ইউরোপে ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারে আমাদের মধ্যে বিশেষ উচ্ছ্বাস কাজ করে। তবে খরচের কথা বিবেচনা করে অনেকের পক্ষেই ইউরোপ যাওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। আশার কথা হল, সঠিক ভাবে নির্বাচন করতে পারলে এশিয়াতেই ইউরোপের সৌন্দর্য খুঁজে পাওয়া সম্ভব। এশিয়ার এমন ১০টি জায়গা খোঁজ দিতে আজকের পোস্ট।
০১. চিয়াং মাই, থাইল্যান্ড
থাইল্যান্ডের কথা মনে আসলেই সবার আগে ব্যাংকক শহরের কথা মাথায় আসে। তবে যারা শহরের ব্যস্ততা থেকে মুক্তি পেতে ঘুরতে পছন্দ করেন তাদের জন্য ব্যাংককটা আসলে সঠিক জায়গা না। অগণিত মন্দির আর কমলা রঙের পোশাক পরিহিত সন্ন্যাসীদের কোমল হাসি দেখতে হলে আপনাকে বেছে নিতে হবে চিয়াং মাই নামের পুরনো শহরটি। নজর কাড়া মন্দির, নানা সাংস্কৃতিক উৎসব, আলোকিত রাতের ঐতিহ্যবাহী বাজার দেখতে ও পাহাড়ে ট্রেকিং করতে প্রতি বছর ১০ লাখের বেশি পর্যটক আসে এই শহরে। চিয়াং মাই থেকে মাত্র ৪ ঘণ্টার পথ পেরিয়ে ঘুরে আসতে পারেন “পাই” নামের নদীর পাড় ঘেঁষা গ্রাম। জনপ্রিয়তা বাড়ার সাথে সাথে খরচটাও বাড়তে থাকে। তাই সামর্থ্যের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই ঘুরে আসুন।
০২. পেনাং, মালয়েশিয়া
“প্রাচ্যের মুক্তা” খ্যাত মালয়েশিয়ার দ্বীপ পেনাং। ইউরোপীয় পর্যটকদের কাছে এর জনপ্রিয়তা রয়েছে এর সুস্বাদু খাবার ও প্রশান্তিময় পরিবেশের জন্য। মালয়েশিয়ানরা রীতিমত গর্বই করেন এই দ্বীপ নিয়ে। তবে গর্ব করার মতই একটা জায়গা এটা। অভিবাসন ও ঔপনিবেশিকীকরণের কারণে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে মানুষ এখানে এসে স্থায়ী ভাবে থাকতে শুরু করে। সে কারণেই দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সব থেকে সুস্বাদু খাবার এখানেই তৈরি হয় বলে ধারণা করা হয়। মালয়েশিয়ানদের পাশাপাশি ইন্ডিয়ান ও চাইনিজরা পেনাং এর রাস্তায় স্ট্রিট ফুড বিক্রি করে । সে কারণেই হয়তো পেনাং এর রাস্তায় হাঁটতে গেলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে যায়। শুধু খাবারই পেনাং এর একমাত্র আকর্ষণ না, এখানে রয়েছে ঘুরে দেখার মত জাদুঘর এবং আর্ট গ্যালারি।
০৩. সিঙ্গাপুর
সিঙ্গাপুর নিয়ে নতুন করে বলার তেমন কিছু নেই। তবে এশিয়াতে ঘুরে দেখার জায়গা নিয়ে তালিকা করতে গেলে সিঙ্গাপুরকে বাদ দিয়ে সেই তালিকা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। যারা বাজেট হিসেব করে ভ্রমণ করেন তারা হয়তো সিঙ্গাপুরকে বেছে নিবেন না। কারণ ব্যয়বহুল হওয়ার দুর্নাম সিঙ্গাপুরের রয়েছে। দেশটির সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল আপনি চাইলে এটাকে শহর বলতে পারেন, দ্বীপ বলতে পারেন আবার দেশও বলতে পারেন। খুব আধুনিক দেশ হলেও প্রকৃতির কোন কমতি নেই কোথাও। খাবার, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি আর শপিং মলের জন্য বিশ্বজুড়ে সমাদৃত সিঙ্গাপুর। তবে এমনটি ভাবলে ভুল হবে যে শপিং ছাড়া সিঙ্গাপুরে করার আর কিছু নেই।
