ভ্রমণপিপাসু বাঙালির জন্য ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নগদ টাকা বহন করার চেয়ে ক্রেডিট কার্ড আরামদায়ক, ঝামেলা ও ঝুঁকিমুক্ত। ঘুরতে গেলে ক্যাশ টাকা লেনদেনে নানান ধরনের জটিলতা হয়। যাঁরা নিয়মিত দেশে-বিদেশে ব্যবসায়িক কিংবা অন্যান্য প্রয়োজনে ভ্রমণ করেন, তাঁদের জন্য ক্রেডিট কার্ড অত্যাবশ্যক।
বর্তমানে ক্রেডিট কার্ড না থাকলে ভ্রমণে অনেক ক্ষেত্রে অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। অনেক সময় হাতে নগদ টাকা থাকে না বা বিদেশে মুদ্রা বিনিময় বা মানি এক্সচেঞ্জের সুবিধা পাওয়া যায় না। আবার সরাসরি মুদ্রা বিনিময়ে গুনতে হয় বাড়তি মাশুল। সঙ্গে যদি ক্রেডিট কার্ড থাকে, তাহলে এসব সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায়।
প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং হেড অব কার্ডস মাসুদুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘দেশের বাইরে গেলে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সরাসরি ও অনলাইনে কেনাকাটা, যাতায়াতের টিকিট, রেস্টুরেন্টে বিল ও উবারের ভাড়া পরিশোধ করতে পারেন। প্রায়োরিটি ক্রেডিট কার্ড, যা অগ্রাধিকার পাস দিয়ে থাকি আমরা। এর ফলে ভ্রমণের ক্ষেত্রে গ্রাহকেরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অপেক্ষমাণ সময়ে ১ হাজার ২০০ বেশি ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের সুবিধা পাবেন। আমাদের ক্রেডিট কার্ড প্রয়োজন হলে এটিএম থেকে অর্থ উত্তোলনসহ বিভিন্ন সুবিধা উপভোগ করার সুযোগও রয়েছে।’
বেশির ভাগ সময়ে বিমানে যাতায়াত করলে, এমন কার্ড বেছে নিন, যেখানে অতিরিক্ত লাভ হিসেবে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আরামদায়ক স্থানের সুবিধা থাকবে।
প্রয়োজন অনুযায়ী কার্ড নির্বাচন করুন। বিশেষ কিছু কার্ড আছে, যেখানে কমপ্লিমেন্টারি মেম্বরশিপ অফার করা হয়ে থাকে। টিকিট বুক করার জন্য বিভিন্ন সুবিধার কথাও ভাবতে হবে। সবদিক বিবেচনা করে পছন্দমতো কার্ড বেছে নেওয়াই ভালো। ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার সময় প্রতিষ্ঠান নানা রকম অফার করবে। সেগুলো খেয়াল করুন। অফারের গিফট ভাউচারগুলো আপনার কাজ সহজ করবে। রেস্তোরাঁ বিল, হোটেল বুকিং, স্পা সার্ভিস, গাড়ি বুকিংসহ একাধিক কাজকে সহজ করবে কার্ডটি। এমন একটি কার্ড বেছে নিন, যেখানে আপনাকে ট্রান্সজাকশনের জন্য কম চার্জ দিতে হবে। অনেক কার্ডে বিমা পলিসি থাকে। যাত্রী দুর্ঘটনার শিকার হলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সুবিধা পাবেন।
টাকার পাশাপাশি রুপিতে ব্যবহার করা যাবে, এমন একটি ডেবিট কার্ড নিয়ে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ভারতে ঘুরতে গিয়ে এই কার্ড দিয়ে লেনদেন করতে পারবে বাংলাদেশিরা। গত রোববার (১৮ জুন) নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এ কথা জানিয়েছেন। গভর্নর বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে নিজস্ব ডেবিট কার্ড নিয়ে আসা হচ্ছে, এটার নাম দেওয়া হয়েছে “টাকা পে কার্ড”। এই কার্ড ব্যবহার করে দেশের ভেতরে কেনাকাটা করা যাবে। এটাকে আমরা রুপির সঙ্গে যুক্ত করে ফেলব, সেই প্রক্রিয়া চলছে।’
আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, বাংলাদেশেও এই কার্ড দিয়ে লেনদেন করা যাবে। আবার কেউ ভারতে গেলে ভ্রমণকারীর ১২ হাজার ডলারের যে ভ্রমণ কোটা আছে, সেই পরিমাণ অর্থ তিনি রুপিতে কেনাকাটা করতে পারবেন। ফলে মুদ্রার বিনিময়ের কারণে যে ক্ষতি হতো, সেটা আর হবে না। তাতে দেখা গেছে, ৬ শতাংশের মতো অপচয় কমবে। বাংলাদেশিরা সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ করেন ভারতে। এতে অনেক ডলার বাঁচবে।’
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বাংলাদেশিরা প্রতিবেশী দেশ ভারত সফরে একক দেশ হিসেবে ক্রেডিট কার্ডে সবচেয়ে বেশি খরচ করেন। বস্তুত দেশের বাইরে ক্রেডিট কার্ডে বাংলাদেশিদের মোট খরচের চার ভাগের এক ভাগ হয় ভারতে।
দেশের বাইরে গিয়ে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্য ও সেবা কিনতে বাংলাদেশের নাগরিকেরা ২০২৩ সালের মার্চ মাসে ৪২৬ কোটি টাকা (৪০ মিলিয়ন ডলার সমমূল্য) খরচ করেছেন। যা আগের মাস ফেব্রুয়ারির তুলনায় ৩২ শতাংশ বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৪৩টি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে মার্চ মাসে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, ওষুধ ও ফার্মেসি, পোশাক, যাতায়াতসহ বিভিন্ন খাতে খরচ করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে এই খরচ ছিল ৩১৩ কোটি টাকা বা ২৯ মিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ডলার খরচ করা হয়েছে ভারতে। এ ছাড়া আমেরিকা, থাইল্যান্ড, আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াতে সিংহভাগ খরচ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, একজন বাংলাদেশি নাগরিক প্রতিবছর ১২ হাজার ডলার পর্যন্ত খরচ করতে পারেন। সেটি তাঁরা কার্ডের মাধ্যমেও খরচ করতে পারেন আবার দেশের বাইরে গেলে নগদ ডলারও সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারেন। তবে কার্ডের মাধ্যমে ডলার পেমেন্ট করতে গেলে একবারে সর্বোচ্চ ৩০০ ডলার পর্যন্ত খরচ করা যায়।