শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৫ অপরাহ্ন

বিশ্বের সাতটি আশ্চর্য: ইতিহাসের সেরা স্থাপত্য নিদর্শন

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪

বিশ্বের সাতটি আশ্চর্য হলো মানুষের সৃষ্ট এমন কিছু স্থাপত্যকীর্তি, যা নির্মাণশৈলী, নান্দনিকতা এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য সারা বিশ্বের মানুষের কাছে বিস্ময়কর এবং মনোমুগ্ধকর হিসেবে বিবেচিত। যদিও প্রাচীন যুগের সাতটি আশ্চর্য বেশিরভাগই আজ ধ্বংস হয়ে গেছে, তবে আধুনিক যুগে বিভিন্ন স্থাপত্যকে নতুন করে সাতটি আশ্চর্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই তালিকা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা অনন্য স্থাপনাগুলোর মাধ্যমে মানব সভ্যতার কৃতিত্ব এবং সৃজনশীলতার উদাহরণ দেয়।

১. চীনের মহাপ্রাচীর (The Great Wall of China)

অবস্থান: চীন
নির্মাণকাল: খ্রিস্টপূর্ব ৭ম থেকে ২য় শতাব্দী
বিশেষত্ব:
চীনের মহাপ্রাচীর পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ প্রতিরক্ষা দেয়াল এবং মানবসৃষ্ট বৃহত্তম স্থাপত্যকীর্তি। প্রাচীন চীনা রাজারা উত্তর থেকে আগত আক্রমণ ঠেকানোর জন্য এই প্রাচীর নির্মাণ করেন। এই প্রাচীর প্রায় ২১,১৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এর নির্মাণশৈলী অবাক করার মতো। চীনের মহাপ্রাচীর বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রতীক এবং প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ পর্যটক এখানে ভ্রমণ করেন।

২. পেট্রা (Petra)

অবস্থান: জর্ডান
নির্মাণকাল: খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দী
বিশেষত্ব:
জর্ডানের পেট্রা প্রাচীন নাবাতীয় রাজ্যের রাজধানী ছিল এবং এটি পাথরের মধ্যে খোদাই করা একটি শহর। শহরটি মূলত পাথরের গুহা, মন্দির, সমাধি এবং স্টেডিয়াম নিয়ে গঠিত। পেট্রার অনন্য স্থাপত্যশৈলী এবং রহস্যময় পরিবেশ এটিকে বিশ্বের অন্যতম আশ্চর্য করে তুলেছে।

৩. ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার (Christ the Redeemer)

অবস্থান: ব্রাজিল, রিও ডি জেনেরিও
নির্মাণকাল: ১৯৩১
বিশেষত্ব:
ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার বিশ্বের সবচেয়ে বড় যিশু খ্রিস্টের মূর্তি, যা ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিও শহরের উপর দাঁড়িয়ে আছে। প্রায় ৩০ মিটার উঁচু এই মূর্তিটি বিশাল পাহাড়ের শীর্ষে অবস্থিত এবং এটি বিশ্বের খ্রিস্টান ধর্মের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। এর উন্মুক্ত হাত ভঙ্গি বিশ্বের সকল মানুষের প্রতি ঐক্য এবং শান্তির প্রতীক।

৪. মাচু পিচু (Machu Picchu)

অবস্থান: পেরু
নির্মাণকাল: ১৫ শতাব্দী
বিশেষত্ব:
মাচু পিচু ইনকা সভ্যতার একটি প্রাচীন শহর, যা আন্দিজ পর্বতমালার চূড়ায় অবস্থিত। ইনকাদের দক্ষ স্থাপত্যকীর্তি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণ মাচু পিচুকে পৃথিবীর অন্যতম আকর্ষণীয় ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে গড়ে তুলেছে। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২,৪০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত, যা একে আরো রহস্যময় করে তোলে।

৫. চিচেন ইতজা (Chichen Itza)

অবস্থান: মেক্সিকো
নির্মাণকাল: খ্রিস্টীয় ৫ম থেকে ১০ম শতাব্দী
বিশেষত্ব:
চিচেন ইতজা মায়া সভ্যতার একটি পুরনো শহর, যা মেক্সিকোর ইউকাটান উপদ্বীপে অবস্থিত। শহরের প্রধান আকর্ষণ হলো কুকুলকানের মন্দির, যা একটি বিশাল পিরামিড আকৃতির মন্দির। মায়াদের জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং গণিতের জ্ঞান এই মন্দিরের স্থাপত্যে ফুটে উঠেছে। এটি মায়া সভ্যতার উন্নতির প্রতীক এবং বিশ্ব ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

৬. রোমের কলোসিয়াম (Colosseum)

অবস্থান: ইতালি, রোম
নির্মাণকাল: খ্রিস্টীয় ৭০-৮০
বিশেষত্ব:
রোমের কলোসিয়াম বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং প্রাচীন এম্ফিথিয়েটার। এটি রোমান সাম্রাজ্যের গৌরব এবং তাদের স্থাপত্যশৈলীর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। কলোসিয়ামে বিভিন্ন গ্ল্যাডিয়েটর লড়াই, নাটক এবং জনসম্মুখে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হতো। আজও, এটি রোমের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ এবং প্রাচীন রোমান সভ্যতার প্রতীক।

৭. তাজমহল (Taj Mahal)

অবস্থান: ভারত, আগ্রা
নির্মাণকাল: ১৬৩২-১৬৫৩
বিশেষত্ব:
মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী মমতাজ মহলের স্মৃতির উদ্দেশ্যে তাজমহল নির্মাণ করেন। এই সাদা মার্বেলের সমাধি সৌধটি বিশ্বের অন্যতম সুন্দর এবং রোমান্টিক স্থাপত্যকীর্তি হিসেবে পরিচিত। এর স্থাপত্যশৈলী, মার্বেলের খোদাই এবং চারপাশের বাগান তাজমহলকে একটি ঐতিহাসিক এবং স্থাপত্যিক বিস্ময় হিসেবে তুলে ধরে।

উপসংহার

বিশ্বের সাতটি আশ্চর্য স্থাপত্য নিদর্শন কেবলমাত্র স্থাপত্যের কীর্তি নয়, বরং মানবজাতির সৃজনশীলতা, ইতিহাস, এবং সংস্কৃতির সাক্ষ্য বহন করে। এই আশ্চর্যগুলো ভ্রমণকারীদের মুগ্ধ করে এবং প্রতিটি স্থাপত্যে ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায়ের ছোঁয়া দেয়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com