মরক্কো যাবেন আর মরুভূমিতে ঘুরবেন না, তা কি করে হয়? মরক্কোতে বেশ কিছু ধুলো উড়া, গাছপালা বিহীন বিস্তীর্ণ অঞ্চল আছে। এগুলোকে বলা হয় আর্গ। আর্গ চেবি তেমনই এক আর্গ। এখানে পাথর ঘেরা বালিয়াড়িগুলো ৬৫০ মিটার পর্যন্ত উঁচু। অনেক ট্র্যাভেল কোম্পানি এখানে ক্যামেল ট্রেকিংয়ের ব্যবস্থা করে। তবে আরও অনেক মজার কাজের জন্য ভালোই উপযুক্ত এই জায়গাটি। তার মধ্যে আছে ডেজার্ট হাইকিং, স্যান্ড বোর্ডিং, উঁচু বালির ঢিবির মাথায় চড়ে সাহারার মনোমুগ্ধকর সূর্যাস্ত বা সূর্যোদয় দেখা, মরুভূমির জীবনযাত্রা কাছ থেকে দেখতে বেদুইনদের গ্রামে ঢুঁ মেরে আসা, রাতের মরুভূমিতে ক্যাম্পিং ইত্যাদি।
মরক্কোর ফেজ শহরের পুরনো প্রাচীরঘেরা অংশকেই মূলত ফেজ আল বালি বলা হয়। সরু প্যাঁচানো গলিপথের গোলকধাঁধায় হারিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলে আপনাকে স্বাগত জানাই ফেজ আল বালিতে। এই শহরের রাস্তাগুলো এত সরু যে এখানে কোনও যানবাহন চলাচল করে না। সেজন্য এই শহরটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘মোটর কারমুক্ত নগরী’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছে। ফেজ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মধ্যযুগীয় নগরী, যা এখনও পুরোপুরি বহাল তবিয়তে টিকে আছে।
শহরের রাস্তাগুলোর দু-পাশ দোকান, মসজিদ, মাদ্রাসায় ঠাসা। ঐতিহাসিক এই স্থাপত্যগুলোতে অরিয়েন্টাল, আফ্রিকান এবং মুরিশ স্থাপত্যের সংমিশ্রণ লক্ষণীয়। ফেজ শহরটি নির্মিত হয়েছিল ইদ্রিসিদ রাজবংশের শাসনামলে তাদের রাজধানী হিসেবে। পরে আলমোরাভিদরা এসে ফেজ নদীর অপর পাশে নতুন শহর নির্মাণ করে এবং নদীর উপর সেতু বানিয়ে দুই শহরকে সংযুক্ত করে। শহরের নতুন ও পুরনো অংশকে একত্রে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করে ১৯৮১ সালে। ফেজের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিশেষত্ব হচ্ছে এখানেই অবস্থিত গিনেস বুক কর্তৃক স্বীকৃত উচ্চশিক্ষার সর্বপ্রাচীন প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি অব আল কারউইন।
মরক্কোর বৃহত্তম শহর ক্যাসাব্ল্যাঙ্কায় অবস্থিত দ্বিতীয় হাসান মসজিদ আফ্রিকার বৃহত্তম এবং পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম মসজিদ। বাদশাহ দ্বিতীয় হাসান এটি নির্মাণ করেন পঞ্চম মুহাম্মাদের স্মৃতির সম্মানে। এর নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৮৬ সালে এবং শেষ হয় সাত বছর পর ১৯৯৩ সালে। এটি মরক্কোর সবচেয়ে ব্যয়বহুল স্থাপনা।
মসজিদটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৫৮৫ মিলিয়ন ইউরো। এর নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে গ্র্যানাইট, মার্বেল, কাঠ এবং কাচ। এতে মিশ্রণ ঘটেছে মরক্কান স্থাপত্যশৈলীর সাথে মুরিশ স্থাপত্যশৈলীর। মার্বেলের কারুকাজ করা মেঝে, সিডার কাঠের ছাদ, দেয়ালে জেলিজের কারুকাজ- সবমিলিয়ে নান্দনিক এর অভ্যন্তরীণ সজ্জা। এই মসজিদটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভাসমান মসজিদ। এর কিছু অংশ অবস্থিত ভূমিতে অবস্থিত, আর কিছু অংশ সাগরের উপর।
মেকনেস শহরের অদূরে অবস্থিত ভলিউবিলিস গম ক্ষেতে ঘেরা উর্বর কৃষিজমির মাঝখানে অবস্থিত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। ৪২ হেক্টর জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠা এই নিদর্শনটি খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে ছিল মৌরিতানিয়ার রাজধানী। পরে এটি রোমান উপনিবেশে পরিণত হয়। সেই সূত্রে এখানে রোমান স্থাপত্যশৈলীতে অনেক ভবন নির্মাণ করা হয়। মরক্কো যে একসময় রোমান সাম্রাজ্যের অংশ ছিল তার জলজ্যান্ত প্রমাণ এই প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষটি।
এটি প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে শুরু করে ইসলামী সভ্যতা পর্যন্ত অসংখ্য সভ্যতার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এর বিচিত্র নির্মাণ উপকরণ, যেমন- মোজাইক, মার্বেল, ব্রোঞ্জ, শত শত শিলালিপি এবং বৈচিত্র্যময় নির্মাণশৈলী নানা সময়ের প্রতিভাবান নির্মাতা ও স্থপতিদের মেধার স্বাক্ষর বহন করে চলেছে। খননকাজের মাধ্যমে এখানে আবিষ্কৃত হয়েছে রাজপ্রাসাদ, পার্লামেন্ট ভবন, রাজকীয় প্রবেশপথ প্রভৃতির ভগ্নাবশেষ।