বেকার যুবকের ৫০ লাখের গাড়ি! স্রেফ ইউটিউব থেকে লাখ লাখ টাকা আয় করেন হর্ষ
আপডেট সময়
সোমবার, ৬ মার্চ, ২০২৩
২০২০ সালের মার্চ মাস। করোনা অতিমারির ধাক্কায় দেশ জুড়ে জারি করা হয়েছিল লকডাউন। এর ধাক্কায় বিপাকে পড়েছিলেন দেশের বহু মানুষ। আবার করোনা মোকাবিলায় এই কঠোর বিধিনিষেধ অনেককেই আগামী দিনের দিশা দেখিয়েছে। কারও আবার কপাল খুলে গিয়েছে। ঠিক যেমনটা হয়েছে বিহারের যুবক হর্ষ রাজপুতের।
লকডাউনের সময় ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দিদশা কাটাতে কাটাতেই জীবনের নতুন দিশা খুঁজে পেয়েছিলেন হর্ষ। ক্যামেরার সাহায্যে নানা মুহূর্ত ফ্রেমবন্দি করে ইউটিউবে আপলোড করতেন তিনি। ধীরে ধীরে তাঁর হাতে তৈরি সেই ভিডিয়ো ভাইরাল হল সমাজমাধ্যমে। হয়ে গেলেন ইউটিউবার। তার পরই রাতারাতি ধনী হয়ে গেলেন এই যুবক।
ইদানীং ইউটিউবারের সংখ্যা নেহাত কম নয়! রোজগার করতে অনেকেই ইউটিউবার হিসাবে নিজেকে মেলে ধরছেন। তাঁদের অনেকেই সফল। তবে এই ইউটিউবারদের ভিড়ে আলাদা নজর কেড়েছেন হর্ষ। বিহারের একটি ছোট শহরের যুবক কী ভাবে রাতারাতি ধনী হলেন, সেই কাহিনিই তুলে ধরা হল এই প্রতিবেদনে।
বিহারের ঔরঙ্গাবাদের জাসোইয়ার বাসিন্দা হর্ষ। ডিএভি পাবলিক স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষের পর মগধ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাশ করেন তিনি।
স্নাতক পাশ করার পর হর্ষের বয়সি অন্য যুবকরা সকলে সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন। কিন্তু সেই পথে পা বাড়াননি হর্ষ। সেই সময় দিল্লিতে চলে গিয়েছিলেন তিনি।
দিল্লিতে থাকাকালীনই এক বন্ধুর সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। হর্ষের ওই বন্ধু সেই সময় নাটক করতেন। নাটক দেখার জন্য হর্ষকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তাঁর বন্ধু। সেই মতো তা দেখতেও গিয়েছিলেন হর্ষ।
বন্ধুর নাটক দেখার পরের দিন সকালেই হর্ষ স্থির করেন যে, তিনিও নাটকের দলে যোগ দেবেন। যেমন ভাবনা,তেমন কাজ। যোগ দিলেন দিল্লির ‘অস্মিতা থিয়েটার’ দলে। পরে দিল্লিতে একাধিক নাট্য নির্দেশকের সঙ্গে কাজ করেন। এর পর পাড়ি দেন মুম্বই।
কিন্তু মুম্বইয়ে তেমন কিছু করে উঠতে পারেননি হর্ষ। সাল ২০২০। সেই সময়ই করোনাভাইরাসের সংক্রমণের দাপটে দেশে জারি করা হল লকডাউন।
লকডাউন শুরুর আগের দিন বিহারে নিজের বাড়িতে ফেরেন হর্ষ। লকডাউনের ধাক্কায় কয়েক মাস ঘর থেকে বেরোতেই পারেননি তিনি। হর্ষের কাছে একটি ক্যামেরা ছিল। সেই ক্যামেরার সাহায্যেই দিল্লিতে থাকাকালীন বেশ কিছু স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি বানিয়েছিলেন হর্ষ। তবে সেগুলির ‘ভিউ’ (কত সংখ্যক দর্শক দেখেছেন) তেমন বেশি ছিল না।
লকডাউনে বাড়িতে বসে দিল্লিতে থাকাকালীন ওই স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি বানানোর কথা মনে পড়ে হর্ষের। ঠিক করেন, তিনি আবার ভিডিয়ো বানাবেন। এই ভাবনা থেকেই এক রিপোর্টারের চরিত্রকে নিয়ে মজার মজার ভিডিয়ো তৈরি করতে থাকেন হর্ষ।
এমন মজার ভিডিয়ো ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করে ভাল ভিউ পান হর্ষ। এর পরই বানান দ্বিতীয় ভিডিয়ো। যা ভাইরাল হয়ে যায়। পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা।
২০২০ সালের অগস্ট থেকে ২০২১ সালের এপ্রিল— এই ৮ মাসের মধ্যে হর্ষের ৩টি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছিল। তাঁর একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ভিডিয়োর ভিউ ছিল ৩ কোটিরও বেশি।
তবে ইউটিউবে তাঁর প্রথম ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পর আরও অনেক ভিডিয়ো বানিয়েছিলেন, যেগুলি তেমন ভিউ পায়নি। ফলে ইউটিউব থেকে আয়ও হয়নি তাঁর। এক বার তাই ঠিক করেছিলেন আর ইউটিউবে ভিডিয়ো বানাবেন না। কিন্তু আবার একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হতেই নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন হর্ষ।
ইউটিউবে ভিডিয়ো তৈরি করলে, ভিউয়ের নিরিখে তা থেকে টাকা রোজগারও করা যায়। এমনকি, মোটা অঙ্কের টাকা রোজগার করা যায়। হর্ষও এই ইউটিউবের হাত ধরেই ধনী হয়েছেন।
‘আজতক’ সূত্রে খবর, ইউটিউবে ভিডিয়োর মাধ্যমে মাসে ৮ লক্ষ টাকা আয় করেন হর্ষ। ২০২২ সালের জুন মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত প্রতি মাসে গড়ে সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা আয় করেছিলেন হর্ষ।
হর্ষের বাবা বিহার পুলিশের হোমগার্ড হিসাবে কর্মরত। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান তিনি। তবে এখন তাঁর বাড়ির সামনে রাখা থাকে বিলাসবহুল অডি গাড়ি।
গত বছরের নভেম্বর মাসে হর্ষের একটি ছবি প্রকাশ্যে এসেছিল। তাঁর বাড়ির সামনে রাখা ঝকঝকে নতুন অডি গাড়ি। আর তার পাশেই রয়েছে গরু। এই ছবিটি ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল সমাজমাধ্যমে। যদিও এই ছবির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।
শোনা গিয়েছে, ৫০ লক্ষ টাকা দামে ওই অডি গাড়িটি কিনেছেন হর্ষ। সবটাই সম্ভব হয়েছে ইউটিউবের দৌলতে। ইউটিউব থেকে রোজগারের টাকাতেই ওই দামি গাড়ি কিনেছেন হর্ষ। এই ইউটিউবারের এ হেন উত্থান বেশ চমকপ্রদ। গতে বাঁধা পথে না গিয়ে অনেক কিছু করেই জীবনকে সুন্দর ভাবে সাজানো যায়, হর্ষের কাহিনি যেন তেমন কথাই বলছে।