বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৫ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
আওয়ামী পলাতকদের পাচার করা শত কোটি টাকার খোঁজে ভারতে ইডির ১৭ স্থানে অভিযান দুবাইতে প্রথম আকাশযান ভের্টিপোর্ট শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল ১৫ বছর পরিচালনার দায়িত্ব পাচ্ছে জাপানের ৬ প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ কোরিয়ায় ১০ লাখ শ্রমিক প্রয়োজন লিথুয়ানিয়ায় উচ্চশিক্ষা: ৩৫০টির বেশি প্রোগ্রামে পড়াশোনা, স্কলারশিপের সুবিধা ফিটস এয়ারে বড় ছাড়, ২৮ হাজারে শ্রীলঙ্কার রিটার্ন ফ্লাইট সাধ্যের মধ্যে আন্দামান : যে কথা বলে না কেউ ক্রোয়েশিয়ায় কাজ করার জন্য ভ্রমণ বা স্থায়ী বসবাসের সুযোগ অনেকের কাছে আকর্ষণীয় আইইএলটিএস ছাড়াই স্কলারশিপে মাস্টার্স-পিএইচডি চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ে শাওনকে কিভাবে প্রেম নিবেদন করেছিলেন হুমায়ূন

‘বুর্জ আল আরব’ সারাবিশ্বের সবচেয়ে বিলাসবহুল হোটেল

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৬ জুন, ২০২৩

বিশ্বের সু-সজ্জিত বিলাসবহুল হোটেলগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি এবং একমাত্র সাত তারকা মানের হোটেল বলা চলে দুবাইয়ের বুর্জ আল আরবকে। সমুদ্রের তীর থেকে ২৮০ মিটার সুমুদ্রের ভেতরে কৃত্রিম একটি দ্বীপের উপর এটি নির্মাণ করা হয়েছে। আরবের পুরনো পালতোলা জাহাজের কাঠামোর অনুকরণে বানানো ভবনটি আরবীয় ঐতিহ্যের প্রতিনিধি।

আরব-বিশ্বের অন্যতম ধনাঢ্য ব্যক্তি আরব আমিরাতের শাসক শেখ নাহিয়ানের পারিবারিক সম্পত্তি বুর্জ আল আরব। ব্রিটিশ ডেইলি টেলিগ্রাফ-এর বিলাসবহুল ভ্রমণ বিষয়ক ম্যাগাজিন,আলট্রা ট্রাভেল-এর পাঠকদের ভোটে ‘বুর্জ আল আরব’ পৃথিবীর একটি বিলাসবহুল হোটেল হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে।

হোটেলটি ‘বেষ্ট হোটেল ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ এবং বেষ্ট হোটেল ইন দ্য মিডল ইষ্ট’ ক্যাটাগরিতে খুব সম্মানজনক দুটি পুরস্কার পেয়েছে। ভ্রমণ লেখক এবং সমালোচকদের কাছ থেকে এই হোটেলটি প্রায়শই ‘বিশ্বের প্রথম সাত তারকা হোটেল’ এবং ‘বিশ্বের সবচেয়ে বিলাসবহুল হোটেল-এর তকমা পেয়ে থাকে।

মরুর দেশ দুবাই নয়, বিলিয়ন ডলারের ‘বুর্জ আল আরব’ সারাবিশ্বের সবচেয়ে বিলাসবহুল হোটেলের নাম। বুর্জ শব্দটার বাংলা অর্থ ‘স্তম্ভ’ কিংবা ইংরেজিতে ‘Tower’, বুর্জ আল আরব এর সম্পূর্ণ অর্থ দাঁড়ায় ‘আরবের স্তম্ভ’, সত্যিই ভবনটি জুমেরিয়া বীচের পাড়ে আরবের বিলাস ও বিত্ত-বৈভবের প্রতীকী স্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

বিলিয়নিয়ারদের অবকাশ কেমন হয় তা ভেবে কখনও অবাক লেগেছে কি? আরব ধনাঢ্যদের বিলাসবহুল অবকাশ আমাদের কাছে একটা তীব্র কৌতূহল এবং অলীক স্বপ্নের মতো একটা বিষয়। তবে, দুবাইয়ের বুর্জ আল আরব সম্ভবত আমাদের মতো সাধারণদের কাছে বিলিয়নিয়ারের অবকাশ যাপনের সবচেয়ে কাছের সুযোগ।

সমুদ্রের বুকে কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করে হোটেল ভবন নির্মাণে স্থপতি ছিলেন টম রাইট। যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অ্যাটকিনসন ছিল ভবনটির স্থাপত্য পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান। নির্মাণ ঠিকাদারি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকান কন্ট্রাক্টর মুরে এন্ড রবার্টস্। হোটেলটির ইন্টেরিয়র নকশা করেছেন কেএসি ইন্টারন্যাশনালের ডিজাইন প্রিন্সিপাল খুয়ান চিউ।

আরবদের ঐতিহ্যবাহী ‘দাউ’ নামক নৌযানের মাস্তুলের সাথে সাদৃশ্য রেখে এর কাঠামো নকশা করা হয় বিলিয়ন ডলারের এই হোটেলটিতে। যার মূল মাস্তুল কাঠামো থেকে ইংরেজি ‘V’ অক্ষরের মত এর কাঠামো দু’পাশে বিস্তৃত। বিলাসিতার বাড়াবাড়িতে পরিপূর্ণ বুর্জ জগতের অভিজাত রোলস রয়েস শোফার দিয়ে ভরা, ব্যক্তিগত খানসামা, হার্মস টয়লেটরিজের ১৪ পিসের সেট! ২৪ ক্যারেটের সোনায় মোড়া হোটেল। বুর্জ কর্তৃপক্ষ বলেছে তাদের অতিথি-স্টাফের অনুপাত ৬:১।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই-এর জুমেরিয়া বিচের পাশে সমুদ্রের মাঝে একটি কৃত্রিম দ্বীপের ওপর  ১৯৯৪ সালে বুর্জ আল আরবের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল যা ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে উদ্বোধন করা হয়। এটি ৩২১ মিটার (১০৫৩ ফুট) লম্বা এবং ২৮ তলা বিশিষ্ট হোটেলটির আয়তন ৭০ হাজার বর্গমিটার। সব মিলিয়ে কাঠামোগুলোর আবদ্ধ স্থানটি ত্রিভুজাকৃতির, ত্রিভুজের তিন-বাহুর মধ্যবর্তী স্থলে আছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ আট্রিয়াম।

বিশাল এই ভবনটি নির্মাণে লেগেছে ৭০ হাজার ঘনমিটারেরও বেশি কংক্রিট এবং ৯ হাজার টন স্টিল। বুর্জ আল আরব হোটেলের সমুদ্রের তলদেশের ভিত্তি নির্মাণ করতে ৩ বছর সময় লেগেছে। সমুদ্রের মাঝখানে এর ভিত্তির স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে সমুদ্রের নিচের বালির মধ্যে ২৩০টি ৪০ ফুট দীর্ঘ কংক্রিটের খুঁটি প্রবেশ করানো হয়।

হোটেলটির ৮৭ হাজার স্কয়ার ফিট ২২ ক্যারেট সোনার পাত দিয়ে মোড়ানো, প্রায় ৭২ হাজার বর্গমিটার ৩০ ধরনের পাথর এবং মার্বেলে ঢাকা। লবিতে একটি ত্রিমাত্রিক কৃত্রিম ঝর্ণা স্থাপিত আছে যার আকৃতি ইসলামিক স্টারের মতো, এর একেকটি কোণা হোটেলটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থলের দিকনির্দেশক করে-তিনটি রেস্টুরেন্ট, গেস্ট-রুমের মধ্যকার করিডোর।