শহর জুড়েই পাবেন সবুজে ঢাকা পার্ক। যার একটি থেকে অন্যটিতে যাওয়ার জন্য রয়েছে পায়ে হাটার ও সাইকেল চালানোর সম্পূর্ণ আলাদা রাস্তা। সিঙ্গাপুর প্রতিবেশী মালয়েশিয়া বা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যেকোন দেশের তুলনায় অনেক বেশি ব্যয়বহুল হলেও সেই পয়সা উসুল করে নেয়ার যথেষ্ট সুযোগও আপনি পাবেন এখানে। ভারতীয় এবং চীনা সংস্কৃতির প্রাণবন্ত উপস্থাপনা চোখে পড়বে আপনার। আপনি পুরো এক মাস ঘুরেও প্রতিদিন নতুন নতুন জায়গা আবিষ্কার করতে পারবেন। যার খোঁজ কেউ আপনাকে হয়তো দেয়নি। সিঙ্গাপুরে জাদুঘরগুলোতে আপনি স্মৃতিতে তুলে রাখার মত অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন নিঃসন্দেহে।
৪. মালয়েশিয়ার বোর্নিও
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দ্বীপ বোর্নিও। বোর্নিও একাই তিনটি দেশের সীমানা ভাগাভাগি করে নিয়েছে। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং ব্রুনেই। তবে রেইনফরেস্ট, বিপন্ন অরঙ্গুটান এবং আদিবাসী সংস্কৃতির সমন্বয়ে মালয়েশিয়ার বোর্নিওকে প্রাকৃতিক স্বর্গ বলে আখ্যায়িত করলে একটুও ভুল হবে না। মাত্র ২০ ডলারের একটা প্লেন টিকিট আপনাকে নিয়ে যেতে পারে কুয়ালালামপুর থেকে বোর্নিও। সারাওয়াক ও সাবাহ এই দুইটি স্টেটে বিভক্ত মালয়েশিয়ার বোর্নিও। মাউন্ট কিনাবলুর পাদদেশে অবস্থিত কোটা কিনাবলু হচ্ছে সাবাহ স্টেটের রাজধানী। অপরদিকে সারাওয়াক বহুদিন ধরে দখল করে আছে এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন শহরের খেতাব। বোর্নিওতে একবার পা রাখলেই বুঝতে পারবেন যে মালয়েশিয়া শুধু শপিং করার আর সিফুড খাওয়ার দেশ না, প্রকৃতি দেখার জন্যও এর জুরি নেই।
৫. থাইল্যান্ডের দ্বীপপুঞ্জ
বাজেটের কারণে হাওয়াই যেতে পারছেন না? হলিউডের সিনেমা দেখে দেখে হয়তো হাওয়াই এর প্রেমে পরেছেন। কিন্তু ঘরের কোনায় পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দ্বীপ গুলো যেন এই একটা দেশে জড়সড় হয়ে আছে। যার নাম থাইল্যান্ড। ধূসর সাদা বালি, নীল সমুদ্র, ডাইভিং আর দিন শেষে প্রশান্ত রাত আপনার শহুরে ক্লান্তিকে দূর করে দেবে মুহূর্তেই। তবে শহুরে প্রাণ চঞ্চলতা আর প্রকৃতির নীরবতার মধ্যে থেকে বেছে নেয়ার সুযোগও পাবেন আপনি। ফুকেট ও কোহ সামুই পর্যটকদের হটস্পট, উন্নত জীবন ব্যবস্থা। অন্যদিকে কোহ লিপে বা কোহ লান্টা-তে আপনি খুঁজে পাবেন শুধুই প্রকৃতি। যেখানে এখনো ঠিক মত বিদ্যুৎ পৌঁছেনি। মজার ব্যাপার হল, আপনি চাইলে একবার ভ্রমণে থাইল্যান্ডের কয়েকটি দ্বীপ একসাথে ঘুরে আসতে পারবেন।
৬. সিম রিপ, কম্বোডিয়া
