দেশজুড়ে জাত ধর্ম নিয়ে বিদ্বেষ আর হানাহানি যখন মাঝে মাঝেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, তখন সম্প্রীতির সুর বাধতে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে ভারতের রাজস্থান সরকার। সরকারি তরফে ঘোষণা করা হয়েছে, ভিনধর্মে কিংবা ভিনজাতের মধ্যে বিয়ে করলেই মিলবে ১০ লাখ টাকা। নবদম্পতির যৌথ অ্যাকাউন্টে ওই অঙ্কের টাকা দেবে সরকার।
দেশটির সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিনের খবরে বলা হয়েছে, সময় যতই এগিয়ে যাক না কেন, সমাজের পুরোনো ধারণা বদলে গেছে এমনটা বলা চলে না। তাই জাত ধর্ম নিয়ে বৈষম্যের ছবিটাও পুরোপুরি মুছে যায়নি। বরং অনেক জায়গাতেই যে এই বিভেদ রীতিমতো স্থায়ী হয়ে বসে আছে, মাঝে মাঝেই সে কথার প্রমাণ মেলে।
দেখা যায়, উঁচু জাতের অমানবিক আচরণের মুখে পড়েন সমাজের তথাকথিত নিম্নবর্গের মানুষেরা। বিশেষ করে কোনো মুসলিম পুরুষের সঙ্গে হিন্দু মেয়ের বিয়ে নিয়ে বারেবারেই সরগরম হয়ে উঠছে দেশ। হিন্দু এবং মুসলিমের মধ্যে বিয়ের ঘটনা ঘটলে প্রায়শই তাকে ‘লাভ জিহাদ’ বলে থাকেন উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা।
কিন্তু পারস্পরিক সম্মতি থাকলে জাত কিংবা ধর্ম যে যুগলের মিলনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, সে কথা বলেছে দেশের শীর্ষ আদালতও। আর এবার সেই মতকে জনপ্রিয় করে তুলতেই এই পথে হাঁটল রাজস্থান।
জানা গেছে, ২০০৬ সালে ড. সবিতা বেন আম্বেদকর ইন্টারকাস্ট ম্যারেজ স্কিম নামে এই প্রকল্প চালু হয়েছিল। যেখানে কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ উদ্যোগে প্রথমে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। ২০১৩ সালে টাকার অঙ্ক বেড়ে দাঁড়ায় ৫ লাখ।
২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের বাজেট অনুযায়ী, এই অঙ্ক দ্বিগুণ করার কথা জানায় রাজস্থান সরকার। তবে বহুবিবাহের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে না বলেই সাফ জানিয়েছে দেশটির সরকার। সে কারণেই মুসলিমদের আপাতত এই প্রকল্পের আওতায় আনা হচ্ছে না। তবে এই উদ্যোগের ফলে একই ধর্মের মধ্যে উঁচু-নিচু ভেদাভেদও কমতে পারে এমনটাই আশা দেশটির সরকারের।
উল্লেখ্য, বাংলায় বিধবাবিবাহ প্রচলনের জন্য সর্বপ্রথম বিদ্যাসাগর ঘোষণা করেছিলেন, প্রতিটি বিধবাবিবাহের পর নবদম্পতিকে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা যৌতুক হিসেবে দেবেন তিনি। তখন সমাজে এই ধরনের বিয়ে চালু করার জন্যই এহেন উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। সে কথাই ফের মনে করিয়ে দিতে পারে রাজস্থান সরকারের এই উদ্যোগ।