করোনাকালে প্রকৃতি কিংবা ঐতিহ্যের আহ্বানে ছুটে না যাওয়াই ভালো, পৃথিবী সুস্থ হলে ফের দেখা যাবে দুই চোখ ভরে। তবে এই সময়ে বাকেট লিস্টটা কিন্তু করতেই পারেন। অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের ট্র্যাভেল বাকেট লিস্টে কী থাকা উচিত? চলুন দেখে নেয়া যাক—
সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড
দেশের এই জায়গাটি অনেকের কাছেই অপরিচিত। বঙ্গোপসাগরের সবচেয়ে গভীরতম অংশের নাম সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড। অনেকেরই হয়তো জানা নেই, এটি পৃথিবীর ১১তম গভীর সমুদ্রখাদ। যা সৃষ্টি হয়েছিল এক লাখ ২৫ হাজার বছর আগে। সুন্দরবনের দুবলার চরের দক্ষিণাঞ্চলে ক্রমশ এগিয়ে গেলে ১ হাজার ৭৩৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকার দীর্ঘ উপত্যকাটি। তিমি, ডলফিন, হাঙ্গর ও কচ্ছপের প্রধান প্রজনন ক্ষেত্র।
ঝরনা ও জলপ্রপাত
ঝরনা ও জলপ্রপাত দেখা এত অদ্ভুত নেশা! বড় পাহাড়, বিপজ্জনক ঝিরিপথ, খাড়া ঢাল পার হয়ে ভ্রমণকারীরা প্রতিনিয়ত ঘুরে বেড়ান একের পর এক ঝরনা। দেশে অসংখ্য ঝরনা রয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- মৌলভীবাজারের মাধবকুণ্ড, সীতাকুণ্ডের সহস্রধারা-১, সহস্রধারা- ২, মিরসরাইয়ের বান্দরখুম, বাঘবিয়ানী ও খৈয়াছড়া ঝরনা।
বান্দরবানে ঝরনার অভাব নেই। জাদিপাই, রিজুক জিনাপাড়া/ ক্রাইক্ষ্যং হ্লোম, পলি খিয়াং, তিদংখত সাইতার, মাংসাং, ব্যাংছড়ি, বাক্তলাই ও জিংসাম সাইতার ঝরনা অন্যতম। এছাড়া রাঙ্গামাটির শুভলং, ধূপপানি, খাগড়াছড়ির রিসাং, তৈদুছড়া- ১, তৈদুছড়া- ২, সিজুক ১ এবং ২ বেশ জনপ্রিয়।
দেশে কোনো জলপ্রপাতে গেছেন কি? দেশের জনপ্রিয় জলপ্রপাতের মধ্যে রয়েছে বান্দরবানের নাফাখুম, আমিয়াখুম ও রাঙ্গামাটির বিলাইছড়িতে অবস্থিত চ্যাঁদলাং। এগুলোর মধ্যে নাফাখুম ও চ্যাঁদলাং যেতে দরকার ছোট অ্যাডভেঞ্চার। তবে আমিয়াখুম যেতে একটু বড় অ্যাডভেঞ্চার দরকার।
ঐতিহাসিক স্থান
দেশে অসংখ্য ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- জাতির পিতার সমাধিসৌধ, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, জাতীয় কবির সমাধিসৌধ, কার্জন হল, নর্থব্রুব হল, বলধা গার্ডেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, পুরাতন হাইকোর্ট ভবন, বাহাদুর শাহ পার্ক, দীঘাপতিয়া রাজবাড়ি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কবরস্থান, শিলাইদহ কুঠিবাড়ি, সাগরদাড়ি, মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ, ত্রিশাল ও গান্ধী আশ্রম।
লাউয়াছড়া জঙ্গলে বৃষ্টিভেজা ট্র্যাকিং
দুর্গমের আহ্বানে ছুটে যেতে ভয় না থাকলে আপনাকে স্বাগতম! একঘেঁয়েমি ও ক্লান্তিকর ব্যস্ততাগুলো পেছনে ফেলে হারিয়ে যেতে পারেন প্রকৃতির বিচিত্র ভান্ডার উদ্ভিদ-প্রাণির ঐশ্বর্যের রূপরাজ্য লাউয়াছড়ার জঙ্গলে। আর অবশ্যই বর্ষাকালে!
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও ধর্মীয় স্থাপনা
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- মহাস্থানগড়, ময়নামতি, সোনারগাঁও পানাম সিটি, পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার, লালবাগ কেল্লা, উয়ারি-বটেশ্বর, ভিটাগড়, বড় কাটরা, ছোট কাটরা, জগদ্দলা মহাবিহার, নোয়াপাড়া-ঈশানচন্দ্রনগর, আহসান মঞ্জিল। ধর্মীয় স্থাপনার মধ্যে ধানমন্ডির মোগল ঈদগাহ, ষাটগম্বুজ মসজিদ, বাঘা মসজিদ, কান্তজির মন্দির, বুদ্ধ ধাতু জাদি, আর্মেনিয়ান গির্জা অন্যতম।
দ্বীপ ও চরের হাতছানি
প্রকৃতির অঢেল সৌন্দর্যের নিদর্শন হিসেবে বাংলাদেশে রয়েছে অনেকগুলো দ্বীপ ও চর। যেমন চর কুকরী-মুকরী, চর তমিজউদ্দিন, চর তুফানিয়া, নিঝুম দ্বীপ, সোনাদিয়া দ্বীপ, দুবলারচর, মনপুরা, চর গজারিয়াসহ নাম না জানা কত দ্বীপ আর চরের সমাহার! এসব চর থেকে আপনি দেখতে পাবেন চরাঞ্চলের মানুষের জীবনগাথা। তবে এসব স্থানে বর্ষাকালে না যাওয়াই ভালো।
সমুদ্র সৈকত ও তলদেশ
পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার৷ প্রায় ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এটি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য৷ এছাড়া অন্যান্য সৈকতগুলো হল- সেন্টমার্টিন, কুয়াকাটা, পতেঙ্গা, পারকী, টেকনাফ ও কটকা। এছাড়া সমুদ্রের তলদেশ থেকে ঘুরে আসতে চাইলে সেন্টমার্টিনে স্কুভা ডাইভিং কিংবা স্নোর্কেলিং করতে পারেন।
পাহাড় ও দ্বীপ
পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে প্রায় এক হাজার ৭৬০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের কাপ্তাই লেক রাঙ্গামাটির অন্যতম ভ্রমণ গন্তব্য৷ এছাড়া আছে- বান্দরবান, পাহাড়ি শহর খাগড়াছড়ি, সৌন্দর্যের রানি সাজেক। দ্বীপগুলো হল- সেন্টমার্টিন প্রবাল দ্বীপ, মহেশখালী, মনপুরা, নিঝুম দ্বীপ, সন্দ্বীপ, ছেঁড়া দ্বীপ, ভোলা, মজু চৌধুরীরহাট পর্যটন কেন্দ্র, হাতিয়া, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া দ্বীপ, নাফ নদীর মোহনায় জালিয়ার দ্বীপ।