স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট ভবন। ইউনেস্কোর কাছ থেকে পেয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি। শতাব্দীপ্রাচীন এই ভবন বহু ইতিহাসেরও সাক্ষী। কিন্তু সেই ভবনটি আর কতদিন রক্ষা করা যাবে, তা নিয়ে ব্রিটিশ এমপি’দের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে।
হাউস অব কমন্সে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি বুধবার (১৭ মে) যে রিপোর্ট দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, ভবনের বিভিন্ন জায়গা থেকে পানি চুঁইয়ে পড়ছে। নানা জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। আগুন লাগলে তা নেভানোর মতো যথেষ্ট ব্যবস্থাও নেই। ফলে বড় কোনো বিপর্যয় ঘটলে ভবনটি ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। অবিলম্বে এ ভবনের সংস্কার প্রয়োজন বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
কমিটির বক্তব্য, ভবনটির এখন যা অবস্থা তা সংস্কার করতে বিপুল টাকা ব্যয় হবে। কিন্তু এতে বিলম্ব হলে খরচ আরও বহুগুণ বেড়ে যাবে, যা করদাতাদের পকেট থেকেই নিতে হবে।
তাছাড়া আরও অপেক্ষা করলে ভবনটি সংস্কারের অযোগ্যও হয়ে পড়তে পারে। এখনো পর্যন্ত যা কাজ হয়েছে তা মূলত ‘ধর তক্তা মার পেরেক’ ধরনের। আর তাতেই সপ্তাহে ২০ লাখ পাউন্ড করে খরচ হয়েছে বলে জানিয়েছে পার্লামেন্টের কমিটি।
ওয়েস্টমিনস্টার রাজপ্রাসাদটিকে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এর আগেও ভবনটির সংস্কার নিয়ে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কখনোই সামগ্রিক সংস্কারের ব্যবস্থা হয়নি। আলোচনাও এগিয়েছে খুব ধীর গতিতে।
২০১৮ সালে ব্রিটিশ এমপিরা ভোটাভুটির মাধ্যমে ঠিক করেছিলেন, ২০২০ সালে ভবনটি কিছুদিনের জন্য খালি করে দেওয়া হবে এবং সে সময় সংস্কারের কাজ হবে। কিন্তু ২০২০ সালে সব এমপি পার্লামেন্ট ভবন ছেড়ে যেতে আপত্তি জানান। ফলে সংস্কার সম্ভব হয়নি।
যারা ভবনটি ছেড়ে যেতে চাননি, তাদের দাবি, পার্লামেন্ট ঠিকমতো সংস্কার করতে হলে বহু বছর সময় লেগে যাবে। এতদিন ওই ভবন ছেড়ে অন্যত্র পার্লামেন্ট চালানো সম্ভব নয়। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভবন সংস্কার দেখভালে যে কমিটি গঠন করা ছিল, সেটিও গত বছর বাতিল করা হয়েছে।
২০১৬ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট ভবনে অন্তত ৪৪ বার আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এ কারণে এখন ২৪ ঘণ্টাই দমকলকর্মীরা ভবনটি পাহারা দেন। ১৮৩৪ সালে অগ্নিকাণ্ডেই নষ্ট হয়েছিল পুরোনো ওয়েস্টমিনস্টার প্রাসাদ। এরপর চার্লস ব্যারি নামে এক স্থপতি নতুন ভবনটি তৈরি করেন। নিও গথিক স্থাপত্যের সেই ভবনই এখন যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট।
প্রায় দুইশ’ বছরের পুরোনো ভবনটি দিনদিন আরও জরাজীর্ণ হয়ে পড়ছে। এর ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ে, শতবর্ষী স্টিম পাইপ ফেটে যায়, বিভিন্ন সময় ইট-পাথরের টুকরো খসে পড়ে। ভবনটির যান্ত্রিক ও বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা ১৯৪০’র দশকে সবশেষ সংস্কার করা হয়েছিল।
হাউস অব কমন্স কমিটি বলেছে, ভবনটিতে এত বেশি ‘অ্যাসবেস্টো’ রয়েছে, যা অপসারণের জন্য আনুমানিক ৩০০ লোকের আড়াই বছর কাজ করা লাগতে পারে। আর এই পুরোটা সময় পার্লামেন্ট ভবন ব্যবহার করা যাবে না।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে