শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৪ পূর্বাহ্ন

ভেঙে যাচ্ছে আইসবার্গ বদলে যাচ্ছে সমুদ্রের গতিপথ

  • আপডেট সময় বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৪

ঘটনাটির সূত্রপাত একটি সুবিশাল ফাটলের মধ্য দিয়ে। ২০১৬ সালের শেষের দিকে বিজ্ঞানীরা পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকা উপদ্বীপ থেকে ওয়েডেল সাগরে ছড়িয়ে পড়া বিশাল লারসেন সি আইস শেলফজুড়ে একটি দ্রুত বর্ধনশীল ফাটল দেখতে পান। কয়েক মাসের মধ্যে ফাটলটি সবচেয়ে বড় হিমশৈলগুলোর মধ্যে একটি এ-৬৮ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। ইউএস ন্যাশনাল আইস সেন্টার হিমশৈলটির নাম দিয়েছে ‘এ-৬৮’। এটি ছিল বড় আকারের ৬৮তম হিমশৈল।

ভেঙে পড়া হিমশৈলটির বরফের বিশাল চাঁইগুলো ছিল আকারে লুক্সেমবুর্গের দ্বিগুণেরও বেশি, যা ২২০০ বর্গমাইলেরও বেশি এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। এগুলো ছিল প্রায় ৭৭০ ফুট পুরু। এক বছর ধরে এই হিমশৈল অ্যান্টার্কটিক সমুদ্রের বরফের মৌসুমি আলিঙ্গনে আটকা পড়েছিল। পরে সমুদ্রের স্রোত ও বাতাসের তোড়ে উত্তর দিকে সরে যেতে থাকে এবং অ্যান্টার্কটিক দক্ষিণ মহাসাগরের একটি প্রত্যন্ত দ্বীপে গিয়ে পৌঁছায়।

বাস্তুতন্ত্রবিদরা আশঙ্কা করছিলেন, বিশাল এই হিমশৈলের সঙ্গে দক্ষিণ জর্জিয়া দ্বীপের সংঘর্ষ হতে পারে। এর ফলে স্থানীয় বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। কিন্তু হিমশৈলটি ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ে এবং খারাপ কিছু ঘটার আগেই গলে যায়। কোটি কোটি টন শীতল, মিঠাপানি সমুদ্রে মিশে যায়। এটি চারপাশের সামুদ্রিক পরিবেশকেও রূপান্তর করে। এ-৬৮-এর মৃত্যুর পরে বিজ্ঞানীরা সমুদ্রে এই বিশাল হিমশৈলগুলোর প্রভাব সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত বের করতে সক্ষম হন। ২০১৬ সালের শেষের দিকে হিমশৈলটি দ্রুত ভেঙে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। প্রধান হিমশৈলটি ‘এ-৬৮এ’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। বিচ্ছিন্ন টুকরোগুলো ছিল এ-৬৮বি, এ-৬৮সি ইত্যাদি। এ-৬৮ হাজার হাজার বছর ধরে বরফের নিচে লুকিয়ে থাকা সমুদ্রতলের এক বিশাল অংশকে উন্মোচিত করে।

যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজের ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভের মেরু বাস্তুতন্ত্রবিদ জেরাইন্ট টার্লিং বলেন, ‘সেখানে অভিযান চালানোর জন্য একটি বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। একবার এটি শান্ত হয়ে গেলে এবং সরে গেলে কী অবশিষ্ট ছিল তা দেখার জন্য। দুর্ভাগ্যবশত এটি গলে যাওয়ার পর চারপাশে প্রচুর পরিমাণে বরফ ছিল। সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।’ পরে গ্রীষ্মের মধ্যে এটি উপদ্বীপের উপকূল বরাবর ১৫৫ মাইল উত্তরে সরে আসে। ভাঙনের শেষ দিকে প্রতিদিন প্রায় দেড় বিলিয়ন টন মিঠাপানি সমুদ্রে প্রবাহিত হচ্ছিল। টার্লিং বলেন, ‘একটি পরিবেশে প্রচুর পরিমাণে মিঠাপানি আনা বাস্তবে বাস্তুতন্ত্রকে ভেতর থেকে পরিবর্তন করতে পারে। এটি ছিল এখন পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া ষষ্ঠ বৃহত্তম এবং এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি।’

ম্যাসাচুসেটসের উডস হোল ওশানোগ্রাফিক ইনস্টিটিউশনের ফ্লো ডায়নামিকিস্ট এবং ২০২৪ সালের গলিত হিমশৈলের পর্যালোচনার সহলেখক ক্লডিয়া সিনেডিজ বলেন, ‘হিমশৈলের পৃষ্ঠ থেকে গলে যাওয়া পানি তাজা থাকে, কারণ এটি তুষার থেকে গঠিত হয়। এটি পার্শ্ববর্তী লবণাক্ত জলের চেয়ে কম ঘন। শীর্ষে পৌঁছে এটি এই গলিত জলের পুকুর গঠন করে।’
দক্ষিণ জর্জিয়া একটি সমৃদ্ধ, গতিশীল সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র। এটি আলোক সংশ্লেষিত প্লাঙ্কটনকে দক্ষিণ জর্জিয়ার আশপাশের পানিতে বিকশিত হতে দেয়, যা অ্যান্টার্কটিক ক্রিল এবং বৃহত্তর প্রাণীদের একটি সমৃদ্ধ অবস্থান। সিল, পেঙ্গুইন,  অ্যালবাট্রসসহ বেশ কয়েকটি বিপন্ন প্রজাতির প্রজননক্ষেত্র এটি। তবে হিমশৈলের প্রভাব সেখানকার বাস্তুতন্ত্রের ওপর কতটা পড়েছে, তা পরিমাপ করতে আরও কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com