দক্ষিণ-পূর্ব গোলার্ধ্বে অবস্থিত দেশ নিউজিল্যান্ড একটি শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত দেশ হিসেবে সুপরিচিত। পৃথিবী জুড়েই অভিবাসীদের জন্য নিউজিল্যান্ড অন্যতম একটি কাঙ্খিত গন্তব্যস্থল। প্রতিবছর স্কিল-বেজড বা পেশাগত দক্ষতার ভিত্তিতে মাইগ্রেশনের মাধ্যমে হাজারো মানুষ এই দেশটিকে তাদের স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে বেছে নিচ্ছে।
পেশাগত দক্ষতার পাশাপাশি ব্যবসায়ী কিংবা উদ্যোক্তাদের জন্যও দেশটির সরকার সুযোগ রেখেছে বিনিয়োগের মাধ্যমে অভিবাসনের। বিগত চার বছর যাবত প্রচলিত নতুন এই খাতের মাধ্যমে একজন উদ্যোক্তা ব্যবসায়ী নিউজিল্যান্ডে সপরিবারে অভিবাসনের অবকাশ পেতে পারেন। এ পদ্ধতির নাম অন্ট্রেপ্রনার ওয়ার্ক ভিসা, অর্থ্যাৎ উদ্যোক্তা-কাজের ভিসা।
এ ভিসা হলো নিউজিল্যান্ডে ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করে নিজ মালিকানাধীন সেই প্রতিষ্ঠানেই কাজ করতে ইচ্ছুক মানুষদের জন্য চমৎকার একটি সুযোগ। এ ভিসা পাওয়ার জন্য একটি বিস্তারিত ব্যবসায়িক পরিকল্পনা দাখিল করতে হবে এবং বিনিয়োগের জন্য নিজের মালিকানায় ন্যুনতম এক লক্ষ নিউজিল্যান্ড ডলার (প্রায় সত্তর হাজার আমেরিকান ডলারের সমপরিমাণ) অর্থ থাকতে হবে।
এ ভিসা পাওয়ার পর যে কেউ চাইলে নিউজিল্যান্ডে বসবাস করে কিংবা স্থায়ীভাবে বসবাস না করেই সে দেশে কোন চালু ব্যবসা ক্রয় করতে পারবেন অথবা নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। ভিসাপ্রাপ্ত ব্যক্তি নিয়মিত ব্যবসা করার মাধ্যমে পরবর্তীতে সেদেশের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার সুযোগও পেতে পারেন।
নিউজিল্যান্ডের সরকারী ইমিগ্রেশন বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রদত্ত তথ্য মোতাবেক, ভিসা পাওয়ার শর্তগুলো পূরণ করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন করলে প্রথমে এক বছর মেয়াদের জন্য কাজের ভিসা প্রদান করা হয়। এ সময়কালকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠা এবং শুরু করার সময় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ পর্যায়ের নাম হলো স্টার্ট আপ স্টেজ।
পরবর্তীতে যখন ব্যবসা চলমান থাকবে তখন আরো দুই বছরের বর্ধিত সময়ের জন্য ভিসা প্রদান করা হয়। যখন এটা প্রমাণিত হবে যে অন্ট্রোপ্রনার ওয়ার্ক ভিসায় আগত ব্যক্তিটি তার ব্যবসা চালু করার জন্য যথাযথ উদ্যোগ নিয়েছে এবং ব্যবসা করে যাচ্ছে, তখন দ্বিতীয় পর্যায়ের ভিসা মঞ্জুর করা হবে। এ পর্যায়ের নাম হলো ব্যালেন্স স্টেজ।
এ ভিসা প্রাপ্ত ব্যক্তিরা নিজ স্বামী/স্ত্রী এবং অনুর্ধ্ব ১৯ বছর বয়সী পর্যন্ত সন্তানদেরকে সাথে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন।
উপরন্তু আবেদনকারীর ব্যবসাক্ষেত্র যদি তথ্যপ্রযুক্তি কিংবা বিজ্ঞানচর্চার সাথে সম্পৃক্ত হয় এবং তিনি এই প্রস্তাবিত ব্যবসার মাধ্যমে উঁচ্চ হারে উৎপাদন অথবা রফতানির বিষয়টি যথাযথভাবে প্রমাণ করতে পারেন তাহলে এক লাখ নিউজিল্যান্ড ডলার বিনিয়োগের শর্তটিতে ছাড় দেয়া হয়।
তবে ভিসার জন্য আবেদনের পূর্ববর্তী পাঁচ বছর সময়কালেরে ভেতরে আবেদনকারী যদি আর্থিক দেউলিয়া হয়ে থাকে কিংবা কোন ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসার সাথে জড়িত হয়ে থাকে তাহলে এ ভিসা দেয়া হয় না। এছাড়াও কোন সময়ে কোন আর্থিক প্রতারণা অথবা আর্থিক অন্যায়কর্মের সাথে জড়িত থাকার ইতিহাস থাকলেও এ ভিসা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অযোগ্য বিবেচনা করা হয়।
মোদ্দাকথায় ব্যবসার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ একজন ব্যক্তি, যিনি সেদেশে গিয়ে নিজ ব্যবসায় আত্মকর্মসংস্থান করতে চান এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় পুঁজি যোগান দেয়ার সামর্থ্য রাখেন, এমন মানুষদের জন্য সপরিবারে নিউজিল্যান্ডের অভিবাসী হতে এই ভিসা সাহায্য করে।
মোদ্দাকথায়, নিম্নোল্লিখিত গুরুত্বপূর্ণ শর্তগুলো পূরণ করে একজন উদ্যোক্তা নিউজিল্যান্ডে এ ভিসাটি পেতে পারেন।
অন্ট্রেপ্রনার ওয়ার্কিং ভিসায় নিউজিল্যান্ডে থেকে ধারাবাহিকভাবে যদি কেউ ২ বছর সময়কাল সফলতার সাথে তার নিজ ব্যবসা পরিচালনা করেন যার মাধ্যমে দেশটির অর্থনীতি সুফল অর্জন করেছে, এমতাবস্থায় তাকে অন্ট্রেপ্রনার রেসিডেন্স ক্যাটাগরিতে নিউজিল্যান্ডের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার সুযোগ দেয়া হবে। তবে কারো বিনিয়োগ যদি পাঁচ লক্ষ নিউজিল্যান্ড ডলার কিংবা এর বেশি হয় এবং তার পরিচালিত ব্যবসায় অন্ততপক্ষে তিনজন নিউজিল্যান্ডের নাগরিক অথবা স্থায়ী বাসিন্দার ফুল টাইম কর্মসংস্থান হয় তাহলে সেক্ষেত্রে তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে ছয় মাস পরেই স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার জন্য আবেদন করার সুযোগ দেয়া হবে।
এসব শর্তাবলী বিবেচনায় আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান এবং ব্যবসায়িক পরিকল্পনা আছে এমন ব্যক্তিদের জন্য অন্ট্রেপ্রনার ওয়ার্ক ভিসা নিউজিল্যান্ডের স্থায়ী নাগরিক এবং পরবর্তীতে নাগরিক হওয়া সুযোগ করে দিতে পারে।