মালয়েশিয়ার ৩০০ বিলিয়ন ডলারের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য উচ্চ বেতনের চাকরি বিশাল সুযোগ রয়েছে।
দেশটির সেমিকন্ডাক্টর শিল্প প্রায় ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো বিশাল বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করছে, যা বাংলাদেশ মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (বিএমসিসিআই)-এর একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল মালয়েশিয়া সফর কালে এই বিশাল সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছেন। সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট শাব্বির আহমেদ খানের নেতৃত্বে ২০ থেকে ২২শে ফেব্রুয়ারি দেশটি সফরকালে এই তথ্য জানিয়েছেন।
গত ১৮ই ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়ার সরকারি নিউজ এজেন্সি বারনামা দেশটির সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের বিনিয়োগ ও অপার সম্ভাবনা নিয়ে জানিয়েছিলো, দ্বিতীয়ার্ধে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে দেখা যাচ্ছে।
এছাড়া মালয়েশিয়া সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি এসোসিয়েশনের (এমএসআইএ) এবং ওয়ার্ল্ড সেমিকন্ডাক্টর ট্রেড স্ট্যাটিস্টিকস (ডব্লিউএসটিএস) এর ক্যালকুলেশনের উপর ভিত্তি করে বিশ্ব সেমিকন্ডাক্টর বাজার চলতি বছরেই ১৩.১ শতাংশ বেড়ে ৫৮৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।
এদিকে দেশটির সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি এসোসিয়েশনের (এমএসআইএ)-এর সভাপতি দাতুক সেরি ওং সিউ হাই বলেন, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী সেমিকন্ডাক্টর বিক্রয় ৮.২ শতাংশ কমে ৫২৭ বিলিয়ন হয়েছিলো, তবুও মালয়েশিয়া সারা বছর ধরে তার বাজার ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল।
এর প্রমাণ মেলে ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স সেক্টরে। এক্ষেত্রে দেখা যায়, গত বছরে যেখানে রপ্তানির মাত্র ৩.০ শতাংশ কমে ৫৭৫.৪৫ বিলিয়ন মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত হয়েছিলো। ২০২২ সালে সেটি রেকর্ড গড়ে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধির পর তা দাঁড়িয়েছিল ৫৯৩ বিলিয়ন মালয়েশিয়ান রিঙ্গিতে।
বিএমসিসিআই প্রতিনিধি দল মালয়েশিয়া ডিজিটাল ইকোনমিক কর্পোরেশন (এমডিইসি), মালয়েশিয়া এক্সটার্নাল ট্রেড ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (মেট্রেড), মালয়েশিয়া ইন্টারন্যাশনাল হালাল শোকেস (মিহাস) সেক্রেটারিয়েট, মালয়েশিয়া হেলথকেয়ার ট্রাভেল কাউন্সিল (এমএইচটিসি), এডুকেশন গ্লোবাল মালয়েশিয়ার (ইএমজিএস) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
এ সময় বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে বৃদ্ধি করে ভ্রাতৃপ্রতীম দুই দেশের মধ্যকার শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার নিরলস প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বিএমসিসিআই প্রতিনিধি দলের এই বাণিজ্যিক সফর বলে গত ১১ই মার্চ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
এছাড়াও প্রতিনিধিদলের লক্ষ্য দুই দেশের মধ্যকার সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের বিনিময়, পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই দুই ভ্রাতৃপ্রতীম দেশের জনগণের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা।
মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যকার ব্যবসায়িক সম্পর্ককে অভূতপূর্ব পর্যায়ে উন্নীত করার জন্য বিএমসিসিআই প্রতিনিধি দলের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং একসাথে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
কারিগরি দক্ষতার শীর্ষস্থানে অবস্থান করা মালয়েশিয়ার অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ অর্জনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিএমসিসিআই প্রতিনিধিদল মালয়েশিয়া ডিজিটাল ইকোনমিক কর্পোরেশন (এমডিইসি) এর সঙ্গে দেখা করেন।
মালয়েশিয়ার ক্রমবর্ধমান সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের অগ্রযাত্রায় অংশ নিতে বাংলাদেশের শ্রম-দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা করার জন্য তারা আলোচনা করেন। কারণ, এই সেমিকন্ডাক্টর ও মাইক্রোচিপ শিল্পে কাজ করার জন্য দক্ষ প্রকৌশলীর অভাব রয়েছে এবং বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার সহযোগিতায় দক্ষ প্রকৌশলী তৈরি করে এই খাত সংশ্লিষ্ট শিল্পে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ নিতে পারে।
প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা হলেন-বিএমসিসিআই-এর সহ-সভাপতি মাহবুবুল আলম, মহাসচিব মোতাহের হোসেন খান, যুগ্ম মহাসচিব রুবাইয়াত আহসান, পরিচালক মাহবুব আলম শাহ, বিএমসিসিআই’র সাবেক সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জম হোসেন। বাংলাদেশ হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি (বাণিজ্যিক) প্রণব কুমার ঘোষও প্রতিনিধিদলের বৈঠকগুলিতে উপস্থিত ছিলেন।