1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে যুক্তরাজ্যের বিশেষ প্রকল্প, বাংলাদেশিদের জন্য সম্ভাবনা
বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ০৭:৪৪ অপরাহ্ন

মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে যুক্তরাজ্যের বিশেষ প্রকল্প, বাংলাদেশিদের জন্য সম্ভাবনা

  • আপডেট সময় বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫

বিশ্বের মেধাবী গবেষক, উদ্ভাবক, প্রকৌশলী ও সৃজনশীল পেশাজীবীদের আকৃষ্ট করতে যুক্তরাজ্য একটি ৫৪ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের গ্লোবাল ট্যালেন্ট ফান্ড এবং একটি ডেডিকেটেড গ্লোবাল ট্যালেন্ট টাস্কফোর্স চালু করেছে। বিজ্ঞান, উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তি বিভাগ (ডিএসআইটি) দ্বারা উন্মোচিত এই কৌশলগত উদ্যোগটি, বাংলাদেশসহ শীর্ষস্থানীয় গবেষক, উদ্যোক্তা, প্রকৌশলী এবং শিল্পীদের স্বাগত জানাতে ডিজাইন করা হয়েছে, যা বৈশ্বিক উদ্ভাবন কেন্দ্র হিসেবে ব্রিটেনের অবস্থানকে শক্তিশালী করবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটাবে।

 

০২৫ সাল থেকে শুরু হয়ে এই উল্লেখযোগ্য তহবিল পাঁচ বছরের জন্য স্থানান্তরের খরচ এবং গবেষণার ব্যয় বহন করবে, যার বরাদ্দ ইউকে রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন (ইউকেআরআই) দ্বারা পরিচালিত হবে।

যুক্তরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো এমন ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণ এবং লক্ষ্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে যাদের দক্ষতা দেশের নতুন শিল্প কৌশলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা ব্যাপক অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তৈরি। এই টাস্কফোর্স সরাসরি প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এবং চ্যান্সেলর রাচেল রিভসের কাছে রিপোর্ট করবে। যা এর গুরুত্ব তুলে ধরছে।

এই উদ্যোগের লক্ষ্য ব্রিটেনকে বৈশ্বিক উদ্ভাবনের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তোলা, যার মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা এই প্রকল্পের আওতায় যুক্তরাজ্যে বসবাস ও কাজের সুযোগ পেতে পারেন।

মেধার কোনও ভৌগোলিক সীমানা নেই। তবে যুক্তরাজ্য সেই বিরল স্থানগুলোর একটি, যেখানে বিশ্বমানের ধারণাগুলোর বিকাশ ঘটানোর জন্য রয়েছে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো, প্রতিভা ও আন্তর্জাতিক সংযোগ।

টাস্কফোর্স প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা বিশ্বের প্রতিভাবানদের কাছে নিজেদের প্রথম পছন্দ হিসেবে উপস্থাপন করছি।

বাংলাদেশ থেকে উচ্চশিক্ষিত, সৃজনশীল বা প্রযুক্তিনির্ভর পেশাজীবীদের জন্য যুক্তরাজ্যে অভিবাসনের অন্যতম সম্ভাবনাময় রুট হলো গ্লোবাল ট্যালেন্ট ভিসা। এটি পূর্বের টিয়ার ১ (অনন্য মেধা) ভিসার আধুনিক সংস্করণ।

এই ভিসার বিশেষত্ব হলো, এটির জন্য কোনও চাকরির অফার থাকা বাধ্যতামূলক নয়। বরং আবেদনকারীর পেশাগত দক্ষতা, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়। সফল আবেদনকারীরা যুক্তরাজ্যে শুরুতে পাঁচ বছর পর্যন্ত বসবাস করতে পারেন এবং পরবর্তীতে আনলিমিটেড লিভ টু রিমেইন (আইএলআর-অনির্দিষ্টকাল থাকার অনুমতি)-এর আবেদন করতে পারেন।

বাংলাদেশিদের জন্য দুই ধাপের আবেদন প্রক্রিয়া

এন্ডোর্সমেন্ট (প্রত্যয়ন) অর্জন: আবেদনকারীকে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি নিজ ক্ষেত্রে অসাধারণ মেধা (এক্সেপশনাল ট্যালেন্ট) বা অনন্য সম্ভাবনাময় (এক্সেপশনাল প্রমিজ)।

