কোনো দেশ চারপাশে সাগর-মহাসাগরে ঘেরা। আবার কোনোটি স্থলবেষ্টিত। আশপাশে সাগরের লেশমাত্র নেই। রয়েছে আকাশছোঁয়া ভবন। হাজারো-লাখো মানুষ, ব্যস্ত জনপদ। ভৌগোলিক একটি বিষয়ে এসব দেশের দারুণ মিল রয়েছে। সব দেশই বেশ সমতল। অর্থাৎ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দেশগুলোর উচ্চতা বেশ কম। সেই সঙ্গে এসব দেশের সর্বোচ্চ আর সর্বনিম্ন বিন্দুর মধ্যকার ব্যবধানও সীমিত। কিছু দেশ বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রে বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। একনজরে বিশ্বের সবচেয়ে সমতল ১০ দেশ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক
দক্ষিণ এশিয়ার দেশ মালদ্বীপকে বিশ্বের সবচেয়ে সমতল দেশ ধরা হয়। অর্থাৎ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দেশটির উচ্চতা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে কম। অবাক হলেও সত্য, মালদ্বীপের সর্বোচ্চ জায়গাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৫ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। অন্যদিকে সর্বনিম্ন বিন্দুর অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠের সমান উচ্চতায়। পর্যটকদের কাছে ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্রটি বেশ আকর্ষণীয়। প্রতিবছর হাজারো পর্যটক বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে মালদ্বীপে ছুটি কাটাতে আসেন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর তালিকায় সবার ওপরে রয়েছে মালদ্বীপের নাম। আশঙ্কা করা হয়, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে দুর্যোগপ্রবণ মালদ্বীপ একসময় সাগরে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র টুভ্যালু। অস্ট্রেলিয়া ও হাওয়াই দ্বীপের মধ্যে অবস্থিত টুভ্যালুকে ‘পলিনেশিয়ান’ দেশও বলা হয়। প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে থাকা দেশটির আয়তন মাত্র ২৬ বর্গকিলোমিটার। মালদ্বীপের মতো টুভ্যালুরও সর্বোচ্চ জায়গাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৫ মিটার উঁচুতে। সর্বনিম্ন বিন্দুর অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠের সমান উচ্চতায়। ছোট এই দেশটিও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে রয়েছে। টুভ্যালুর ছোট দুটি দ্বীপ এরই মধ্যে মহাসাগরে প্রায় ডুবতে বসেছে। মহাসাগরের পানির উচ্চতা বাড়তে শুরু করায় দেশটির অনেক অধিবাসী বসবাসের জমি হারাচ্ছেন।
অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে পাঁচটি দ্বীপ ও ২৯টি প্রবাল প্রাচীর নিয়ে গঠিত ছোট্ট দেশ মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ। দেশটির সর্বোচ্চ জায়গাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। সর্বনিম্ন বিন্দুর অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠের সমতলে। দ্বীপরাষ্ট্রটিকে ‘মাইক্রোনেশিয়ার’ অন্তর্গত ধরা হয়। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যেই মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের কিছু অংশ বিলীন হয়ে যেতে পারে।
আয়তনে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট দেশ ভ্যাটিকান সিটি। দেশটির চারপাশে কোনো সাগর-মহাসাগর নেই। ইউরোপের দেশ ইতালির রাজধানী রোমের মধ্যখানে স্থলবেষ্টিত ভ্যাটিকান সিটির অবস্থান। দেশটির আয়তন মাত্র দশমিক ৪৯ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা ৫০০ জনের কম। খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা পোপের আবাস ভ্যাটিকান সিটিতে। তাই বিশ্বের বড় অংশের মানুষের কাছে দেশটির মর্যাদা বেশ উঁচুতে। যদিও ভ্যাটিকানের সবচেয়ে উঁচু জায়গা হিসেবে পরিচিত সেন্ট পিটার্স ব্যাসেলিকা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭৫ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। পোপ এখানেই বসবাস করেন। ভ্যাটিকানের সবচেয়ে নিচু জায়গাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩৩ মিটার ওপরে। অর্থাৎ ভ্যাটিকানের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বিন্দুর মধ্যকার ব্যবধান মাত্র ৪২ মিটার।
