বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৭ অপরাহ্ন

মিয়ানমারের আপত্তি, বন্ধ নাফ ট্যুরিজম পার্কের কাজ

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৩ জুন, ২০২৩

বেজা থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, ২০২০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি নাফ ট্যুরিজম পার্কের মহাপরিকল্পনা অনুমোদন দেয় সরকার। সেখানে পর্যটকদের থাকার জন্য হোটেল ও ইকো কটেজ, যাওয়ার জন্য কেব্‌ল কার, ঝুলন্ত সেতু ও ভাসমান জেটি নির্মাণের কথা।

মিয়ানমারের আপত্তির মুখে বন্ধ হয়ে গেছে নাফ ট্যুরিজম পার্কের উন্নয়নকাজ। কক্সবাজারের টেকনাফে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত জালিয়ার দ্বীপে এই পার্ক নির্মাণের কথা ছিল। নাফ নদী থেকে পার্কের জন্য বালু তোলা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে মিয়ানমার।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) কয়েকটি পর্যটনকেন্দ্র তৈরি করছে, যার একটি নাফ ট্যুরিজম পার্ক। সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির সঙ্গে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে নাফ ট্যুরিজম পার্কের নির্ধারিত স্থান জালিয়ার দ্বীপের জমি বুঝে পায় সরকার। দ্বীপটির আয়তন ২৯১ একর।

আমরা দেখতে পাই, মিয়ানমারও তাদের অংশে ড্রেজিং করছে। সব তথ্য–উপাত্ত নিয়ে আমরা দেশটির কাছে অভিযোগ জানাই। তারপর তারাও ড্রেজিং বন্ধ করে।

শেখ ইউসুফ হারুন, নির্বাহী চেয়ারম্যান, বেজা

বেজা থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, ২০২০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি নাফ ট্যুরিজম পার্কের মহাপরিকল্পনা অনুমোদন দেয় সরকার। সেখানে পর্যটকদের থাকার জন্য হোটেল ও ইকো কটেজ, যাওয়ার জন্য কেব্‌ল কার, ঝুলন্ত সেতু ও ভাসমান জেটি নির্মাণের কথা। দ্বীপটিতে শিশুপার্ক, পানির নিচের রেস্তোরাঁ, ভাসমান রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন পর্যটন স্থাপনা করার পরিকল্পনাও রয়েছে বেজার।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন গত মাসে নাফ ট্যুরিজম পার্ক পরিদর্শনে যান। সেখান থেকে ফিরে তিনি একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, দ্বীপটি এখন মহিষের চারণভূমি। বর্তমানে সেখানে উন্নয়নকাজ বন্ধ আছে। তিনি রোববার তাঁর দপ্তরে প্রথম আলোকে বলেন, নাফ নদী থেকে না নিয়ে বিকল্প উপায়ে মাটি আনতে গেলে খরচ অনেক বেশি পড়বে। সেই পথে যাওয়া যাবে না।

ঠিকাদার চলে গেছে

জালিয়ার দ্বীপের এক পাশে মিয়ানমার, অপর পাশে বাংলাদেশের নেটং পাহাড়। দ্বীপটিকে একটি সম্ভাবনায় পর্যটন পার্ক হিসেবে বিবেচনা করেছিল বেজা। সংস্থাটির তথ্য বলছে, ট্যুরিজম পার্কের প্রথম পর্যায়ে ভূমি উন্নয়নের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালে। কাজটি পেয়েছিল এম এম বিল্ডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নাফ নদী থেকে মাটি তুলে ভরাটের কাজ ৫০ শতাংশ করে ফেলেছিল তারা।

বেজা সূত্র জানায়, ২০২২ সালের শুরুর দিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিক আপত্তি জানায় মিয়ানমার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা বেজাকে জানায়। এদিকে বিকল্প কোনো উপায় না পেয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাটি ভরাটের কাজ শেষ না করে চলে যায়।

বেজার কর্মকর্তারা বলছেন, মিয়ানমার সরকার আপত্তি জানিয়ে বলেছে নাফ নদীতে খনন (ড্রেজিং) করতে হলে পারস্পরিক সম্মতি লাগবে। সে ক্ষেত্রে তারা নাফ নদীর পানি প্রত্যাহার ও অন্যান্য বিষয়ে ১৯৬২ সালে সম্পাদিত একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। টেকনাফের আরেক পর্যটনকেন্দ্র সাবরাংয়ের জন্য নাফ নদী থেকে মাটি তোলার সময়ও (২০১৯) মিয়ানমার আপত্তি জানিয়েছিল। বেজা তখন শাহ পরীর দ্বীপের আশপাশ থেকে মাটি আনে।

মিয়ানমার আপত্তি জানানোর পর ২০২২ সালের শুরুর দিকে টেকনাফে প্রকল্প এলাকায় পরিদর্শনে গিয়েছিলেন বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন। তিনি এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দেখতে পাই, মিয়ানমারও তাদের অংশে ড্রেজিং করছে। সব তথ্য–উপাত্ত নিয়ে আমরা দেশটির কাছে অভিযোগ জানাই। তারপর তারাও ড্রেজিং বন্ধ করে।’

মাটি আবার নদীতে

নাফ ট্যুরিজম পার্কে যে মাটি ভরাট করা হয়েছিল, তা আবার বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে নদীতে চলে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বেজার কর্মকর্তারা। তাঁরা আরও জানিয়েছেন, ভূমি উন্নয়নের পাশাপাশি একই সময়ে ২২ একর জায়গাজুড়ে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণকাজ চলছিল। সেই কাজ শেষ না করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চলে গেছে।

নাফ ট্যুরিজম পার্কে এখন পর্যন্ত সরকারের কত টাকা ব্যয় হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। অবশ্য সম্ভাব্যতা যাচাই, মাটি ভরাট, সীমানাপ্রাচীর নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজে ৩০ কোটি টাকার মতো ব্যয় হয়েছে বলে ধারণা দিয়েছেন বেজার কর্মকর্তারা।

বেজা সূত্র বলছে, নাফ ট্যুরিজম পার্ক অব্যবহৃত না রেখে বিদেশি কোনো কোম্পানিকে কাজটি দিতে চায় সরকার। এমন প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে চায়, যারা ভূমি উন্নয়নসহ পুরো অবকাঠামোর কাজ করবে। কিন্তু সে রকম প্রতিষ্ঠান পাওয়া যাচ্ছে না। তুরস্ক ও জার্মানির দুটি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান প্রাথমিকভাবে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছিল। তবে এখন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।

বেজা নাফ ট্যুরিজম পার্কে বিনিয়োগ পেতে চীনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। গত বছর ঢাকায় চীনা দূতাবাসকে চিঠি দিয়ে বেজা বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান খুঁজে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল। এর কারণ হলো, বেজা মনে করছে চীনা বিনিয়োগকারী কাজটি পেলে নাফ নদী থেকে মাটি তোলার ক্ষেত্রে মিয়ানমারকে রাজি করাতে পারবে।

চীনা দূতাবাসে দেওয়া চিঠির বিষয়ে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন প্রথম আলোকে বলেন, এখনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com