শীতকাল মানে অঘোষিতভাবে বিয়ের মৌসুম। ভ্রমণের জন্যও শীতকালই সেরা সময়। তাই বিয়ের পর হানিমুনের পর্বটা এ সময়ই সেরে নেওয়া যায়। কিন্তু হানিমুন প্রশ্নে উঠে আসে বিভিন্ন হিসাবনিকাশের বিষয়। সেটি হলো, হানিমুনে যেতে বাজেট কেমন, কোথায় যাবেন– দেশের বাইরে নাকি ভেতরে, পাহাড়ে নাকি সমুদ্রে? আবার কেউ কেউ চান ঢাকার আশপাশেই সাধ্যের মধ্যে মধুর সময়টুকু উদযাপন করে নিতে। তাই সবকিছু বিবেচনায় চলুন জেনে নেওয়া যাক এ-সম্পর্কিত বিভিন্ন খোঁজখবর।
দেশের মধ্যে হানিমুনের জন্য রয়েছে সমুদ্রসৈকত, দ্বীপ, জঙ্গল, পাহাড় এমনকি বিভিন্ন রিসোর্টও। ঢাকার আশপাশেও রয়েছে বিভিন্ন রিসোর্ট। তুলনামূলক কম খরচে সেগুলোতে যাওয়া যেতে পারে। যদি পাহাড় পছন্দ করেন, যেতে পারেন খাগড়াছড়ি, বান্দরবান কিংবা রাঙামাটিতে। সমুদ্র পছন্দ হলে কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন কিংবা কুয়াকাটা তো আছেই। হানিমুনের জন্য যেতে পারেন সিলেটের বিভিন্ন পর্যটন স্পটেও।
কক্সবাজার
পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। এখানে হানিমুনের একটি বড় সুবিধা হচ্ছে, অসংখ্য হোটেল বা রিসোর্ট আছে। অনেক হোটেল-রিসোর্টেই বছরজুড়ে থাকে হানিমুনের বিভিন্ন প্যাকেজ। কোনো কোনো প্যাকেজে বিমানের টিকিটও অন্তর্ভুক্ত থাকে। এ ছাড়া সড়কপথ কিংবা ট্রেনেও যেতে পারবেন সেখানে।
সেন্টমার্টিন
নীল জলরাশি আর নারকেল গাছে ঘেরা সমুদ্রসৈকত সেন্টমার্টিন। হানিমুনের গন্তব্য হিসেবে বেশ জনপ্রিয় অপূর্ব সুন্দর দ্বীপটি। তবে হ্যাঁ, আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে নিয়ে দ্বীপটিতে যাওয়ার দিনক্ষণ ঠিক করে নেওয়া ভালো। নিরিবিলি সময় কাটাতে চাইলে যেতে পারেন এই দ্বীপের কোনো রিসোর্টে।
কুয়াকাটা
সমুদ্রপ্রিয়দের জন্য হানিমুনের আরেকটি চমৎকার গন্তব্য কুয়াকাটা। কুয়াকাটা বাংলাদেশের একমাত্র সৈকত, যেখান থেকে সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় দুটোই দেখা যায়। ঢাকা থেকে লঞ্চে বা এখন পদ্মা সেতু হয়ে খুব সহজে বাসে চলে যাওয়া যায় এ সৈকতে। কুয়াকাটাতেও আছে দারুণ সব হোটেল ও রিসোর্ট।
সাজেক
আপনি যদি পাহাড়, মেঘ, ঝরনা এসব পছন্দ করেন, তবে হানিমুনের গন্তব্য হিসেবে সাজেককেই বেছে নিতে পারেন। খাগড়াছড়ি পর্যন্ত বিলাসবহুল এসি বাস চলে। সেখান থেকে চাঁদের গাড়িতে (জিপ গাড়িতে) চড়ে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ ধরে পৌঁছতে হবে ১ হাজার ৮০০ ফুট উঁচু সাজেকে।
পাহাড়ের চূড়ায় মাত্র দুই কিলোমিটার এলাকা সাজেক ও কংলাকপাড়া। পাহাড়ের কোলঘেঁষে রয়েছে অসংখ্য রিসোর্ট।
বান্দরবান
