ভ্রমণপিপাসু মানুষ মনের প্রশান্তির জন্য প্রতিনিয়ত দেশ-বিদেশের নানা স্থানে ঘুরে বেড়ায়। অধিকাংশ পর্যটকরা ভ্রমণ করার জন্য এশিয়ার জায়গাগুলোর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, কাশ্মীর, নেপাল, কিংবা বাংলাদেশকে বেছে নেয়। সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষে কাশ্মীর, ভারত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ভারতের পর্যটন শিল্পে ধস নেমেছে । লক্ষ লক্ষ টাকা নষ্ট হতে বসেছে বহু পর্যটকের। কারণ, কাশ্মীরের পর এবার লেহ-লাদাখ, হিমাচলপ্রদেশ, রাজস্থান, পাঞ্জাবসহ দেশটির বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভ্রমণ কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে রোববার (১১ মে) বলা হয়, ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষে এই সব জায়গাগুলো ঝুঁকির মুখে দাঁড়িয়ে। ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন হানার নিশানা হতে পারে এসব অঞ্চল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রতিবেদনে বলা হয়, পহেলগামে সন্ত্রাসবাদীদের হাতে নিরীহ পর্যটকরা নিহত হওয়ার পরে আর ঝুঁকি নেওয়ার প্রশ্নই নেই। তবে গোটা পরিস্থিতিতে প্রবল ধাক্কা খেয়েছে পর্যটন ক্ষেত্র। কারণ, এই সময়টা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গরমের ছুটি পড়ে। বৃদ্ধি পায় পাহাড়ে যাওয়ার হিড়িক। সেই মতো গাড়ি-হোটেলের বুকিং হয়ে যায় অনেক আগে।
পর্যটন সংস্থাগুলোর দাবি, পুরোটাই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। একাংশের বক্তব্য, ২০২০ এর মার্চ-এপ্রিলে কোভিড হানার সময়ের ছবিটা যেন ফিরে এসেছে। একের পর এক বুকিং বাতিল হচ্ছে। সাধারণ মানুষ গুনছেন লোকসান। পর্যটন নির্ভর ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত।
‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব ট্যুর অপারেটর্স’ এর রাজ্য সভাপতি দেবজিৎ দত্ত বলেন, কোভিডের পরে এত বড় ধাক্কার মুখে পড়িনি ব্যবসায়ীরা। শুধু দেশীয় পর্যটক নয়, বিদেশিরাও মুখ ফিরিয়েছেন। কাশ্মীর তো বটেই, লেহ-লাদাখ, হিমাচল, রাজস্থান সর্বত্র বুকিং বাতিল হচ্ছে। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে জানা নেই। কাজ বলতে শুধু অপেক্ষা।
দেবজিৎ জানান, বুকিং বাতিল করলে পর্যটককে তারা ক্রেডিট নোট দিচ্ছেন। অনেক সংস্থা টাকা ফেরাচ্ছে।
কসবার বাসিন্দা চার্লি বন্দ্যোপাধ্যায়ের ২০ মে পরিবার নিয়ে কাশ্মীর-লেহ-লাদাখ যাওয়ার কথা ছিল। কাশ্মীরের বুকিং বাতিল করেছেন আগেই। লেহ-লাদাখ নিয়ে দু’তিন দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন। তার দাবি, লেহ বিমানবন্দর বন্ধ বলে খবর। ফলে এখন লক্ষাধিক টাকা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাই জোরালো হচ্ছে।
ভ্রমণ সংস্থা কুণ্ডু স্পেশ্যালের সৌমিত্র কুণ্ডুর বক্তব্য, আপাতত কাশ্মীরের সব বুকিং বাতিল হচ্ছে। পর্যটকদের পুরো টাকা ফেরত দিচ্ছেন তারা।
অন্য দিকে, ৭ ও ১৪ মে এর লেহ-লাদাখের বুকিং বাতিল হয়েছে। ২১ ও ২৮ তারিখ নিয়ে দিন তিনেকের মধ্যে সিদ্ধান্ত হবে। এই ক্ষেত্রে তিন হাজার ৬০০ রুপি কেটে তারপর পর্যটকদের রুপি ফেরত দেওয়া হচ্ছে।
দেবজিৎ বলেন, এপ্রিল-জুনই সারা বছরের ব্যবসার ৪০-৪৫ শতাংশ দেয়। তা উধাও হল।
সৌমিত্র যদিও আশাবাদী আগামী মাসে হয়তো পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে।
অরবিট ট্যুরিজমের কর্ণধার অমিতাভ সরকার জানান, কাশ্মীর, লেহ-লাদাখ, হিমাচল, পাঞ্জাব, রাজস্থানের মোটামুটি সব বাতিল হয়ে যাচ্ছে। তারাও গ্রাহকভেদে টাকা ফেরত দিচ্ছেন কিংবা ক্রেডিট নোট দিচ্ছেন। যদিও তার মতে, সকলেই অবস্থাটা বুঝতে পারছেন। ফলে বাতিল কিংবা টাকা ফেরত নিয়ে পর্যটকদের সঙ্গে কোনও ঝামেলা নেই। অনেকে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে চার্জও দিচ্ছেন।
অন্যদিকে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলো যেমন কাতার, দুবাই, ভিয়েতনাম এবং শ্রীলঙ্কায় বিদেশী পর্যটক ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ কাতারে বিদেশী পর্যটক ৪৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ভারতের পর্যটন খাতকে পুনরুদ্ধার করতে আরও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপড়েনে ভারতের পর্যটন ও চিকিৎসা ব্যবসায়ও বড় ধরনের ধস নেমেছে। পর্যটন ও চিকিৎসার মাধ্যমে ভারতের ডলার আয়ের অন্যতম উৎস ছিল বাংলাদেশ। আবার ভিসা-সংক্রান্ত জটিলতায় হাসপাতালগুলোও বাংলাদেশি রোগী পাচ্ছে না। এ অবস্থায় মার্কিন ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রা রুপির মান সর্বকালের তলানিতে পৌঁছেছে। দিন যত গড়াচ্ছে ভারতের ব্যবসা-বাণিজ্যে পর্যটন খাতে ধস ততই বাড়ছে।