শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৬ অপরাহ্ন

মুম্বাই, তারার শহর

  • আপডেট সময় শনিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৩

ভোররাত, রাত আর ভোরের মাঝখানের এই মুহুর্তটা খুবই সুন্দর। হলে থাকতে মাঝেমাঝে সারারাত জেগে থাকতাম। জেগে থাকতে থাকতে যখন ভোর হত, বাইরে তাকিয়ে থাকতাম। চোখের নিমিষে চারপাশ পরিষ্কার হয়ে যায়। কেউ একজন যেন বদ্ধ ঘরের জানালার পর্দা খুলে দিল। ট্রাঞ্জিশনের মোমেন্টটা খুব কম সময় স্থায়ী হয়। আমি ওয়াশরুমে যেতাম, তখন দেখতাম আশেপাশের রুমের কয়েকজন জেগে উঠেছে। খুব অদ্ভূত ব্যাপার, এখন জেগে উঠেছে যে সেও ভোর দেখবে, কিন্তু আমার মত করে না। সে একটা নতুন দিন শুরু করতে যাচ্ছে, আর আমি ঘুমাতে যাব এখন। তোমার হল শুরু, আমার হল সারা। সারারাত না ঘুমিয়ে অনেক জ্ঞান অর্জন করেছি। ঠিক মাঝরাতে মাথায় যেসব চিন্তা আসে, তা সাধারণ সময়ে আসে না। ইনসমনিয়া, খুব একটা খারাপ না। মানুষ অনেক কিছু উপলব্ধি করে, জীবনকে অন্যরকম ভাবে দেখে।

বাস চলার সময় দুলুনিতে ঘুমাতে পারি না, ঘুমালেও সেটা ভাল ঘুম হয় না। কিন্তু ভোর-রাতে যেকোন জায়গায় চোখে কোত্থেকে জানি ঘুম চলে আসে, সে যত বড় ইনসমনিয়াকই হোক না কেন। গোয়া থেকে মুম্বাই আসছিলাম। ভোররাতে স্বপ্ন দেখছিলাম, আমার কাল্পনিক ক্লিওপেট্রাকে নিয়ে ঘুরতে গেছি বোরা বোরা আইল্যান্ড। আমি নৌকা চালাচ্ছি, ডিঙ্গি নৌকা। নৌকার সামনে বসে ক্লিওপেট্রা হাত দিয়ে নীল পানি নাড়ছে আর হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে। হাসির শব্দ আমি মুখস্ত করে নেই। হয়ত বেশীদিন শুনতে পারব না।

বোরা বোরা আইল্যান্ডে ডিঙ্গি নৌকা আসার কথা না, কিন্তু আমার স্বপ্ন, আমি যা ইচ্ছা চালাব। দরকার হলে পানির উপর ট্রাক চালাব। একটু বেশী দুলুনি অনুভব করছি। নৌকার দুলুনি তো এরকম হবার কথা না। আবার পাশের ডিঙ্গি নৌকাটা হর্ন দিচ্ছে। হর্নের শব্দে আমি বাস্তবে ফিরে এলাম। পাশের বাসটা হর্ন দিচ্ছে।

ভোররাত, মুম্বাই পৌছানোর আগে কোথাও আমি পাহাড় দেখব একথা ভাবিনি। পরে ম্যাপে দেখেছি, জায়গাটার নাম লোনাভালা। কেউ একজন আকাশের পর্দাটা মাত্র সরানো শুরু করেছে। আমি অবাক হয়ে দেখি, দূরের অন্ধকার পাহাড়টা চোখের সামনে ভিজিএ ক্যামেরায় তোলা ছবি থেকে আস্তে আস্তে ডিএসএলআর-এ তোলা ছবি হয়ে যাচ্ছে। আমি বড় হয়েছি হবিগঞ্জে। ছোটবেলায় শ্রীমঙ্গল গিয়ে ছোট ছোট টিলা দেখে ভাবতাম, ওমা, কি বিশাল বড় পর্বত! এর উপরে উঠেই আমি এডমন্ড হিলারি হয়ে যাব। কিন্তু এখানে এত বড় পাহাড় দেখে নিজেকে হঠাৎ তুচ্ছ মনে হয়।