পশ্চিম আফ্রিকার ছোট্ট একটি দেশ গাম্বিয়া। আটলান্টিক মহাসাগর ঘেঁষে দেশটির এক দিকে উপকূল রয়েছে। বাকি তিন দিকেই প্রতিবেশী দেশ সেনেগালের অবস্থান। আফ্রিকা মহাদেশের সবচেয়ে সমতল দেশ বলা হয়ে থাকে গাম্বিয়াকে। গাম্বিয়া নদীবিধৌত দেশটির সবচেয়ে উঁচু জায়গাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫৩ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। আর দেশটির সর্বনিম্ন বিন্দুর অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠের সমতলে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা উপকূলের পূর্ব দিকে দ্বীপরাষ্ট্র বাহামার অবস্থান। একের পর এক শক্তিশালী হারিকেনের কারণে দুর্যোগপ্রবণ হিসেবে দেশটির পরিচিতি রয়েছে। যদিও এখানে অনেক বিলাসবহুল রিসোর্ট রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধনীরা এখানে অবকাশ কাটাতে ছুটে আসেন। আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে অবস্থিত বাহামাকে ক্যারিবীয় দেশ বলা হয়। দ্বীপরাষ্ট্রটির সবচেয়ে উঁচু জায়গাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬৩ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। আর দেশটির সর্বনিম্ন বিন্দুর অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠের সমতলে।
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন আর জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর তালিকায় শুরুর দিকের আরেকটি নাম নাউরু। প্রশান্ত মহাসাগরীয় এই দ্বীপরাষ্ট্রটির আয়তন মাত্র ২১ বর্গকিলোমিটার। সেই হিসাবে বিশ্বের অন্যতম ছোট একটি দেশ নাউরু। জনসংখ্যা সাড়ে ১২ হাজারের কিছু বেশি। নাউরুর সবচেয়ে উঁচু জায়গাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭১ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। আর দেশটির সর্বনিম্ন বিন্দুর অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠের সমতলে।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর আরেকটি কিরিবাতি প্রজাতন্ত্র। দেশটির সর্বোচ্চ উঁচু জায়গার নাম বানাবা। জায়গাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮১ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। আর কিরিবাতির সর্বনিম্ন বিন্দুর অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠের সমতলে। জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়তে পারে, এমন দেশগুলোর একটি হচ্ছে এই কিরিবাতি।
মধ্যপ্রাচ্যে ধু ধু মরুভূমির বুকে দাঁড়িয়ে থাকা একটি দেশ কাতার। পারস্য উপসাগরের সুনীল জলরাশি দেশটির উপকূলে আছড়ে পড়ে। জ্বালানি তেলসমৃদ্ধ কাতারের নাম ধনী দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে। উঁচু উঁচু ভবন, ভবনের চোখধাঁধানো নির্মাণশৈলী, আধুনিক গণপরিবহন কাতারের শহরগুলো যে কারও নজর কাড়বে। কাতারের সবচেয়ে উঁচু জায়গাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০৩ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। আর দেশটির সর্বনিম্ন বিন্দুর অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠের সমতলে।
মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ বাহরাইন। কাতারের ঠিক পাশে দেশটির অবস্থান। বাহরাইন মূলত একটি দ্বীপরাষ্ট্র। পারস্য উপসাগরের বুকে বাহরাইনের অবস্থান। অর্ধশত প্রাকৃতিক দ্বীপ ও ৩৩টি কৃত্রিম দ্বীপের সমন্বয়ে বাহরাইন গড়ে তোলা হয়েছে। বাহরাইনের সবচেয়ে উঁচু জায়গাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২২ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। আর দেশটির সর্বনিম্ন বিন্দুর অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠের সমতলে।
তথ্যসূত্র: ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাস