মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:০৬ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :

মঙ্গলবার থেকে গণ ডিপোর্টেশন:অপারেশন সেফগার্ড

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫

মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে ট্রাম্পের গন ডিপোর্টেশন কর্মসূচী। এই কর্মসূচীর নাম দেয়া হয়েছে অপারেশন সেফগার্ড। এই কর্মসূচীর আওতায় যুক্তরাষ্ট্র ইমিগ্র্যাশন আপাতত বিভিন্নভাবে অপরাধ কান্ডে জড়িতদের বহিস্কার বা ডিপোর্ট করবে। ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) কর্মকর্তারা বলেছেন, এই কর্মসূচীর সূচনা বা ডিপোর্টেশন কার্যক্রমের সূচনা হবে শিকাগো থেকে। আপাতত কত সংখ্যক ইমিগ্র্যান্টরা এর আওতায় আসবেন তা পরিস্কার নয়। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের এই কার্যক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বত্র ইমিগ্র্যান্ট কমিউনিটিতে আতংক, অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী সমর্থক বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তিবর্গ ট্রাম্পের এই অভিযানকে অমানবিক ও ইমিগ্র্যান্ট বিদ্বেষী মানসিকতার বহি;প্রকাশ বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে এ পর্যন্ত যা জানা গেছে, তাতে মনে হচ্ছে প্রাথমিক ডিপোর্টেশনের শিকার হবেন বিভিন্ন অপরাধ কান্ডে দন্ডিত ব্যক্তিরা। তবে এই অপারেশন চলাকালে যে কেউ বৈধভাবে এদেশে অবস্থান না করলে তিনিও ইমিগ্র্যাশন কর্মকর্তাদের সামনে পড়লে বিপদগ্রস্থ হতে পারেন বলে তারা আশংকা প্রকাশ করেছেন।
এদিকে ‘অপারেশন সেইফগার্ড’ নামে এ বিশেষ অভিযান এক সপ্তাহ চলবে বলে এনবিসি নিউজ জানিয়েছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের পর  ‘অপারেশন সেইফগার্ড’ অভিযান নামে ব্যাপক গ্রেপ্তার ও গণ ডিপোর্টেশন করবে আইস। এ অভিযানের পরিকল্পনা তুলে ধরে ধরেছে এনবিসি নিউজ।

ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের গভর্ণর জে.বি. প্রিটজকার শিকাগো সিটিতে গণ ডিপোর্টেশনের পরিকল্পনায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, সেংচুয়ারী সিটি হিসেবে শিকাগোতে বসবাসকারী অভিবাসীদের গ্রেপ্তারের হাত থেকে সুরক্ষা করতে তিনি পিছপা হবেন না। তিনি বলেন ‘আমাদের আইন রয়েছে যা অবৈধ অভিবাসীদের রক্ষা করে, আমি নিশ্চিত করব যে আইন মেনে চলা হয়। তবে আমি উদ্বিগ্ন যে ট্রাম্প প্রশাসন এবং তার অনুগতরা আইন মেনে চলবে না।’

অপরদিকে অবৈধ অভিবাসীদের গণগ্রেফতার শুরুর ঘোষণায় সতর্কতা অবলম্বন করেছে নিউইয়র্ক সিটির উইন সহ বেশ কয়েকটি সংস্থা।  সোমবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেকের পর দিন থেকেই দেশে অবৈধ অভিবাসীদের গণহারে গ্রেফতার শুরু করবে আমেরিকান অভিবাসন কর্তৃপক্ষ আইসিই। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের একজন শীর্ষ সীমান্ত কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন । আর  এ খবর সামনে আসার পরপরই নিউইয়র্ক সিটির সংস্থাগুলো সতর্কতা অবলম্বন করতে শুরু করেছে। কারণ নিউইয়র্কেও অবৈধ অভিবাসীদের সংখ্যা রেকর্ড পরিমানে রয়েছে। শিকাগোতে প্রাথমিকভাবে ‘অভিবাসন অভিযান’ চালানোর ঘোষণা দেয়ার কথা জানা গেছে ।

পর্যালোচনা করা একটি নথি এবং পরিকল্পনার সাথে জড়িত একজন ব্যক্তির সূত্রের বরাত দিয়ে এনবিসি নিউজ এ প্রতিবেদনে বলেছে, আইসিই কর্মকর্তারা কয়েক দিনের জন্য অভিবাসীদের লক্ষ্যবস্তু করার উদ্দেশ্যে ‘অপারেশন সেইফগার্ড’ নামে একটি বৃহৎ অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা করছেন।

নথির মতে, এই অভিযান মঙ্গলবার ২১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে পরবর্তী সোমবারের মধ্যে শেষ হবে। তবে নির্ধারি সময় ও তারিখগুলি পরিবর্তন হতে পারে।