এই পর্যায়ে যুক্তরাজ্যের নির্দিষ্ট অনুমোদনকারী সংস্থাগুলো থেকে মূল্যায়ন অর্জন করতে হবে। এক্ষেত্রে বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও মেডিসিনের জন্য রয়্যাল সোসাইটি, রয়্যাল অ্যাকাডেমি অব ইঞ্জিনিয়ারিং, ব্রিটিশ অ্যাকাডেমি বা ইউকেআরআই থেকে প্রত্যয়ন পেতে হবে।

শিল্প ও সংস্কৃতির জন্য আর্টস কাউন্সিল ইংল্যান্ড, বিএফআই, আরআইবিএ, ব্রিটিশ ফ্যাশন কাউন্সিল প্রভৃতি এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির জন্য টেক ন্যাশন থেকে প্রত্যয়ন অর্জন করতে হবে।

এন্ডোর্সমেন্টের জন্য আবেদনকারীকে দিতে হবে একটি হালনাগাদ সিভি, কমপক্ষে তিনটি সুপারিশপত্র (একটি হতে পারে যুক্তরাজ্যভিত্তিক) এবং কাজের জাতীয়/আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রমাণ।

ভিসা আবেদন: এন্ডোর্সমেন্ট পাওয়ার পর তিন মাসের মধ্যে ভিসার আবেদন করতে হবে। আবেদনের জন্য লাগবে- বৈধ পাসপোর্ট, অনুমোদনপত্র, যক্ষা পরীক্ষার সনদ (টিবি টেস্ট) (বাংলাদেশ থেকে), যথেষ্ট আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ ও ইমিগ্রেশন হেলথ সারচার্জ ও আবেদন ফি।

আবেদন জমা দিতে হবে অনলাইনে ইউকেভিআই ওয়েবসাইটে। এরপর ঢাকার ইউকে ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারে (বা সিলেট, চট্টগ্রাম) বায়োমেট্রিক ও ডকুমেন্ট সাবমিশন করতে হয়। ভিসা অনুমোদনের সিদ্ধান্ত আসে সাধারণত ৩ সপ্তাহে।

প্রতিযোগিতাপূর্ণ সুযোগ

এই ভিসার বড় সুবিধা হলো ইংরেজি ভাষা পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা নেই। তবে ইংরেজিতে দক্ষতা থাকা যুক্তরাজ্যে বসবাস ও কাজের ক্ষেত্রে উপকারী। এছাড়া, আবেদনকারীর সঙ্গী ও সন্তানদের ভিসা অন্তর্ভুক্তির সুযোগ আছে।

তবে এটি একটি প্রতিযোগিতামূলক এবং কঠিন প্রক্রিয়া, যেখানে প্রতিভার প্রমাণ ও উপস্থাপন গুরুত্বপূর্ণ। তাই অভিজ্ঞ ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞের সহায়তা নেওয়া লাগতে পারে।

যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে বৈশ্বিক প্রতিভা আকর্ষণে সক্রিয়। ইউনিভার্সিটিজ ইউকে-এর প্রধান নির্বাহী ভিভিয়েন স্টার্ন বলেন, এই তহবিল এবং টাস্কফোর্স ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি তৈরিতে এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি চালনায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভূমিকা আরও বাড়াবে।

ব্রিটিশ সরকার আশা করছে, এই উদ্যোগ একদিকে যেমন উদ্ভাবনের গতি বাড়াবে, তেমনি নেট মাইগ্রেশন নিয়ন্ত্রণেও ভারসাম্য রক্ষা করবে।

ব্রিটেনের এই নতুন বিনিয়োগ ও অভিবাসন কৌশল বাংলাদেশের প্রতিভাবানদের সামনে বড় সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। সৃজনশীলতা, গবেষণা ও প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষতা থাকলে গ্লোবাল ট্যালেন্ট ভিসা হতে পারে যুক্তরাজ্যে পেশাগত ও সামাজিক অগ্রগতির নতুন দ্বার।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com