মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী পাঠানোর গতি বাড়ানো নিয়ে খাত সংশ্লিষ্ট অনেকের মাঝে যখন এক ধরণের উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে তখন গেল কয়েকদিনে দেশটিতে কর্মী যাওয়ার সংখ্যা বলে ভিন্ন কথা।
গেল ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ ৮ দিনে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন ৯ হাজারের বেশি কর্মী। গড়ে প্রতিদিন ১ হাজারের বেশি কর্মী যাচ্ছে দেশটিতে। যা মালয়েশিয়া শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ার পর থেকে একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যা। আর গেল বছরের আগষ্টে শ্রমবাজার চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশটিতে গেছে ৯১ হাজার ৫০ কর্মী।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয় এবং মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্র বলছে, দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পাওয়া মোট চাহিদাপত্রের বিপরীতে স্বত্বায়ন করা হয়েছে ২ লাখ ১৯৯ কর্মীর চাহিদাপত্র। এর অনুকূলে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ অনুমতি দেয়া হয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৫১৯ কর্মীর।
এদিকে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো-বিএমইটি এবং মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের ভিসা ইস্যুতে সহযোগিতা করা প্রতিষ্ঠান এমইএফসি থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মালয়েশিয়া থেকে এখন পর্যন্তু কলিং ভিসা ইস্যু হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি কর্মীর। এরমধ্যে ই-ভিসা পেয়েছেন ১ লাখ ২২ হাজার ২ কর্মী। আর বিএমইটি থেকে বহির্গমন ছাড়পত্র পেয়েছেন ১ লাখ ৬ হাজার ৪৮১ কর্মী।
মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মীর চাহিদা পূরণ প্রসঙ্গে গেল ১৫ ফেব্রুয়ারি দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রী ভি শিবকুমার সংসদে দেয়া এক বক্তব্যে জানিয়েছিলেন, কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় শিথিলকরণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আগামী তিন মাসের মধ্যে বিদেশি কর্মীর ঘাটতি সমস্যা সমাধান করা হবে। যেখানে উৎপাদন, নির্মাণ, বৃক্ষরোপণ, কৃষি এবং পরিষেবাসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাত অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এর আগে গেল ৮ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের অতিরিক্ত অভিবাসন খরচকে আধুনিক দাসত্বের সাথে তুলনা করে বিদেশি কর্মী নিয়োগে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম।
ঐ একই দিনে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী ভি শিবকুমারের সাথে এক সৌজন্য সাক্ষাতে কর্মী নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দুই দেশের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ এর সভা আয়োজনের অনুরোধ জানান দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো: গোলাম সারোয়ার। এরই প্রেক্ষিতে আগামী মার্চ মাসে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দেন দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রী।
আর গেল ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সফরে আসা মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন বিন ইসমাইল জানিয়েছিলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর গতি বৃদ্ধি এবং অভিবাসন খরচ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে দুদেশের মধ্যকার সমঝোতা স্বারকে পরিবর্তন আনতে প্রস্তুত মালয়েশিয়া সরকার।
বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর গতি বাড়ানো ও অভিবাসন খরচ কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়? এবং রিক্রুটিং এজেন্সির সংখ্যা ও দেশটিতে কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া কেমন হবে? এসকল বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চলতি মার্চ মাসে ঢাকা সফরে আসার কথা রয়েছে মালয়েশিয়ার যৌথ ওয়ার্কিং গ্রূপের প্রতিনিধি দলের সদস্যদের।
সম্ভাব্য মার্চে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া দু-দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রূপের মধ্যকার বৈঠকের পরেই জানা যাবে দেশটিতে কর্মী পাঠানোর গতি আরো বাড়াতে এবং অতিরিক্ত অভিবাসন খরচ কমাতে কি পদক্ষেপ নিচ্ছে দু-দেশের কর্মকর্তরা।