রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৭ অপরাহ্ন

ভালো কর্মসংস্থান হলে দেশেই থাকতেন ৯৯ শতাংশ অভিবাসী

  • আপডেট সময় সোমবার, ১৩ মার্চ, ২০২৩

বাংলাদেশে জীবিকা নির্বাহের ভালো সুযোগ পেলে ৯৯ শতাংশ সম্ভাব্য অভিবাসী দেশেই থাকতেন। যে পাঁচটি প্রধান কারণে এসব মানুষ বিদেশে অভিবাসী তার মধ্যে রয়েছে জীবিকার অভাব (বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে), অপর্যাপ্ত উপার্জন, অর্থনৈতিক সমস্যা, সামাজিক সেবার অভাব ও সীমিত সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

‘বাংলাদেশ: সার্ভে অন ড্রাইভারস অব মাইগ্রেশন অ্যান্ড মাইগ্র্যান্টস প্রোফাইল’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনটি গতকাল একটি অনলাইন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকাশ করে জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থাটি। বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় প্রতিবেদনটির তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে আইওএম।

২০১৯ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে মোট ১১ হাজার ৪১৫ জন সম্ভাব্য অভিবাসীর সাক্ষাত্কার নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। ওই সম্ভাব্য অভিবাসীরা চলতি বছরের জুনের মধ্যে অভিবাসনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। অভিবাসনের ক্ষেত্রে সরকারিভাবে নিবন্ধন করেছেন কিনা তার ওপর ভিত্তি করে সম্ভাব্য অভিবাসীদের নিয়মিত এবং অনিয়মিত—এ দুই খাতে ভাগ করা হয়। বাংলাদেশে এই প্রথম ৬৪ জেলা নিয়ে এ ধরনের গবেষণা পরিচালিত হলো। এর আগে বাংলাদেশে অভিবাসনের চালিকাশক্তির ওপর পরিচালিত গবেষণাগুলো ছিল পরিসর ও মাত্রার দিক দিয়ে নির্দিষ্ট ও সীমিত।

এ প্রতিবেদন কভিড-১৯ পূর্ববর্তী চিত্র তুলে ধরে। তবে অভিবাসনের চালিকাশক্তি এবং সম্ভাব্য অভিবাসীদের প্রোফাইল নিয়ে বিস্তারিত এ বিশ্লেষণ একটি বেসলাইন হিসেবে কাজ করবে। এটি কভিড-১৯ মহামারীকালীন অভিবাসনকে বুঝতেও ব্যবহার করা যেতে পারে।

এ গবেষণার অধিকাংশ উত্তরদাতা পুরুষ, ৮৯ শতাংশ। এতে অংশগ্রহণকারীদের গড় বয়স ২৭ বছর। ৬৪ শতাংশের বয়স বিশের কোটায়। অংশগ্রহণকারীদের প্রায় অর্ধেকই বিবাহিত। অধিকাংশ উত্তরদাতা কর্মক্ষম ও শিক্ষার কিছু স্তর পার করেছেন। উত্তরদাতাদের শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তরের কথা বিবেচনা করলে, ৪১ শতাংশ মাধ্যমিক স্তর সম্পন্ন করেছে, ২৭ শতাংশ উচ্চবিদ্যালয় স্তর এবং ২৬ শতাংশ প্রাথমিক স্তর সম্পন্ন করেছে। উত্তরদাতাদের মধ্যে ৩ শতাংশ শিক্ষার কোনো স্তরেই প্রবেশ করেনি। নিম্নমানের কর্মসংস্থান বাংলাদেশে এখনো একটি চ্যালেঞ্জ। ৪০ শতাংশ সম্ভাব্য অভিবাসী অভিবাসনের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে কর্মহীন ছিল এবং ৯০ শতাংশ জানায় তাদের ব্যক্তিগত কোনো উপার্জন নেই বা থাকলেও তা অপর্যাপ্ত।

এ প্রতিবেদনে দেখা যায়, নিয়মিত এবং অনিয়মিত সম্ভাব্য অভিবাসীদের ধরন প্রায় একই রকম। সাধারণত ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে অনিয়মিত অভিবাসীরা অল্পবয়সী, স্বল্পশিক্ষিত এবং মূলত বেকার হয়ে থাকেন। কিন্তু এ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, নিয়মিত ও অনিয়মিত সম্ভাব্য অভিবাসীদের বয়স এবং শিক্ষার স্তর একই রকম।

অভিবাসীরা বিশ্বের দক্ষিণের দেশগুলো ছেড়ে উত্তরের দেশে অভিবাসন করে, এ বহুল প্রচলিত ধারণাও উঠে আসে প্রতিবেদনে। উপাত্ত থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ চিত্র ভিন্ন। বরং বাংলাদেশে অভিবাসন মূলত দক্ষিণ থেকে দক্ষিণে ঘটে। অধিকাংশ অভিবাসী মধ্যপ্রাচ্য কিংবা এশিয়ার অন্যান্য দেশে অভিবাসন করে থাকেন। মাত্র ১ দশমিক ৪ শতাংশ ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। অধিকাংশ উত্তরদাতা জানান, তারা মধ্যপ্রাচ্যে গমনে ইচ্ছুক। গন্তব্য দেশ হিসেবে সৌদি আরব সবচেয়ে জনপ্রিয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৮৫ শতাংশ সম্ভাব্য অভিবাসী তাদের অভিবাসনের জন্য অভিবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে টাকা দিয়েছেন। এক্ষেত্রে নিয়মিত ও অনিয়মিত সম্ভাব্য অভিবাসীরা প্রায় একই পরিমাণ অর্থ প্রদান করেছেন। নিয়মিত সম্ভাব্য অভিবাসীরা গড়ে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৬৫১ টাকা (২ হাজার ৮৭১ ডলার) দিয়েছেন, যেখানে অনিয়মিত সম্ভাব্য অভিবাসীরা গড়ে দিয়েছেন ২ লাখ ২৯ হাজার ৪৮৮ টাকা (২ হাজার ৭০৫ ডলার)। অভিবাসনের জন্য অভিবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দেয়া সর্বোচ্চ অর্থের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ টাকা (১৮ হাজার ৮৫৭ ডলার)।

আন্তর্জাতিক অভিবাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পৃথিবীর ষষ্ঠ বৃহত্তম উৎস দেশ। ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৭৮ লাখ বাংলাদেশী বিদেশে অবস্থান করেছেন। প্রতি বছর এদেশে ২২ লাখেরও বেশি তরুণ জনগোষ্ঠী শ্রমশক্তিতে যুক্ত হয়। তবে স্থানীয় শ্রমবাজার এসব কর্মসংস্থানপ্রার্থীকে জায়গা দিতে সক্ষম নয়।

সম্ভাব্য অভিবাসীদের জিজ্ঞেস করা হয়, কী কী পরিবর্তন করা হলে তারা দেশে থাকবেন। প্রায় সবাই (৯৯%) শতাংশ উত্তর দেন, উন্নত কর্মসংস্থানের সুযোগ পেলে তারা বাংলাদেশেই থাকবেন। উত্তরদাতাদের মধ্যে একজন বলেন, ‘দেশে আমি যা উপার্জন করি তা দিয়ে ভালোমতো জীবন চালাতে পারি না। বিদেশে গিয়ে অনেকেই ভালো করছে, তাই আমিও বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

গবেষণায় অংশ নেয়া উত্তরদাতাদের ৩৮ শতাংশ উল্লেখ করেন, আইনের উন্নতি হলে তারা দেশে থাকবেন। ৩৬% উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ২৯% আরো সুলভ স্বাস্থ্যসেবার কথা উল্লেখ করেছেন দেশে থাকার জন্য। প্রায় অর্ধেক অংশগ্রহণকারী জানান, তারা দেশে থাকবেন যদি তাদের আরো অধিক পড়াশোনার ক্ষেত্রে সহায়তা করা হয়।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন জানান, ‘শ্রম অভিবাসন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ খাতকে আরো ভালোমতো বুঝতে, কাজের সন্ধানে বিদেশ গমনকারীদের ডাটাবেজ তৈরি প্রয়োজন। যে ডাটাবেজে তাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটের বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে। ভবিষ্যতে উন্নত তথ্যনির্ভর অভিবাসন নিশ্চিতেও কাজ করবে এ ডাটাবেজ। এ প্রতিবেদনটি বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক শ্রম অভিবাসনের কারণগুলোর বিস্তারিত তুলে এনেছে। উন্নত নীতিমালা ও অনুশীলন তৈরিতে প্রতিবেদনটি আমাদের সহায়তা করবে।’

আইওএম বাংলাদেশের মিশন প্রধান গিওরগি গিগাওরি বলেন, এ প্রথমবারের মতো আমরা দেশব্যাপী সম্ভাব্য অভিবাসীদের ওপর জরিপ পরিচালনা করেছি। এ প্রতিবেদনটি বাংলাদেশ থেকে অভিবাসনের আর্থসামাজিক চালিকাশক্তিগুলো নিয়ে কাজ করতে সহযোগিতা করবে। পাশাপাশি শিক্ষা ও দক্ষতায় বিনিয়োগের গুরুত্ব সম্পর্কে উচ্চস্তরের আলোচনা ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করবে প্রতিবেদনটি। আমরা যখন অভিবাসী কর্মীদের ওপর বিনিয়োগ করি, তখন তা তাদের জনগোষ্ঠীর ওপরও বিনিয়োগ হয়।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com