দ্য কাপেলা ব্যাংককের শুরুটা মোটেই স্বস্তিদায়ক ছিল না। কারণ এর যাত্রা শুরু হয় ২০২০ সালে, করোনা মহামারির প্রথম বছরে। স্বাভাবিকভাবেই ভ্রমণের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন খাত ও পর্যটনশিল্প কঠিন একটি সময় পার করছিল তখন। কিন্তু এর চার বছরের মাথায় হোটেলটির যা অর্জন, তা চোখ কপালে তুলবে যে কারও।
চাও ফ্রায়া নদীর দিকে মুখ করে থাকা এই প্রমোদ নিবাস বিশ্বের সেরা ৫০ হোটেলের তালিকায় এক নম্বর স্থান দখল করে নিয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে লন্ডনে এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশ করা হয়নি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ভোটারের সম্মিলিত দৃষ্টিভঙ্গির ফলাফল বলা চলে এই তালিকাকে। এদের মধ্যে রয়েছে ভ্রমণ সাংবাদিক, হোটেল মালিক এবং ভ্রমণ বিশেষজ্ঞরা। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ‘৫০ বেস্ট’ নামের সংস্থাটি সেরা হোটেলের এ তালিকা প্রকাশ করল।
দ্য কাপেলা ব্যাংককের ১০১টি কক্ষের সবকটিই প্রশস্ত এবং আলো-বাতাসপূর্ণ। তবে এর নদীর ধারের ভিলা, যার সবকটিতেই ব্যক্তিগত বাগান এবং পুল রয়েছে, যা এই পাঁচ তারকা হোটেল বা রিসোর্টের অনন্য বৈশিষ্ট্য। থাইল্যান্ডের সবচেয়ে পুরোনো এলাকা চারোয়েনক্রাংয়ে অবস্থান এর।
‘আপনি যখন ব্যাংককে আসেন, তখন এটি বিশৃঙ্খল ও কোলাহলপূর্ণ একটি জায়গা।’ লন্ডনের গিল্ডহলে অনুষ্ঠানের পর হোটেলটির জেনারেল ম্যানেজার জন ব্ল্যাঙ্কো সিএনএন ট্রাভেলকে বলেন, ‘কিন্তু আপনি যখন হোটেলটিতে প্রবেশ করবেন, তখন পাখিতে ভরা গাছ ও বাগানের শান্তিময় এক অভয়ারণ্যে চলে আসবেন।’
হোটেলটির বিপণন পরিচালক জোনেফিন পং সিএনএন ট্রাভেলকে জানান, হোটেলে তার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা নদীর ধারের বারান্দাটা, যেখানে ছায়া দেয় বাগানের গাছেরা।
তিনি বলেন, ‘দিনে জায়গাটি খুব শান্ত, কিন্তু রাতের বেলায় নৌকাগুলো অতিক্রম করার সময় নদীটি জীবন্ত হয়ে ওঠে।’
মহামারি চলাকালীন হোটেলটি চালু করা এক হিসেবে আশীর্বাদ হয়েছিল বলে জানান ব্ল্যাঙ্কো। তিনি মনে করেন, এটি তাদের প্রতিবেশীদের জানার জন্য সময় দিয়েছে। ‘কোভিড আমাদের থাইদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার এবং উষ্ণ হওয়ার সুযোগ দিয়েছে, যারা হোটেলের চমৎকার গ্রাহক।’
এখন বাকি বিশ্বও হোটেল কিংবা রিসোর্টটিকে আবিষ্কার করেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই বারবার হোটেলটি ভ্রমণে এসেছেন বলে জানান ব্ল্যাঙ্কো।
মজার ঘটনা, দ্য কাপেলা ব্যাংককই থাইল্যান্ডের রাজধানী শহরের সেরা ৫০-এ স্থান করা একমাত্র হোটেল নয়। মান্দারিন ওরিয়েন্টাল ব্যাংকক এবং ফোর সিজনস ব্যাংককের অবস্থান যথাক্রমে ১২ এবং ১৪তম স্থানে। এদিকে দ্য সিয়ামের অবস্থান তালিকায় ২৬-এ।
লন্ডনের ওই রাতটিকে এক কথায় এশিয়ার রাত বলা যাবে। সেরা দশটির সাতটিই এই মহাদেশের। তালিকায় হংকংয়ের দ্য রোজউড আছে তিনে, দ্য আপার হাউস আছে পাঁচে। এদিকে ১৩৭ বছরের পুরোনো র্যাফলস সিঙ্গাপুরের অবস্থান ছয়ে।
মালদ্বীপের সোনেভা ফুশি সেরা হোটেলের তালিকায় আটে থাকার পাশাপাশি জিতেছে লস্ট এক্সপ্লোরার বেস্ট বিচ হোটেল অ্যাওয়ার্ড।
৪৫ তলাবিশিষ্ট বুলগারি টোকিও সেরা হোটেলের তালিকায় ২২তম স্থানে থাকলেও জিতেছে নিক্কা বেস্ট নিউ হোটেল অ্যাওয়ার্ড ২০২৪।
গত বছরের বিজয়ী লেক কোমোর দিকে মুখ করে থাকা ২৪ কামরার ইতালীয় হোটেল পাসাকোয়া এবার হয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা হোটেল। তিন হাজার ডলার রাতের শেভাল ব্লঙ্ক এবার তালিকায় ওঠে এসেছে চারে। সেরা পঞ্চাশে ফ্রান্সের এই রাজধানী শহরের আরও দুটি হোটেলের স্থান হয়েছে।
আরব আমিরাতের দুবাইয়ের আটলান্টিস দ্য রয়েলের অবস্থান তালিকার ৯ নম্বরে। এদিকে স্বাগতিক শহর লন্ডনের তিনটি হোটেল জায়গা করে নিয়েছে সেরা পঞ্চাশে। এগুলো হলো ক্ল্যারিজেস (১১), র্যাফলস লন্ডন (১৩) এবং কোনাট (৪৬)।
মায়ানদের পবিত্র একটি পুকুর ঘিরে গড়ে ওঠা ম্যাক্সিকান রিসোর্ট শাবলে ইয়কুতুন বিশ্বের সেরা হোটেলের তালিকায় ১৬তে থাকলেও উত্তর আমেরিকায় তার অবস্থান প্রথম। এদিকে নিউইয়র্কের দ্য চার্লি তালিকায় ৩০তম স্থানে থাকলেও মার্কিন মুল্লুকে তার ওপরে নেই আর কোনো হোটেল।
এদিকে ওশেনিয়ার সেরা হোটেল নির্বাচিত হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনের দ্য কেলিলের অবস্থান মূল তালিকায় ২৫।
এদিকে আফ্রিকা মহাদেশের সেরা হোটেল নির্বাচিত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার মাউন্ট নেলসন (২৮)। তালিকায় আফ্রিকার শীর্ষস্থানীয় দুটি হোটেলের অবস্থান মরক্কোর মারকেশ শহরে। এ দুটি হলো লা মামুনিয়া (৩১) ও রয়েল মনসুর (৩৮)