স্বামী-স্ত্রী দু’জনই যদি অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় হন, তবে বান্দরবান তাদের জন্য। বান্দরবান জেলা শহর ও আশপাশে রয়েছে সুন্দর সুন্দর রিসোর্ট। রয়েছে খরচেরও তারতম্য। সাধ্যের মধ্যে পড়ে এমন কোনো রিসোর্ট-হোটেল বেছে নিতে পারেন মধুচন্দ্রিমার জন্য।
রাঙামাটি
অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় দম্পতির জন্য আরও একটি দারুণ গন্তব্য রাঙামাটি। কাপ্তাই লেকের নীল পানির পটভূমিতে সবুজ পাহাড় আর ততোধিক নীল আকাশ আপনার মধুচন্দ্রিমাকে স্মরণীয় করে রাখবে। রাঙামাটি শহর, আসাম বস্তি এলাকা, কাপ্তাইয়ে রয়েছে চমৎকার সব রিসোর্ট।
সিলেট
সিলেট বাংলাদেশের অন্যতম হানিমুন ডেস্টিনেশন বলা যায়। এখানে রিসোর্ট ও অভিজাত হোটেল দুটোই আছে। জাফলংয়ের পিয়াইন নদী, মায়াবী রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট, লালা খালের অদ্ভুত সুন্দর সবুজাভ নীলপানি, খাদিমনগরের চা বাগান আর শহরের কিন ব্রিজ– সব মিলিয়ে আপনার মধুচন্দ্রিমা হয়ে উঠবে মনে রাখার মতো।
শ্রীমঙ্গল
চায়ের রাজধানীখ্যাত মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল দেশের মধ্যে হানিমুনের জন্য চমৎকার একটি জায়গা। চা বাগানের মধ্যে মেঠোপথে চলা, চাইলে বাইক্কা বিলে নৌকা ভ্রমণ অথবা কাছের লাউয়াছড়া বন থেকে ঘুরে আসতে পারবেন। একটু দূরেই রয়েছে পাহাড়বেষ্টিত নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক। অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় হলে যেতে পারেন হামহাম ঝরনায়।
দেশের বাইরে
তুলনামূলক কম খরচে যদি আপনি হানিমুনে বিদেশ যাওয়ার কথা ভাবেন তাহলে যেতে পারেন পাশের দেশ ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে। মালদ্বীপের মতো দেখতে এই দ্বীপপুঞ্জ হানিমুন কাপলদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
আন্দামানে আছে ৩০০টির বেশি দ্বীপ। তার মধ্যে হ্যাভলক দ্বীপকে বিশ্বের সুন্দরতম দ্বীপের তালিকায় ধরা হয়। শুধু তাই নয়, নীল দ্বীপ, রস দ্বীপের মতো অনেক সুন্দর দ্বীপও রয়েছে আন্দামানে। যেতে পারেন নেপাল কিংবা ভুটানেও।
শীতকাল যেহেতু বিয়ে এবং একই সঙ্গে ভ্রমণের মৌসুম, তাই এ সময় বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সিও ছাড় বা নানারকম হানিমুন প্যাকেজ ঘোষণা করে থাকে। তাই খরচ বাঁচাতে এসব এজেন্সির ওয়েবসাইট বা অফিসেও ঢুঁ মেরে নিতে পারেন একটু।
টিপস
শীতে হানিমুনে গেলে পর্যাপ্ত গরম কাপড়, মাফলার, মোজা ইত্যাদি সঙ্গে রাখুন। ব্যাগে ব্যক্তিগত গামছা, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র, মোবাইলের চার্জার-পাওয়ার ব্যাংক, মশা নিরোধক স্প্রে বা ক্রিম, খাবার স্যালাইন রাখুন। জাতীয় পরিচয়পত্র এবং বিদেশে বেড়াতে গেলে সবসময় পাসপোর্ট সঙ্গে রাখুন।