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান গুলোর মধ্যে অন্যতম ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট “আংকর ওয়াট”। যা দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে কম্বোডিয়ার সিম রিপ। ৬০০ বর্গ মাইল জঙ্গল জুড়ে বিস্তৃত ভাবে স্থাপিত এই প্রাচীন আংকর মন্দির। যার বয়স ৯০০ বছরেরও বেশি। জঙ্গল যেন ধীরে ধীরে এই প্রাচীন মন্দিরকে গ্রাস করে নিচ্ছে। লতাপাতায় জড়িয়ে প্রাচীন স্থাপত্যগুলো ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়ছে। চিত্রানুগ এই মন্দির নিয়মিতই সিনেমার সেট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। প্রত্নতত্ত্ববিদদের আনাগোনাও রয়েছে চোখে পড়ার মত। বছরে প্রায় দশ লাখ অতিথি আসেন এখানে ঘুরতে। শুধু মন্দিরের জন্য নয়, মূলত সিম রিপের প্রকৃতিই পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
৭. বেইজিং, চীন
জনবহুল, দূষিত, ভয়ঙ্কর হলেও আকর্ষণীয় বেইজিং। চীন ও চীনের ঐতিহ্যকে জানতে হলে বেইজিং আপনাকে আসতেই হবে। গ্রেট ওয়াল এবং নিষিদ্ধ শহরের মত আশ্চর্যজনক ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট রয়ছে এই শহরে। এই শহরের ব্যস্ততা দেখে প্রথম দর্শনে অনেকেই পালিয়ে যেতে চায়। কিন্তু মানব সভ্যতার বেড়ে উঠার আশ্চর্য রহস্যকে উপলব্ধি করার নেশা আপনাকে পেয়ে বসলে সে নেশার চিকিৎসা হতে পারে এই জনবহুল বেইজিং।
৮. বালি, ইন্দোনেশিয়া
মাইলের পর মাইল সৈকত এবং আগ্নেয়গিরির যোগসূত্র এই বালি যেন যাদুর থেকে কোনদিকে কম নয়। দক্ষিণ এশিয়ার নবদম্পতিদের কাছে মধুচন্দ্রিমা যাপনের প্রথম পছন্দ এই বালি। সার্ফারদের কাছেও সমান তালে সমাদৃত। সার্ফিং বা সমুদ্রের বাইরেও কিছু চেখে দেখার ইচ্ছা যাদের তারা বিনা সংকোচে চলে যেতে পারেন বালির শান্তিপূর্ণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র “উবুদ”। ট্রেকিং করতে ভালবাসলে রয়েছে আগ্নেয়গিরি বেয়ে উঠে যাওয়ার সুযোগ। চমৎকার সৈকত, হিন্দু সংস্কৃতি, মনোরম দৃশ্য আর কম খরচে প্লেন টিকিট। সব মিলিয়ে বালির তুলনা বালি নিজেই।
৯. টোকিও, জাপান
ঘুরে দেখার জন্য টোকিও খুব সস্তা শহর নয়। তবে স্বাদটা যেন সম্পূর্ণ ভিন্ন। অর্থনৈতিক দিক থেকে টোকিওর কাছে নিউ ইয়র্ক শহরও হার মেনে যায়। এয়ারপোর্ট থেকে শুরু করে আধুনিকতার শীর্ষে থাকা এই শহরের কথা বলা বাথরুম দেখেও আপনি বিস্মিত হতে বাধ্য। না বললেই নয়, লোকের ভিড়ে আপত্তি না থাকলে টোকিও দেখতে যাবেন চেরি ফোটা বসন্ত ঋতুতে।
১০. রাজস্থান, ভারত
সমুদ্র মানুষকে সবসময় টানে। তাই ভারত ভ্রমণের তালিকায় সবাই গোয়াকে উপরের সারিতে রাখেন। আমাদের দেশের মানুষের বরফ দেখার কৌতূহলের কারণে আমাদের তালিকায় থাকে কাশ্মীর, সিমলা ও মানালির নাম । কিন্তু মরুভূমির রাজ্য রাজস্থান কতটা সুন্দর হতে পারে তা নিজের চোখে না দেখলে অনুধাবন করা কঠিন। সমৃদ্ধ ইতিহাস, প্রেম কাহিনী, উট এবং কারুকার্য মণ্ডিত দুর্গের জন্য সমাদৃত রাজস্থান।