গত ১৬ বছর ধরে যারা আমেরিকায় ফেসবুক ব্যবহার করছেন তারা ক্ষতিপূরণের অর্থ পাবেন। গত বুধবার থেকে ক্ষতিপূরণের অর্থ পাওয়ার জন্য আবেদন গ্রহণ করা শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য ২০১৮ সালে ড্যাটা মাইনিং ফার্ম ক্যামব্রিজ এনালাইটিকা আমেরিকার ৮ কোটি ৭০ লক্ষ ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য নিয়ে তাদের ড্যাটাবেজে রাখে। এবং বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি করে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অনুমতি ছাড়াই। বিষয়টি যখন জানাজানি হয় তখনই অর্থাৎ ২০১৮ সালেই ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ফর নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রথম মামলা দায়ের করা হয়। এরপর অন্যান্য আদালতেও আরো ক্ষতিপূরণ মামলা দায়ের করা হয়। মামলার রায়ে আদালত বলেছে, ২০০৭ সালের ২৪ মে থেকে ২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত যাদের ফেসবুক একাউন্ট ছিল তারা ক্ষতিপূরণের অর্থ পাবেন।
এই মামলায় ফেসবুক তার ৮ কোটি ৭০ লক্ষ ব্যবহারকারীকে ৭২ কোটি ৫০ লক্ষ ডলার ক্ষতিপূরণ দেবে। যারা এই সময়ের মধ্যে ফেসবুক ব্যবহার করেছেন তারা এ বছর ২৫ আগস্টের মধ্যে অনলাইন থেকে ক্লেইম ফরম ডাউনলোড করে তাদের পাওনা শেয়ার দাবি করতে পারেন। যারা অনলাইনে যেতে পারবেন না তারা ডাকযোগে শেয়ার দাবি করতে পারেন। এই ক্ষতিপূরণের অর্থ পাওয়ার জন্য ক্লেইম ফরম পাওয়া যাবে facebookuserprivacysettlement.com (মামলার নাম Facebook Inc. Consumer Privacy User Profile Litigation, কেস # 3:18-md-02843-VC)।
মাথাপিছু কত ডলার পাওয়া যাবে তা নির্ভর করবে ২৫ আগস্ট ২০২৩এর মধ্যে কতগুলো ক্লেইম সাবমিট করা হবে তার ওপর। ৮৭ মিলিয়ন বা ৮ কোটি ৭০ লক্ষ ব্যবহারকারী থাকলেও অনেকেই হয়তো ক্ষতিপূরণের অর্থ চেয়ে ক্লেইম করবেন না। উপরুক্ত সময়ের মধ্যে ফেসবুক একাউন্ট থাকলেও যদি বর্তমানে তাদের কারো একাউন্ট না থাকে তারাও আবেদন করতে পারবেন। এই ক্ষতিপূরণের অর্থের দাবিদার যে পন্থায় চাইবেন সেইভাবেই পেতে পারেন। যেমন প্রিপেইড মাস্টার্সকার্ড, ব্যাংক একাউন্টে ডিরেক্ট ডিপোজিট, পে-পল, ভেনমো বা জেলের মাধ্যমে পেমেন্ট পাওয়া যাবে।
উল্লেখ্য ফেসবুক কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন তাদের একাউন্টহোল্ডারদের ব্যক্তিগত তথ্য অন্য কাজে ব্যবহারের কথা গোপন রেখেছিল। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম এই তথ্যটি ফাঁস করে। সেসময় ফেসবুকের সিইও মার্ক জাকারবার্গ বলেছিলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের দেয়া ব্যক্তিগত ড্যাটা সংরক্ষণ করা।
আমরা যদি তা করতে না পারি, তাহলে বুঝতে হবে মানুষদের সেবা করার যোগ্যতা আমাদের নেই।’ এই ঘটনায় মার্ক জাকারবার্গকে কংগ্রেশনাল শুনানিরও মুখোমুখি হতে হয়। তিনি সেই শুনানিতে এই ড্যাটা ফাঁসের জন্য ক্ষমা চান। ফেডারেল ট্রেড কমিশন এই তথ্য ফাঁসের জন্য ফেসবুককে ৫ বিলিয়ন ডলার জরিমানা করে। এর পরপরই একদল ব্যবহারকারী সম্মিলিতভাবে ফেসবুকের বিরুদ্ধে ক্লাস এ্যাকশন ক্ষতিপূরণ মামলা দায়ের করে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ক্যাম্পেইনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য রিপাবলিকান পার্টি ক্যামব্রিজ এনালাইটিসের এই তথ্য ব্যবহার করে। এছাড়াও অন্যান্য অনেকে এই তথ্য ব্যবহার করেছে।
বর্তমানে আমেরিকায় প্রায় ২৫ কোটি মানুষের ফেসবুক একাউন্ট রয়েছে। আর বিশ্বব্যাপি ২ বিলিয়ন বা ২০০ কোটি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে।