শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৮ পূর্বাহ্ন

বুড়িগঙ্গার তীরে অপরূপ রেস্তোরাঁ

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

গত কয়েকদিন আগে গিয়েছিলাম সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। সঙ্গে ছিল বন্ধু সানজানা। লঞ্চ ঘাটে আড্ডা দিতে দিতে বিকেল থেকে সন্ধ্যা হয়ে গেল। এর মধ্যেই পেটের ক্ষুধা কিছুটা বেড়ে গেল। আমার আবার সন্ধ্যায় নাশতা না করলে চলে না। নাশতা করার জন্য খাবারের খোঁজ করতে লাগলাম। এদিক-ওদিক তাকাতেই চোখে পড়লো বিশাল এক রেস্তোরাঁ।

যা টার্মিনাল থেকেই দেখা গেলো। একদম বুড়িগঙ্গার কোল ঘেঁষে একটা সুউচ্চ ভবনের ছাদে রেস্তোরাঁটি। দূর থেকেই এর আলো ঝলমল করছে। ভাবলাম এখানেই কিছু খাবো। যার অবস্থান ঢাকার সদরঘাটের বিআইডব্লিউটিএ টার্মিনাল ভবন-২ এর ছাদের ওপর। নাম ‘বুড়িগঙ্গা রিভারভিউ রেস্টুরেন্ট’।

jagonews24

টার্মিনাল ভবন-২ এর শেষ গেট দিয়ে বের হতেই চোখে পড়লো প্রবেশপথ। এরপর লিফট দিয়ে উঠে পড়লাম। লিফট থেকে নামার পরেই অনেকটা দুবাইয়ের ফিল। ফ্লোরটির এক কোণে মরুভূমির প্রাণী উটের প্রতিকৃতি। তার সামনে খেজুর গাছের ছবি ও পেছনে চাঁদের অবয়ব। দেখেই ছবি তোলার লোভ সামলাতে না পেরে চলে গেলাম ছবি তুলতে। উটের রশি ধরে দাঁড়িয়ে তুললাম বেশ কয়েকটি ছবি। ছবিগুলো তুলে দিয়েছে সানজানা।

এরপর এ ফ্লোর থেকে সিঁড়ি ডিঙিয়ে উঠলাম রুফটপে। প্রথমেই চোখে পড়লো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিশাল রেস্তোরাঁ। আমরা সেখানে না বসে ভেতর দিয়ে চলে গেলাম খোলা অংশে মানে রুফটপে। মূলত রেস্তোরাঁটির মূল সৌন্দর্য এই খোলা অংশে। আমরা যখন রেস্তোরাঁয় পৌঁছেছি; তখন একদম অন্ধকার। বাইরের খোলামেলা পরিবেশ থেকে দেখা যাচ্ছে টার্মিনালের সারি সারি লঞ্চ। শোনা যাচ্ছে জাহাজিদের হাঁকাহাঁকি, লঞ্চের সাইরেন, ঢেউয়ের শব্দ, বুড়িগঙ্গায় অসংখ্য ছোট-ছোট নৌকা। মাঝে মাঝে আচমকা শীতল বাতাস এসে প্রাণটা জুড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে। নদীর মধ্যে রং-বেরঙের বাতি জ্বলছে। একদম অন্যরকম একটি দৃশ্য।

jagonews24

সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় লাগছে ছাদের রেলিং। নৌকার পালের মতো সাদা পাল দিয়ে রেলিংটি সাজানো। মনে হচ্ছে বুড়িগঙ্গার তীরে শত শত পাল তোলা নৌকা। রোদ-বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য অনেক উঁচুতে আছে ছাউনি। আরেকটি সুন্দর বিষয় হচ্ছে সবুজ। রেস্তোরাঁটির সব জায়গা সবুজে ঢাকা। বুড়িগঙ্গার তীরে এমন আয়োজন সত্যিই মনোমুগ্ধকর।

এসব দেখতে দেখতে মনের ক্ষুধা মিটলেও মেটেনি পেটের ক্ষুধা। তাই রেলিংয়ের কর্নারের একটা টেবিলে বসলাম। কিছুক্ষণ বসতেই চলে এলেন ওয়েটার। মেন্যু কার্ড দেখে সানজানার জন্য অর্ডার দিলাম একটা পেস্ট্রি কেক। যার দাম মোটামুটি পরিমিতই ছিল। তিনশ পঞ্চাশ টাকা। সাথে অর্ডার দিলাম স্মোকি ফ্রায়েড চিকেন উইংস উইথ হানি গার্লিক সস। দাম খেয়াল নেই। মনে হয় ৬০০-৭০০ টাকা। এরপর দুজনের জন্য দুটি ক্যাপাচিনো, যার দাম ছয়শ টাকা। তবে মেন্যু কার্ড দেখে যা মনে হলো, অন্য সব রেস্তোরাঁর মতোই খাবারের দাম।

কফিতে চুমুক দিতে দিতে খেয়াল করলাম এই ভরসন্ধ্যায় থইথই করছে মানুষ। আর তা যেন সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। রেস্তোরাঁ থেকে জানতে পারি, ২৪ হাজার বর্গফুটের এই বিশাল রেস্তোরাঁয় একসঙ্গে ৬০০ জন মানুষ খাবার খেতে পারবেন। এছাড়া জন্মদিন, বিয়ে ও সামাজিক অনুষ্ঠানও করতে পারবেন। অফিস মিটিং, কনফারেন্স বা পারসোনাল মিটিংয়ের জন্যও আছে দারুণ সব ব্যবস্থা।

jagonews24

রেস্তোরাঁয় দেশি খাবারের পাশাপাশি আছে ইন্ডিয়ান, চাইনিজ, অ্যারাবিয়ান, থাই খাবারসহ দেশি-বিদেশি খাবার। এগুলো রান্নার জন্য আছে দেশি-বিদেশি প্রায় ত্রিশজন রাঁধুনি।

প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত অতিথিদের জন্য উন্মুক্ত থাকে রেস্টুরেন্ট। ভোজনরসিকরা ও প্রকৃতিপ্রেমীরা যে কোনো সময় চলে আসতে পারেন এখানে। আর হ্যাঁ, শিক্ষার্থী এবং চাকরিজীবীদের জন্য রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে ৩৬০ টাকায় দুপুরের খাবার পাওয়া যায়। ৩৬০ টাকার এই প্যাকেজের মধ্যেই খাবার, পানীয়সহ সবকিছু অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com