১। অতীতে ভূটান পাহাড়ের উপত্যকায় অবস্থিত অনেকগুলি আলাদা আলাদা রাজ্য ছিল। ১৬শ শতকে একটি ধর্মীয় রাষ্ট্র হিসেবে এর আবির্ভাব ঘটে। ১৯০৭ সাল থেকে ওয়াংচুক বংশ দেশটি শাসন করে আসছেন। ১৯৫০-এর দশক পর্যন্ত ভূটান একটি বিচ্ছিন্ন দেশ ছিল। ১৯৬০-এর দশকে ভারতের কাছ থেকে অর্থনৈতিক সাহায্য নিয়ে দেশটি একটি আধুনিক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হতে শুরু করে।
ভূটান হল একটি রাজতন্ত্র বিশিষ্ট দেশ। এখানে বর্তমানে রাজতন্ত্র বিদ্যমান। ভূটানে অতীতে একটি পরম রাজতন্ত্র প্রচলিত ছিল। বর্তমানে এটি একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। ভূটানের রাজা, যার উপাধি ড্রাগন রাজা, হলেন রাষ্ট্রের প্রধান। মন্ত্রীদের একটি কাউন্সিল রাষ্ট্রের নির্বাহী কার্য পরিচালনা করে। সরকার ও জাতীয় সংসদ উভয়ের হাতে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা ন্যস্ত।
২। ৩৮ হাজার ৩৯৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে প্রায় ৮ লাখ মানুষের বসবাস। আয়তনের দিক দিয়ে বিশ্বে দেশটির অবস্থান ১৩৩ তম।
৩। ভুটানের সরকারী ভাষা জংখা। তবে দেশটিতে উল্লেখযোগ্য পরিমান মানুষ স্থানীয় কিছু ভাষাতে কথা বলে থাকেন।
৪। দেশটির প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ বৌদ্ধ ধর্মে এবং ২৩ শতাংশ মানুষ হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী।
৫। থিম্পু ভুটানের রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর। শহরটি হিমালয় পর্বতমালার একটি উঁচু উপত্যকায় অবস্থিত।
ভুটানের সব থেকে আকর্ষণীয় এবং নান্দনিক সৌন্দর্যের স্থান হল এই থিম্পু। এই স্থানটি দেশের সংস্কৃতির মূল কেন্দ্র। এখানে আছে সিমতোখা জং। এটি ১৬২৭ সালে তৈরি থিম্পু ভ্যালির গেটওয়ে। এখানে আছে রিগনে স্কুল ফর জঙ্ঘা অ্যান্ড মোনাস্টিক স্টাডিজ। রয়েছে রাজধানী থিম্পুর প্রাণ থিম্পু জং। এটি তৈরি হয় ১৬৬১ সালে। দ্য ন্যাশনাল এসেম্বলি, রাজার থ্রোন রুম, সরকারি ডিপার্টমেন্ট এবং সেন্ট্রাল মোনাস্টিক বডির গ্রীষ্মকালীন হেডকোয়ার্টার্সও এখানেই অবস্থিত।
৬। বহির্বিশ্ব থেকে বহুদিন বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে ভূটান প্রাণী ও উদ্ভিদের এক অভয়ারণ্য। এখানে বহু হাজার দুর্লভ প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদ দেখতে পাওয়া যায়। ভূটানের প্রায় ৭০% এলাকা অরণ্যাবৃত। এই অরণ্যই ভুটানের জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে চলেছে যুগ যুগ ধরে।
৭। পৃথিবীতে ভুটানই একমাত্র দেশ যা কিনা কার্বন নেগেটিভ। অর্থাৎ তারা যতটুকু কার্বন উৎপন্ন করে ঠিক তত পরিমান কার্বন শোষণ করে।
৮। দেশটির রাজধানী থিম্পুতে স্মার্টফোন ও কারাওকে বারের সংখ্যা দ্রুত হারে বাড়ছে। তরুণ প্রজন্ম এবং জনসংখ্যার অধিকাংশ সোশাল মিডিয়া ব্যাপকভাবে গ্রহণ করেছেন। এতে চলাফেরা ও ফ্যাশনে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। রাজনীতি নিয়ে অনেক খোলামেলা আলোচনাও হয়ে থাকে। বিছিন্ন মনোভাব থাকলেও কিছু আন্তর্জাতিক ইস্যুতে তারা যথেষ্ট এগিয়ে। যেমন- ১৯৯৯ সাল থেকে পলিথিন নিষিদ্ধ করা হয়। তা ছাড়া তামাক সেখানে পুরোপুরি অবৈধ। দেশটির ৬০ শতাংশজুড়ে বনভূমি।
৯। ভুটানবাসী প্রচুর গাছ লাগাতে পছন্দ করেন। রাজা-রানির প্রথম সন্তানের জন্ম জনগণ পালন করে ১ লাখ ৮ হাজার গাছ লাগিয়ে। গাছ তাদের কাছে দীর্ঘ জীবন, সৌন্দর্য এবং সহমর্মিতার প্রতীক। ২০১৫ সালে মাত্র ১ ঘণ্টায় ৫০ হাজার গাছের চারা লাগিয়ে ভুটান গিনেস রেকর্ড বুকে স্থান করে নেয়।
১০। ভুটানের সরকারী মুদ্রা হচ্ছে বিটিএন। ১ বিটিএন সমান প্রায় বাংলাদেশী ১ টাকা ২০ পয়সা।
১১। দেশটির মোট জিডিপি প্রায় আড়াই বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এবং মাথাপিছু আয় প্রায় ৩ হাজার মার্কিন ডলার।
১২। ভুটানের ডায়ালিং কোড +৯৭৫।