দেখতে দেখতে কর্মসূত্রে এক বছর কাটিয়ে ফেললাম জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে। মাইন নদীর ধারে সবুজে ভরা সুন্দর শহর ফ্রাঙ্কফুর্ট। পুরনো ইউরোপীয় ধাঁচের বাড়ি আর নতুন আকাশচুম্বী বহুতলের সহাবস্থান এখানে। মাইন নদীতট, অসংখ্য মিউজ়িয়াম, আল্টস্টাড (পুরনো শহর), শপিং স্ট্রিট, ফার্মার্স মার্কেট, অনেক পার্ক ও রেস্তরাঁ মিলিয়ে জমজমাট জায়গা। সন্ধেবেলায় বিশেষত ছুটির দিনে ফাঁকা রেস্তরাঁ বা নদীর ধার খুঁজে পাওয়া ভার। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই রাস্তার আশপাশ থেকে ভেসে আসা কাচের গ্লাসের ঠুনঠুন আওয়াজ জানিয়ে দেয় যে, উইকেন্ড আসন্ন।
ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে হঠাৎ বদলাতে থাকল চেনা দৃশ্যপট। করোনার দাপটের খবর তত দিনে পৃথিবীর বিভিন্ন শহর থেকে আসতে শুরু করেছে। ২২ মার্চের মধ্যে এই দেশের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছ’টি রাজ্য ঘোষণা করল লকডাউন। ফ্রাঙ্কফুর্ট তার মধ্যে ছিল না। তবুও এখানে ধার্য হল বাকি জায়গার মতো বেশ কিছু নিয়ম। খাবার এবং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহকারী সুপারমার্কেটগুলি ছাড়া বাকি সব দোকান, শপিং মল ও রেস্তরাঁ প্রথমেই বন্ধ হল। স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে শুরু হল অনলাইন ক্লাস। অফিস চলে এল বাড়িতে, ওয়র্ক ফ্রম হোমের বেশে। এক বাড়িতে থাকেন না এমন মাত্র দু’জন মানুষের সঙ্গে বাইরে দেখা করা ছিল অনুমোদিত। বাইরে বেরোলে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং মানতেই হবে। মিউজ়িয়াম, চার্চ, চিড়িয়াখানা… এই জনসমাগমের জায়গাগুলিও বন্ধ হয়েছিল প্রথম থেকেই। করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার হাত থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে বেশ কিছু উপায় নিয়েছিল সরকার। যাঁরা সদ্য চাকরি খুইয়েছেন বা যাঁরা চাকরিতে বহাল সকলের পাশেই দাঁড়িয়েছে জার্মান সরকার। বাড়ি ভাড়া দিতে যাঁদের সমস্যা হয়েছে তাঁরাও সরকারি অনুদান পেয়েছেন।
ভাল স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং নিয়মনীতির সুষ্ঠু রূপায়ণের জন্যে উন্নতি হচ্ছিল জার্মানির করোনা পরিস্থিতির। এপ্রিলের শেষ ও মে মাসের প্রথম দিক থেকে ধীরে ধীরে খুলতে থাকে বেশির ভাগ দোকানপাট, স্কুল ইত্যাদি। দূরত্ব বজায় রেখে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা চালু হয় অনেক রেস্তরাঁয়। কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং-এর জন্য সেখানে দিতে হত প্রয়োজনীয় তথ্য। নিয়মের ঘেরাটোপ সামান্য শিথিল হওয়ায় মহামারির সময়েও গরমকাল মন্দ কাটেনি।