রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪২ পূর্বাহ্ন

মনোহর সিকিম

  • আপডেট সময় বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

শহুরে ব্যস্ততা থেকে কয়েকদিনের ছুটি চাইলে আপনার গন্তব্য হতেই পারে সিকিম। প্রকৃতির অপার্থিব সৌন্দর্য তো আছেই! সঙ্গে পাবেন এক অনাবিল শান্তি। তবে সিকিমে দেখার জায়গা প্রচুর! গ্যাংটক, পেলিং, কালুক, গুরুদোংমার লেক তো আছেই! এছাড়াও দ্রষ্টব্য প্রচুর! সেরকমই কয়েকটি জায়গা ঘুরে দেখা যাক।

নামচি

নামচি কথাটির অর্থ আকাশছোঁয়া। প্রায় ৫৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই ছোট্ট গ্রামটি রাজধানী গ্যাংটক থেকে ৭৮ কিলোমিটার দূরে। গ্যাংটক থেকে এলে পথে পড়বে টেমি চা বাগান। প্রায় ২১ কিলোমিটার বিস্তৃত এই চা বাগান সিকিমের সেরা চা উৎপাদক হিসেবে পরিচিত। পথেই আলাপ হবে রঙ্গীত নদীর সঙ্গেও। অনেকে আবার দার্জিলিং থেকেও কিতাম বার্ড স্যাংচুয়ারি হয়ে নামচি যান।

নামচিতে রয়েছে একটি মনোরম হেলিপ্যাড। বাগডোগরা আর নামচির মধ্যে প্রতি বৃহস্পতিবার হেলিকপ্টার চলে! এখান থেকে নামচি শহর মোটে পাঁচ কিলোমিটার। এই হেলিপ্যাড অঞ্চল থেকেই দেখতে পাবেন কাঞ্চনজঙ্ঘার তুষারাবৃত শিখর। দশ মিনিটের ড্রাইভে পৌঁছে যাবেন শিরডি সাঁই বাবা মন্দিরে। আসংথাংয়ের এই মন্দির সিকিমের প্রথম সাঁই মন্দির। মন্দিরে ঢুকতে কোনও এন্ট্রি ফি লাগে না। রাস্তার ধারে রয়েছে নানা নিরামিষ খাবারের দোকান। তবে নামচির সবচেয়ে জনপ্রিয় আকর্ষণ হল চার ধাম। শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের চূড়ায় শিবের বিশাল মূর্তি।

বারো জ্যোর্তিলিঙ্গ ছাড়াও চারটি ধামের অবিকল রেপ্লিকা রয়েছে এখানে। চার ধাম কমপ্লেক্সের বাইরেই রয়েছে পার্কিংয়ের জায়গা। মোটামুটি ঘণ্টা দেড়েকের সময়ই যথেষ্ট জায়গাটা ঘুরে দেখার জন্য। শহর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে সামদ্রুপতসে মনাস্টারি। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এই পাহাড় আসলে এক ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি। জুতো খুলে প্রায় ২০০ গজ উপরে উঠতে হয়। এখানেই রয়েছে গুরু পদ্মসম্ভবের ৪৫ মিটার উঁচু মূর্তি। নামচি টাউনে ফেরার পথে দেখে নিন রক গার্ডেন। তিম্বুর নামের এক অল্প পরিচিত গাছ পাবেন এখানে। এছাড়াও দেখতে পারেন গাদাক মনাস্টারি, বাইচুং স্টেডিয়াম।

কখন যাবেন: নামচি যাওয়ার সেরা সময় মার্চ থেকে অক্টোবর।

কেনাকাটা: সারদুপচোলিং মনাস্টারির কাছে কাঞ্চনজঙ্ঘা হ্যান্ডিক্রাফট সেন্টার আছে।

কীভাবে যাবেন: কলকাতা থেকে ইন্ডিগো বা জেট এয়ারওয়েজ়ের ফ্লাইটে বাগডোগরা। ওখান থেকে এক ঘণ্টার ড্রাইভে নামচি। ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি নেমে সাড়ে তিন ঘণ্টার ড্রাইভে নামচি।

