সের ৮৬ বছর বয়সী এক নারী বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক নারী উইন্ডসার্ফার হিসেবে গিনেস রেকর্ড করেছেন৷ তার কাছে বয়স শুধুই একটি সংখ্যা৷ কেফালোনিয়া দ্বীপের এই বাসিন্দা ৪১ বছর বয়সে প্রথম উইন্ডসার্ফিং শিখেছিলেন৷
আনাস্টাসিয়া বলেন, ‘‘যখন সার্ফিং করি, দারুন লাগে! বোর্ডে উঠে আপনি পাল তুলে দেন, ডানা খুলে উড়ে যান, এই বলে যে: ‘ওহ ঈশ্বর, ইঞ্জিন নেই, কিছুই নেই!’ এটা আপনাকে অনেক সঞ্জীবনী শক্তি দেয়, আপনার আত্মা ভরিয়ে দেয়৷”
আনাস্টাসিয়া সবসময়ই খুব অ্যাকটিভ ছিলেন, আর খেলাধুলা পছন্দ করতেন৷ ৪১ বছর বয়সে হঠাৎ করেই উইন্ডসার্ফিং শুরু করেছিলেন৷ তিনি কখনো কারো কাছে উইন্ডসার্ফিং শেখেননি, নিজেই শিখেছেন৷
আনাস্টাসিয়া জানান, ‘‘আমি তখন আমার সাবেক বন্ধুর সঙ্গে ছুটি কাটাতে স্পেনের লাস পালমাস দ্বীপে ছিলাম৷ সে চেয়েছিল আমরা যেন একে অপরকে আরও ভালোভাবে জানতে পারি৷ কিন্তু আমরা বিরক্ত হয়ে উঠেছিলাম৷ দিনগুলো অনেক বড় মনে হচ্ছিল, সময় কাটছিল না, কারণ, সেখানে কোনো খেলাধুলার সুযোগ ছিল না – কিছুই না৷ হঠাৎ দূরে একজনকে উইন্ডসার্ফিং করতে দেখেছিলাম৷ সত্যি বলতে, আমি তখন এর নামই জানতাম না। আমি সেটা প্রথমবার দেখেছিলাম। তখন আমার স্বামীকে বলেছিলাম, যে ঐসময় আমার বন্ধু ছিল, ‘লুইজি! তুমি কি এটা দেখতে পাচ্ছ? এটাই! এটাই আমার জন্য!”
আনাস্টাসিয়া মোটর স্কুটারও চালান৷ তার নিজের তৈরি একটি ট্রেলারও আছে, যেটিতে করে তিনি বিভিন্ন সরঞ্জাম পরিবহণ করেন৷ পরবর্তী অভিযানের জন্য তিনি সবসময় প্রস্তুত থাকেন, জীবনকে পরিপূর্ণভাবে যাপন করেন তিনি।
আনাস্টাসিয়া বলেন, ‘‘আমি সবধরণের খেলাধুলা পছন্দ করি। আমি উইন্ডসার্ফিং করি। যখন বাতাস কম থাকে তখন আমার খুব ভালো লাগে, আমি এটা উপভোগ করি৷ আমি ওখানে যাচ্ছি। বেশ দূরে, ৩০০ মিটারের বেশি৷ পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমি এটা করে ফেলেছি। সেখানে সাত মিনিট থেকে ফিরে এসেছি৷ কেউ বিশ্বাসই করতে পারেনি যে আমি দ্বীপে পৌঁছে গেছি৷
যখন হালকা বাতাস থাকে তখন আপনার শুরু করা উচিত, বা একেবারে বাতাস না থাকলেও হতে পারে৷ তাহলে আপনি পাল তুলতে, ভারসাম্য বজায় রাখতে, সমুদ্রে বোর্ডের উপর দাঁড়ানো শিখতে পারবেন৷ কীভাবে ঘুরতে হয় সেটা অবশ্যই আপনার প্রথমে শিখতে হবে৷ আর বেশি দূরে যাবেন না! আপনাকে সত্যিই ঘুরে দাঁড়ানোটা প্রথম শিখতে হবে, কারণ, আপনি জানেন না কোথায় পাথর আছে, পাথর… আর আপনি হয়তো ফিরেও যেতে পারবে না৷ এটা বিপজ্জনক৷ সেজন্য আমি সবাইকে প্রথমে এখান থেকে শেখার পরামর্শ দেই৷”
২০২৪ সালের জুন মাসে আনাস্টাসিয়া তার আরেকটি স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন: নিজের রেকর্ড ভেঙে তিনি কেফালোনিয়া এবং জাকিনথসের মধ্যে সার্ফিং করেন, যার দূরত্ব ছিল ১১ নটিক্যাল মাইল৷
আনাস্টাসিয়া জানান, ‘‘এবার আমি চেয়েছিলাম গিনেস রেকর্ডের স্ট্যাম্পটি ১৬ অক্টোবরের পর লাগানো হোক, শেষ অংশের যাত্রাটি ৮৬ বছর পূর্ণ হওয়ার পর করতে চেয়েছিলাম, যেন কেউ আমাকে সাড়ে ৮৫ বছর না বলে৷”
আনাস্টাসিয়ার আরও একটি ইচ্ছা আছে: সেই মানুষটিকে খুঁজে বের করা যার কাছ থেকে তিনি এত বছর আগে প্রথম উইন্ডসার্ফিং সরঞ্জাম ভাড়া নিয়েছিলেন৷ সেদিন এই খেলার প্রতি তার আজীবনের আবেগের জন্ম হয়েছিল।
আনাস্টাসিয়া বলেন, ‘‘তিনি যদি আমার বার্তাটি শোনেন, আমি আপনাকে আমার সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ করছি। আমি তাকে উপহার হিসেবে কেফালোনিয়ায় ছুটি কাটানোর প্রস্তাব দেব৷ আমি কেফালোনিয়ার বিমানবন্দরের কাছে থাকি, মাত্র পাঁচ মিনিটের দূরত্ব৷ যদি তিনি আমাকে বলেন যে তিনি আসছেন, তাহলে আমি তাকে বিমানবন্দরে থেকে নিয়ে আসব৷ সত্যি বলতে, আমি খুব খুশি হব৷”
ততদিন পর্যন্ত আনাস্টাসিয়া নিজের মতো করে জীবনযাপন করবেন৷ আর অন্যদের তার নিজস্ব দর্শন দিয়ে অনুপ্রাণিত করবেন৷ তার দর্শন হচ্ছে, বয়স শুধুই একটি সংখ্যা।