কৃষিনির্ভর অর্থনীতি থেকে শিল্পোন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তরের পর এখন প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতির দিকে এগোচ্ছে মালয়েশিয়া। এ লক্ষ্য বৈশ্বিক মেধাবী গ্রাজুয়েটদের আকৃষ্ট করতে ২০২৪ সালে দেশটি চালু করে নতুন ভিসা স্কিম— ‘গ্রাজুয়েশন পাস ভিসা’।
এই ভিসার তালিকায় রয়েছে ইউরোপের উন্নত দেশ, আসিয়ানভুক্ত রাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশ এবং পূর্ব এশিয়ার অর্থনৈতিক শক্তিধর রাষ্ট্রসহ মোট ৩২ দেশ। তালিকার দেশগুলোর প্রায় সবাই মালয়েশিয়ার চেয়ে জিডিপিতে এগিয়ে। এর বাইরে ভারত ও চীনকে বিশেষ বিবেচনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
৩২ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই। অথচ মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যার দিক থেকে চীন শীর্ষে থাকলেও বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে। আবার মালয়েশিয়ার সবচেয়ে বড় শ্রমবাজারও বাংলাদেশ। তারপরও উচ্চশিক্ষা ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের তালিকায় বাংলাদেশকে রাখা হয়নি। মালয়েশিয়ায় এখন ১০ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আছেন।
‘গ্র্যাজুয়েশন পাস ভিসা’-এর মাধ্যমে পড়াশোনা শেষ করার পর নির্দিষ্ট সময় (সাধারণত এক থেকে তিন বছর) মালয়েশিয়ায় থাকার ও কাজ করার সুযোগ মেলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের। উচ্চ দক্ষতার চাকরির মাধ্যমে তারা আন্তর্জাতিক কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের সুযোগ পান। এতে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গঠনে সঙ্গে মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ইতিবাচক অবদান রাখে। তালিকায় থাকলে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরাও এই সুযোগ নিয়ে উপকৃত হতেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সাম্প্রতিক মালয়েশিয়া সফরে দেশটির উচ্চশিক্ষামন্ত্রী ড. জাম্ব্রি আব্দুল কাদিরের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ‘গ্রাজুয়েট প্লাস ভিসা’ চালুর বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয় এবং মন্ত্রী নীতিগতভাবে এ উদ্যোগে সম্মতি দেন- সরকারিভাবে এমন বার্তা দেওয়া হলেও এর বাস্তবায়নের সময়সীমা ও প্রক্রিয়া এখনো স্পষ্ট নয়। নীতি কার্যকরের আগে উভয় পক্ষকে কিছু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হবে।
এদিকে শনিবার মালয়েমিয়ার উচ্চশিক্ষামন্ত্রী জাম্ব্রি আব্দুল কাদির কেদাহ রাজ্যের নির্বাহী পরিষদের (এক্সকো) সদস্যের দাবি প্রত্যাখ্যান করে জানান, ফেডারেল সরকার ১০ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে মালয়েশিয়ায় কাজ করার অনুমতি দেয়নি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাকে অভিযুক্ত করা হলেও এ দাবি সঠিক নয়। মন্ত্রী আরও স্পষ্ট করেন, ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সফরকালে আলোচনা হলেও, কোনো সমঝোতা স্মারক বা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি।
মালয়েশিয়াভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ভিসা কনসালটেন্সি নিয়ে কাজ করে এনডব্লিউসি’র এক কর্মকর্তা আকাশযাত্রাকে বলেন, বাংলাদেশের বাদ পড়া কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং এটি দুই দেশের অভিবাসন সম্পর্ক, নিরাপত্তা-সংক্রান্ত উদ্বেগ এবং কৌশলগত বিভাজনের সরাসরি প্রতিফলন। মালয়েশিয়া বাংলাদেশকে এখনো উচ্চ-দক্ষ মানবসম্পদ উৎস হিসেবে না দেখে শ্রমশক্তি নির্ভর বাজার হিসেবে দেখে।
ক্ল্যাসিক এডুকেশন গ্রুপের এক কর্মকর্তা মনে করেন, অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী প্রথম বছর শেষে চাকরির খোঁজে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়মিত হয়ে পড়েন। এ কারণে মালয়েশিয়ার নীতিনির্ধারকদের কাছে বাংলাদেশিদের নিয়ে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে।
ট্রেফেল কনসালটেন্সি ফার্মের কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন মনে করেন, ভারত ও চীনের জন্য প্রযোজ্য বিশেষ শর্তটি অনুসরণ করে বাংলাদেশও ‘গ্র্যাজুয়েট পাস’ ভিসার জন্য শিক্ষার্থীদের চারিত্রিক সনদ প্রদানের প্রস্তাব দিতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা দূতাবাস থেকে এ সনদ দেওয়া হলে মালয়েশিয়ার নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ কমবে এবং বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা এ উদ্যোগ থেকে উপকৃত হবেন।