রাবাংলা

হিমালয়ের কোলে ৭০০০ ফুট উচ্চতায় ছবির মতো সুন্দর জায়গা রাবাংলা। এখান থেকেই পেলিং, কালুক বা নামচি যান বেশিরভাগ পর্যটক। শহর থেকে এক কিলোমিটার দূরে বুদ্ধ পার্ক। এর অপর নাম তথাগত তাল। ১৩০ ফুট উঁচু বুদ্ধমূর্তি এখানকার প্রধান আকর্ষণ। সকাল ন’টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত পার্ক খোলা থাকে। এন্ট্রি ফি ৫০ টাকা। শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে দেখে আসুন নিউ রালাং মনাস্টারি। প্রায় ৫০০ সন্ন্যাসীর বাসস্থান এখানে। প্রায় দোতলা উঁচু বুদ্ধমূর্তির পিছন থেকে নীলাভ জ্যোতি বেরয়। কাছেই ওল্ড রালাং মনাস্টারি। আয়তনে ছোট হলেও পুরনো দিনের ঐতিহ্যের ছোঁয়া রয়েছে এখানে। ডিসেম্বরে এখানে লোসোং মেলা আর ডান্স ফেস্টিভাল হয়।

দেখে আসুন রালং উষ্ণ প্রস্রবণ। এই প্রস্রবণের জলেই নাকি লুকিয়ে আছে রোগব্যধি সারার মহৌষধ। যদি হাইকিং করতে পছন্দ করেন, তাহলে রালং মনাস্টারি থেকে এক ঘণ্টার রাস্তা এই উষ্ণ প্রস্রবণ। কাঞ্চনজঙ্ঘাকে আরও একটু কাছ থেকে দেখতে চাইলে মায়েনাম হিল আদর্শ জায়গা। যাঁরা ট্রেক করেন, তাঁরা ১০৩০০ ফুট উঁচু এই পয়েন্টটিকে বেছে নিতে পারেন। মোটামুটি ন’ কিলোমিটারের ট্রেক। চাইলে এখান থেকে হাইকিং করে পৌঁছে যেতে পারেন হোরোং গ্রাম বা ইয়াংইয়াং গ্রামে। মায়েনামের জঙ্গলে রডোড্রেনডন, চেস্টনাট, ম্যাগনলিয়া, ওক গাছ তো পাবেনই, নানা প্রজাতির হরিণেরও দেখা পাবেন এখানে। মায়েনাম স্যাংচুয়ারি জ়োনে প্রায় ৭০০ রকমের প্রজাপতি আর ১৪৩ প্রজাতির পাখি দেখতে পেতে পারেন। কমন প্যাট্রিজ, হোয়াইট কলার্ড ব্ল্যাকবার্ড, ইন্ডিয়ান ব্লু রবিন, ফ্লাইক্যাচার…কত রকমের পাখি!

কেনাকাটা: বুদ্ধ পার্কের ভিতরেই পাবেন বাটার ল্যাম্প (২০ টাকা করে দাম)। স্যুভেনির হিসেবে ভাল।
খাওয়াদাওয়া: রালং থেকে রাবাংলা শহরে যাওয়ার পথে রাস্তায় পাবেন চা ও ন্যুডল স্যুপ। রাবাংলা আর নামচির মাঝে জাওবারিতে পাবেন স্থানীয় হার্বস আর সবজি।

কখন যাবেন: এপ্রিল (কালচার অ্যান্ড ক্রাফট ফেস্টিভাল), অগস্ট-সেপ্টেম্বর (পাং লাবসোল ফেস্টিভাল)। এপ্রিল থেকে জুনও ভাল সময়।
কীভাবে যাবেন: ইন্ডিগো বা জেট ওয়ারওয়েজ়ের ফ্লাইটে বাগডোগরা নেমে ড্রাইভে রাবাংলা। ট্রেনে শতাব্দী এক্সপ্রেস, গুয়াহাটি এক্সপ্রেস বা নিউ তিনসুকিয়া এক্সপ্রেসে নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছন। ওখান থেকে চার ঘণ্টার ড্রাইভে রাবাংলা।