মুম্বাই পৌছানোর আগে নাভি মুম্বাই, বিশাল বড় বড় বিল্ডিং, প্রশস্ত রাস্তাঘাট। আমিও একটুও আকর্ষিত হইনি। আমার বরং পুরনো মুম্বাইয়ে ঢুকেই ভাল লাগে। মুখে বলি মুম্বাই, কিন্তু ফিলটা কাজ করে বোম্বের। আমি জানিনা কেন বোম্বে, মুম্বাই হয়ে গিয়েছিল। আগেই শুনেছিলাম, মুম্বাইয়ে ট্রাফিক অনেক বেশী থাকবে। আর এখানে এরা অসংখ্য ফ্লাইওভার বানিয়ে রেখেছে। আরেকটা ঢাকা শহরে আসলাম মনে হচ্ছিল।

বাসের হেল্পার জিজ্ঞেস করে আমরা কোথায় নামব। আমাদের বুক করা হোটেলের নাম ছিল গার্ডেন রেসিডেন্সি। কাছাকাছি একটা জায়গায় নেমে পড়ি। মুম্বাইয়ে চলার জন্য অটোরিক্সা ভাল, এটা আগে শুনেছিলাম। আমাদের এখানকার মত ১০ টাকা, ২০ টাকা বাড়িয়ে দিবেন এরকম কোন ব্যাপার নেই। ভাড়া যা আসবে তাই।

নারিমান পয়েন্ট, ম্যাকডোনাল্ডস সাথে স্টারবাকস

মুম্বাই আমাদের রিল্যাক্স করার জায়গা। মিউজিয়াম, পুরনো বিল্ডিং দেখে বেড়াব এরকম প্ল্যান ছিল না। আমাদের ট্যুরও প্রায় শেষের পথে। হাতে টাকা পয়সা কেমন আছে সেটা দেখে আলম বের করল যে আমরা দুই-একবেলা ম্যাকডোনাল্ডস ট্রাই করতে পারি। এখন আমরা সন্ধ্যা পর্যন্ত সাগরের পারে বসে থাকব। কোন বিচ নেই এখানে, কংক্রিটের ব্লক ফেলে রাখা হয়েছে সাগরের পাড়ে। তারপরে লোকজনের বসার জন্য সিট ওয়াল, হাঁটা-জগিং করার জন্য প্রশস্ত ফুটপাথ। সিট ওয়ালে বসে শহর দেখি। ইট-কনক্রিটের ব্লক। রাস্তা দিয়ে শুধু কার আর ট্যাক্সি যাচ্ছে। কারগুলো অধিকাংশই আগের মত মুড়ির টিন। এদের এত টাকা কেন! একটু বিকাল হলে, পেটে খিদা লেগেছে অনুভব করি। ম্যাপে ম্যাকডোনাল্ডস এর লোকেশান খুঁজে বের করি।

যা অনুমান করেছিলাম তার থেকে বেশ সস্তা এখানে খাবার। দুইজনের একটা প্যাকেজ ছিল, দুইটা করে বার্গার, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, আইসক্রিম আর আনলিমিটেড কোক – ৩৭০ রুপি। আমার আর আলমের মনে মনে একটা হাই ফাইভ হয়ে যায়। টেবিলগুলোর মাঝখানে ওয়্যারলেস চার্জার। লোকজন ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে। খাবারটা মজা ছিল। পিছনে এক দল পোলাপান চিল্লাপাল্লা করছিল। টেবিলের উপর ওয়ান-টাইম গ্লাস সাজানো হয়েছে একটার উপর আরেকটা। পাতলা বেলুন ছুঁড়ে মারতে হবে একটু দূরে থেকে। একবারে যত বেশী সংখ্যক গ্লাস ফেলা যায়। আমার হাত নিশপিশ করছিল বেলুন ছুঁড়ার জন্য। কিন্তু, ঐ পোলাপানের মাঝখানে গিয়ে কি বলব, তার চেয়ে আমি আরেক গ্লাস কোক নিয়ে আসি।

ম্যাকডোনাল্ডসের পাশেই স্টারবাকস। ভাবলাম, এতদিন গরিবী হালে চলেছি। একদিন একটু বড়লোকি দেখানোই যায়। স্টারবাকস এর কফি খেয়ে আসি, শুনেছি দাম কম।

Cappuccino, Americano, Espresso, Mocha কোনটা কিভাবে বানায় আমি জানতাম, কিন্তু তখন ভুলে গেছি। এইধরনের জ্ঞানের কোন মানে নেই আসলে, দরকারের সময় কাজে না আসলে। আমি সেইফ থাকি বাবা, Cappuccino খাই; আলম Mocha খাবে। কাপের গায়ে আমাদের নাম লিখে নিল। ওয়েল, আমি হতাশ ছিলাম। কারণ, কফি অত ভাল না।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com