কাশ্মীর ভ্রমণের দিনগুলো কীভাবে যে কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না। সৌন্দর্যের কাছে ক্লান্তি কখনো থামাতে পারেনি। তৃতীয় পর্বে সোনমার্গ ও পেহেলগাম গল্প বলেছি আগেই।
শ্রীনগরে আমাদের শেষ দিনে ঘুরে দেখায় জায়গা বেছে নিয়েছি আরেকটি অসাধারণ জায়গা দুধ পাথরি। শ্রীনগর থেকে ৪২ কিলোমিটার দূরে প্রকৃতির এক আশ্চর্য লীলাভূমি দুধপাথরি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ৯০০০ ফিট। প্রকৃতি যেন তার রঙের বাক্স উপুড় করে দিয়েছে এই দুধপাথরি উপত্যকায়। হাতছানি দিয়ে ডাকছে পুরু সবুজ ঘাসের গালিচা আর ইতস্তত ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানা রঙের বুনো ফুল। মৃদুমন্দ বয়ে চলেছে পাথুরে নদী। তার বরফগলা ঠান্ডা জল ক্লান্ত শহুরে শরীরকে স্নিগ্ধ করে। দূরে দিঘল গাছের সারির মাথায় নানা রঙের খেলা শুরু হয় সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তে।
দুধপাথরির মূল প্রবেশদ্বার থেকে আট কিলোমিটার দূরে রয়েছে শালিগঙ্গা নদী। ঘন নীলরঙা এই নদীর চারপাশের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে৷ ৯,০০০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত এ জায়গা পাহাড়ি গাছের সবুজে মোড়া, তারই বুক চিরে বয়ে চলে শালিগঙ্গা, যার উৎপত্তি আলিটার নামের জায়গা থেকে৷ আলিটার প্রায় সারা বছরই বরফ মোড়া। সেখান যেতে হলে ভরসা ঘোড়া। আমাদের ঘোড়া প্রতি খরচ পড়েছিলো ১১শ রুপি করে। এখানে বাইকও পাওয়া যায় জনপ্রতি ২ হাজার রূপিতে। তবে ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে দেখার অনুভূতিটাই অন্যরকম।
এবার ঘরে ফেরারা পালা। আমরা ঠিক যেভাবে এসেছিলাম একই ভাবে ফিরে যাবো। তবে শ্রীনগর থেকে শেয়ার জিপে ফিরতে হলে ভাড়া অনেক বেশি দাবি করে। আমাদের কাছে জন প্রতি ১৫শ এর কমে নিতে রাজি হচ্ছিলো না কেউ। ঠক তখন সন্ধান পেলাম, শ্রীনগর থেকে জম্মু পর্যন্ত সরকারী ট্যুরিস্ট বাস চলে। জনপ্রতি ভাড়া ৫৫০ রুপি করে। ছোট গাড়ির তুলনায় বাসের সিট বড় হওয়ায় পুরো রাস্তার ভ্রমণটা ছিল স্বপ্নের মতো। জম্মু পৌঁছে রাতের খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে উঠে পড়লাম আগে থেকে টিকিট কেটে রাখা রাজধানী এক্সপ্রেসে।
সকাল ৭ টায় রাজধানী এক্সপ্রেস পৌঁছে গেল নতুন দিল্লি। রেল স্টেশনের সাথেই মেট্রো স্টেশন। মেট্রো ধরে সোজা এয়ারপোর্ট নেমে উড়াল দিলাম ঢাকার উদ্যেশ্যে।