ইয়াকসাম

কাঞ্চনজঙ্ঘার দ্বারপ্রান্ত। সংক্ষেপে ইয়াকসামের বর্ণনা করা হয় এভাবেই। পাহাড়-নদী ঘেরা এই ছোট্ট জায়গাটি প্রায় ১৭৮০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। প্রাচীন সিকিমের রাজধানী ছিল ইয়াকসাম। চাইলে কাঞ্চনজঙ্ঘায় ট্রেকিং করতে পারেন, আবার নিরিবিলিতে কয়েকদিন প্রকৃতি দর্শনও করতে পারেন। অবশ্যই ঘুরে আসুন খিচিওপালরি লেক। পেলিং থেকে ২৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই হ্রদ শুধু আয়তনেই বড় নয়, স্থানীয়দের কাছে খুব পবিত্রও। হ্রদের জল সবসময়েই স্বচ্ছ্ব। ইয়াকসামে দেখতে পাবেন একাধিক বৌদ্ধমঠ। এই মঠগুলোর সহজ নির্মাণশৈলী চোখ টানে। সময় করে ঘুরে আসুন তাশিডিং মানাস্টারিতে।

একাধিকবার ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়েও আবার পুনর্নিমিত হয়েছে এই মঠ। তবে বৌদ্ধ স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন হিসেবে শুধু তাশিডিং নয়, দেখে নিন দুবদি মনাস্টারিও। সবুজে ঘেরা অতি মনোরম জায়গায় নিরিবিলি এই মঠ। কারতোক হ্রদের ঠিক উলটোদিকেই কারতোক মঠ। রং, স্থাপত্য, শিল্পশৈলী—সবেতেই বৌদ্ধীয় ছাপ। ইয়াকসামেই আছে প্রায় ৮২০ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত কাঞ্চনজঙ্ঘা ন্যাশনাল পার্ক। স্নো লেপার্ড, স্লথ বিয়ার, হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার, রেড পাণ্ডা-সহ হিমালয়ের নানা প্রজাতির প্রাণী এখানে দৃশ্যমান। ৫০০ রকমের পাখিও দেখতে পাবেন।

কখন যাবেন: মার্চ থেকে অক্টোবর মনোরম আবহাওয়া। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি তাপমাত্রা মাইনাসের নিচে থাকে।

কীভাবে যাবেন: ইন্ডিগো বা জেট এয়ারওয়েজ়ের ফ্লাইটে বাগডোগরা। সেখান থেকে দেড় ঘণ্টার ড্রাইভ। ট্রেনে শিলিগুড়ি নেমে বাসে গ্যাংটক যেতে পারেন। ওখান থেকে চার ঘণ্টার ড্রাইভ।

কোথায় থাকবেন

নামচি

হোটেল ধোনদুপ খাংসার : ডবল বেডরুম ভাড়া শুরু ১৫৯৮ টাকা থেকে। যোগাযোগ: ০৮১৭০৯৪৮৬০০, ০৮৯৬৭৩২৫৮৫৬।

দুংমালি হেরিটেজ রিসর্ট : ডবল বেডরুম ভাড়া শুরু ২০০০ টাকা থেকে। যোগাযোগ: ০৯৭৩৪১২৬০৩৯।

রাবাংলা

হোটেল রাবংলা স্টার : ডবল বেডরুম ভাড়া শুরু ১৫০০ টাকা থেকে। যোগাযোগ: ০৯৮৫১৪২১৪৫২। ই-মেল: [email protected]

দ্য বারফুং রিট্রিট : ডবল বেডরুম ভাড়া শুরু ৩০০০ টাকা থেকে। যোগাযোগ: ০৯৭৩৩৫০৩৩৪৭

ইয়াকসাম

লিম্বু হোমস্টে : ভাড়া শুরু ১০০০ টাকা থেকে। যোগাযোগ: ০৯৭৩৩০৮৪৯৮৩, ০৯৭৩৫১০৬২৩৬। ই-মেল: [email protected]

হোটেল রেড প্যালেস : ডবল বেডরুমের ভাড়া শুরু ১৮০০ টাকা থেকে। যোগাযোগ: ০৯৫৯৩৬৬৮৭৭৩। ই-মেল: [email protected]

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com