এ পরিকল্পনার সাথে সংযুক্ত এক ব্যক্তি তবে তিনি এই অপারেশন সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য অনুমোদিত না হওয়ায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিসি নিউজকে বলেন, শিকাগো থেকে গণ ডিপোর্টেশন অভিযান শুরু হবে।

এনবিসি নিউজ জানায়,  আইসিই’র দায়িত্বরতদের কাছে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে কর্মকর্তারা মন্তব্যের জন্য ট্রাম্পের ট্রানজিশন টিমের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। ট্রানজিশন টিমের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
শনিবার এনবিসি নিউজে সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প এই অভিযানের কোনো বিস্তারিত বর্ণনা দিতে অস্বীকার করেন। তবে বলেন যে ব্যাপক বহিষ্কার “খুব তাড়াতাড়ি, খুব দ্রুত শুরু হবে। আমরা ইতিমধ্যেই প্রস্তুত এবং এটি শুরু হবে। আমাদের দেশের বাইরে অবৈধভাবে আসা অপরাধীদের বের করতে হবে।”

নথি অনুযায়ী, ‘‘অপারেশন সেফগার্ড” নামের অভিযানে অংশগ্রহণের জন্য পরিকল্পিত এজেন্টদের জন্য একটি ব্রিফিং শুক্রবারের বিকেলে শিকাগোতে নির্ধারণ করা হয়েছিল। এতে আরও বলা হয়েছে যে অভিযানটি স্বেচ্ছাসেবী এজেন্টদের নিয়ে গঠিত হবে এবং প্রয়োজনের চেয়ে বেশি এজেন্ট স্বেচ্ছাসেবী হচ্ছেন। অভিযানটি শিকাগোতে শুরু হতে পারে। এছাড়া যে স্টেটগুলোতে প্রাথমিক অভিযানের সম্ভাবনা রয়েছে সেগুলোর মধ্যে ওয়াশিংটন ডিসি, ফিলাডেলফিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেস, ডেনভার।

জানা গেছে, বর্তমানে আইসের ২৩ কোটি ডলারের বাজেট ঘাটতি রয়েছে এবং ট্রাম্পের পরিকল্পনাগুলি দীর্ঘমেয়াদী এবং ব্যাপকভাবে কার্যকর করার জন্য তহবিল নেই। কংগ্রেসকে প্রথমে বাস্তবায়ন অভিযান এবং আটক কেন্দ্রগুলির জন্য অতিরিক্ত তহবিল বরাদ্দ করতে হবে। অভিবাসীদের গ্রেফতারের পর তাদের বহিষ্কারের আগে আটক কেন্দ্রে রাখা হয়। আইসের ওয়েবসাইট অনুসারে, বর্তমানে শিকাগোতে তাদের আটক কেন্দ্রে কোনো বেড খালি নেই।

টম হোম্যান  ট্রাম্পের নতুন সীমান্ত প্রধান বলেছেন যে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ১,০০,০০০ আটক বেড চান; বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩৪,০০০ বেড রয়েছে।

অভিবাসন সমর্থনকারী গোষ্ঠী আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিল অনুমান করে যে এরকম বহিষ্কার করতে অন্তত ৩১৫ বিলিয়ন ডলারের খরচ হবে। খরচের পাশাপাশি, বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে ব্যাপক বহিষ্কার কিছু পণ্যের মূল্য বাড়াতে পারে।
ফেডারেল সরকার অনুমান করে যে ৪০% কৃষি কর্মীরা অবৈধ অভিবাসী।

২০২২ সালের একটি ফেডারেল অনুমান বলেছে যে যুক্তরাষ্ট্রে ১১ মিলিয়নেরও বেশি অবৈধ অভিবাসী বসবাস করছেন, তবে এখন সে সংখ্যার নির্দিষ্ট তথ্য নেই।

এনবিসি নিউজ প্রতিবেদনে বলেছে, ডেমোক্র্যাট অধ্যুষিত স্টেট-শহরগুলোকে প্রধান লক্ষ্যবস্তু করায় ট্রাম্পের ডিপোর্টেশন পরিকল্পনাগুলি রাজনৈতিক প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে পারে।

হোম্যান বলেছেন যে, নতুন প্রশাসন রাজনৈতিক লড়াই এবং ব্যাপক বহিষ্কারের আর্থিক খরচ নিতে প্রস্তুত। আমি মনে করি ব্যাপক বহিষ্কার এবং এর ফলাফল দেশের জন্য যেকোনো কিছুর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ।

টম হোম্যান শনিবার ফক্স নিউজকে বলেন, ‘প্রথম সপ্তাহে সীমান্তে আশ্চর্যজনক এবং বিষ্ময় দেখতে পারবেন সবাই। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে অবৈধ অভিবাসীদের লক্ষ্য করে ব্যাপক অভিযান চালানো হবে। যখন ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট বের হবে, তারা ঠিক জানবে তারা কাকে খুঁজছে এবং কোথায় তাদের খুঁজে পাবে।’

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com