্ঠানে ৫০০ এর কম কর্মী থাকলে তা এসএমই (SMEs) হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। আবার, এসএমইর পরিসরের মধ্যে, ছোট কোম্পানি হচ্ছে সেগুলো যারা শুধুমাত্র পণ্য উৎপাদন করে এবং ১০০ এরও কম কর্মচারী থাকে অথবা যে সকল কোম্পানি সেবা প্রদান করে এবং ৫০ জনেরও কম কর্মী থাকে। অধিকন্তু, কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠানগুলির ৮৭% এরও বেশি কম্পানীর ২০ জনেরও কম কর্মচারী রয়েছে। এসকল কম্পানীতে প্রায় ২ মিলিয়নেরও বেশি চাকরির সুযোগ রয়েছে।
কানাডিয়ান ব্যবসার প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৯৯% এর বেশি হচ্ছে এইসব ছোট এবং মাঝারি প্রতিষ্ঠান (SMEs)। এই সকল প্রতিষ্ঠানের অবদান জিডিপিতে প্রায় ৪৫%, সব ধরনের কর্মসংস্থানের মধ্যে ৬৪% এবং এগুলোর মাধ্যমে নেট কর্মসংস্থানের বৃদ্ধির হার প্রায় ৫৩%। এ কারনেই, এসএমই কানাডার অর্থনীতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
এসএমই কানাডা সরকারের কাছে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি বছর, পাবলিক ওয়ার্কস অ্যান্ড গভর্মেন্ট সার্ভিস কানাডা (PWGSC) সরকারের পক্ষ থেকে ১৬ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি পণ্য এবং সেবার চুক্তি করে থাকে। গড়ে, কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে, মূল্যের হিসেবে প্রায় ৪০% এবং সংখ্যার হিসেবে ৭৬% চুক্তি এসএমই এর পক্ষে যায়। ১ মিলিয়ন ডলারেরও কম মূল্যের চুক্তিগুলির জন্য এই শতাংশ যথাক্রমে ৭৫% এবং ৮০%। এই পরিসংখ্যান সমগ্র কানাডার প্রতিষ্ঠানগুলোর কে আমলে নিয়েই তৈরি করা। এ থেকেই বোঝা যায় এসএমই এর কারনে কানাডার সরকার তথা জনগন কি পরিমান উপকৃত হচ্ছে।
এবার ফেরার পালা …
কানাডার ঋতু মূলত চারটি … শীত, বসন্ত, গ্রীষ্ম আর শরৎ। ঋতুর সাথে তাল মিলিয়ে নাকি এই দেশও তার রঙ বদলায় … বলছিল শরিফ ভাই। ম্যাপল পাতার এই দেশের সৌন্দর্য বলে শেষ করা যাবে না। যেদিকে তাকাই, সবকিছুই মুগ্ধ করে। প্রকৃতি আর মানুষ মিলে দেশটাকে সাজিয়েছে মনের মতো করে। সেদেশের মানুষই তো সাজিয়ে গুছিয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্যকে উপস্থাপন করেছে।
শরৎ এ ম্যাপল পাতার রঙ হয় উজ্জ্বল গাঢ় লাল। তখন কানাডার আবহাওয়াও থাকে সবচেয়ে উপভোগ্য। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে ম্যাপল পাতার রঙও বদলায়। এরপর আস্তে আস্তে রঙ ফিকে হতে থাকে … কমলা রঙ হয়ে যায়। শরতের শেষে পাতা পড়ে যায়। পড়ার ঠিক আগ দিয়ে এর রঙ হয় হলুদ। এরপর শীতকাল। এই সময় প্রকৃতির জীর্ণশীর্ণ অবস্থা। ম্যাপল গাছগুলো সব কষ্ট বুকে নিয়ে তুষারের চাদরে ঢেকে নিজেকে আড়াল করে রাখে। বসন্তে আবার নতুন পাতা গজায়। গ্রীষ্মে পাতার রঙ হয় সবুজ।
কানাডায় তখন ছিল গ্রীষ্মকাল। ম্যাপল পাতায় সবুজ রঙ। আমার তো লাল রঙ দেখার শখ ছিল।