একজন পরিচারক প্রথমে অতিথিদের একটি কক্ষে রেখে 'মারহাবা ওয়েলকাম' বা গোলাপজল, ঠান্ডা তোয়ালে, খেজুর এবং আরবি কফি দিয়ে স্বাগত জানাবে এবং বুকিং পরীক্ষা করতে পাসপোর্ট নিয়ে যাবে। পরীক্ষা করে সরাসরি কক্ষে নিয়ে যাবে।
একজন পরিচারক প্রথমে অতিথিদের একটি কক্ষে রেখে ‘মারহাবা ওয়েলকাম’ বা গোলাপজল, ঠান্ডা তোয়ালে, খেজুর এবং আরবি কফি দিয়ে স্বাগত জানাবে এবং বুকিং পরীক্ষা করতে পাসপোর্ট নিয়ে যাবে। পরীক্ষা করে সরাসরি কক্ষে নিয়ে যাবে। ছবি : বিজনেস ইনসাইডার

হোটেল ভবনটি বিশালাকৃতির হওয়া সত্ত্বেও এতে মাত্র ২৮টি ফ্লোর আছে, প্রত্যেকটি ফ্লোর দোতলা। সবচেয়ে ছোট স্যুইটটির আকৃতি ১,৮১৯ স্কয়ার ফিট এবং সবচেয়ে বড় স্যুইটটির আকৃতি ৮,৩৯৬ স্কয়ার ফিট। হোটেলটিতে মোট ২০২টি কক্ষ রয়েছে। প্রতিটি স্যুট প্রাচ্যের আভিজাত্য আর পাশ্চাত্যের প্রযুক্তির মিশেলে তৈরি।

দুদশক আগে হোটেলটি খোলার পর থেকে বুর্জ আল আরব একের পর এক বিলাসিতার জন্যে প্রশংসিত হয়েছে। মার্বেলে মোড়ানো সাদা টুসকান কলাম এবং সর্পিলাকার সিঁড়িগুলো ক্লাসিসিজম এবং আর্ট ন্যূভো’র অনন্য দৃষ্টান্ত। স্পা-কর্নারের সমান একেকটি বাথরুম মোজাইক করা মেঝে আর দেয়াল আরবি জ্যামিতিক ফর্মের প্রভাবে পেয়েছে শিল্প-নিপুণ ছোঁয়া, সে আরবি জ্যামিতি’র প্রভাব ভবনের অন্যসব কোণেও খুঁজে পাওয়া যায়।

হোটেলটির অতিথীদের দেয়া হয় এক বিশেষ ধরনের কার্ড যা স্পর্শ করলেই সোনালী রঙের দরজাটি খুলে যায়। রিমোট কন্ট্রোলে চলে হোটেল স্যুটের ভেতরের দরজা, জানালার পর্দা খোলার কাজ। টিভি, টেলিফোন, ইন্টারনেট, লাইব্রেরিসহ হোটেলের ঘুমানোর জন্য খাটটিও ঘূর্ণায়মান।

সাত তারকা হোটেল হিসেবে খ্যাত ‘বুর্জ আল আরব’-এর প্রতিটি রুমে রয়েছে ২৪ কায়েৎ স্বর্ণের আইপ্যাড। হোটেলটির নানা তথ্যাদিসহ বিভিন্ন সেবাসমূহ আইপ্যাডে দেয়া থাকবে। হোটেলের রেস্তোরাঁগুলোর খাবার মেনুসহ সব ধরনের সুবিধাদি আইপ্যাড থেকে একজন অতিথি জেনে নিতে পারবেন। এটি অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন ডিজাইন এবং অতুলনীয় গুণগত মানের যা অতিথিদের সন্তুষ্ট করবে।

যদি কোন অতিথি হোটেলে থাকাকালীন ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের আইপ্যাড নিজের করে পেতে চান তবে তাকে এর দাম অতিরিক্ত গুণতে হবে। স্বর্ণের আইপ্যাড ছাড়াও স্বর্ণের আইপ্যাড মিনি, গোল্ড আইফোন ৫ এবং গোল্ড ব্ল্যাকবেরি কিউ টেনও কিনতে পারবেন বিলাসী অতিথিরা।

নাবিলা বুশরা

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com