শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৮ অপরাহ্ন

বিশ্বের সবচেয়ে দামি হোটেল বুর্জ আল আরবে যা রয়েছে

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৬ মে, ২০২৩

দুবাইয়ের বুর্জ আল আরব হোটেলের নাম শোনেন নি এমন মানুষ কমই আছেন। বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল হোটেলের মধ্যে এটি একটি। নৈকার পাল তোলা সোনায় মোড়ানো এই হোটেল অবস্থিত এক দ্বীপে। কৃত্রিম এই দ্বীপটিতে হোটেল তৈরির কাজ শুরু হয় ১৯৯৪ সালে, শেষ হয় ১৯৯৯ সালে।

এটি বিশ্বের সবচেয়ে ব্য্যবহুল হোটেল। বিশ্বের প্রথম সাততারা হোটেল এটি। কেন এই হোটেল এতো জনপ্রিয় এবং অন্য সবগুলোর থেকে আলাদা। চলুন জেনে নেয়া যাক এর কিছু চমকপ্রদ তথ্য-

এই হোটেলের নামটিও যথেষ্ট অর্থবোধক, নামটির মধ্যেই লুকিয়ে আছে হোটেলটির বৈশিষ্ট্য গুলো। আরবি ভাষায় বুর্জ শব্দের অর্থ হলো টাওয়ার। বুর্জ আল আরব এর অর্থ হলো আরবের টাওয়ার। এই হোটেলটি দুবাই এর গর্ব এমনটা অনেকেই মনে করেন এবং এটি বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ হোটেল হওয়ার জন্য এই হোটেলটি শুধুমাত্র দুবাইয়ে নয় জগত্‍ জুড়ে বিখ্যাত।

হোটেলের সার্ভিস এবং ম্যানেজমেন্ট নিয়ে আপনি যত প্রশংসা করবেন ততই কম পরে যাবে। খুবই উন্নত এবং সহযোগী পূর্ণ সার্ভিস প্রদান করেন এই হোটেল ম্যানেজমেন্ট। শুধু মাত্র দুবাই নয় এই হোটেল এর বেশ কয়েকটি শাখাও রয়েছে। তাই দুবাইয়ের বাইরেও বুর্জ আল আরব হোটেলে থাকা সম্ভব। দুবাইয়ের সঙ্গে যুক্ত একটি ছোট দ্বীপের ওপর তৈরি করা হয়েছে। এর উচ্চতা প্রায় ২৮০ মিটার। এর মোট উচ্চতার ৩৯% অংশ অব্যবহৃত। দুবাই থেকে হোটেলে যাওয়ার জন্য একটি ছোট পুল রয়েছে। বুর্জ আল আরব হোটেলের পরিচালনা করে জুমেরাহ।

নৌকার পালের আকৃতি এই হোটেলটি সাত তারকা এই হোটেলটির সাধারণ মানের একটি রুম একদিনের জন্য ভাড়া নিতে হলে খরচ করতে হবে বাংলাদেশী টাকায় সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা। আর যদি স্যুট নিতে চান তাহলে গুনতে হবে বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৮ লাখ টাকা। ডলারের হিসেবে স্যুইট গুলোর মূল্য শুরু হয় প্রতি রাত ১,০০০ ডলার থেকে ১৫,০০০ ডলার পর্যন্ত; রয়্যাল স্যুটগুলো সবচেয়ে ব্যয়বহুল যাতে থাকতে প্রতি রাতে খরচ পড়বে ২৮,০০০ ডলার।

টাকার পরিমাণটা শুনে অনেকের মনে হতে পারে খুব বেশি মানুষ এই হোটেলে যায় না। তাদের উদ্দেশ্যে বলছি আপনার টাকা থাকলেই আপনি যখন তখন রুম ভাড়া নিতে পারবেন না। এজন্য আগে থেকে রুম বুকিং দিতে হবে সঙ্গে অবশ্যই বায়োডাটাও জমা দিতে হবে।

ভবনের বাহিরের কাঠামোটি মূলত কংক্রীটের টাওয়ারের মাঝে প্রোত্থিত স্টীলের কংকাল কাঠামো । ভবনটির বহির্ভাগকে দাউ নৌযানের পালের আকৃতি দিতে মূল মাস্তুল থেকে দুটি V আকৃতির কাঠামো দু’দিকে প্রসারিত। প্রসারিত কাঠামোর মধ্যভাগ টেফ্লন কোটেড ফাইবার গ্লাস দিয়ে আবদ্ধ। মূল মাস্তুল এবং পালের মধ্যকার অংশটি বেঁকে মধ্যভাগে একটি আট্রিয়াম সৃষ্টি করেছে। পালের অংশটি বানানো হয়েছে ডায়নিয়ন নামক উপাদান দিয়ে যা ঘিরে আছে প্রায় ১৬১,০০০ স্কয়ার ফিট এলাকা (১৫,০০০মিটার স্কয়ার), এতে আছে দুইটি পরত, এবং ১২ ভাগে বিভক্ত প্যানেলটি উল্লম্বভাবে স্থাপন করা হয়েছে। বহির্ভাগটি মরুভূমির তীব্র তাপমাত্রা সহনশীল করার জন্য ডুপন্ট টেফ্লন দিয়ে মোড়ানো, ফলস্বরূপ কর্তৃপক্ষ আশা করে ৫০ বছরের মধ্যে এর রঙ অনুজ্জ্বল হবেনা।

এই হোটেলে রয়েছে ২০২ টি কক্ষ। ছোট রুমের আকার আনুমানিক এক হাজার ৮২০ বর্গফুট এবং বড় রুম ৮ হাজার ৪০০ বর্গ ফুট। বাথরুমে দামি টাইল আছে। দেয়ালের রঙ সাদা। হোটেলটির ৮৭,০০০ স্কয়ার ফিট ২২ ক্যারেট সোনার পাত দিয়ে মোড়ানো, প্রায় ৭২,০০০ স্কয়ার মিটার ৩০ ধরনের পাথর এবং মার্বেলে ঢাকা। লবিতে একটি ত্রিমাত্রিক কৃত্রিম ঝরনা স্থাপিত আছে যার আকৃতি ইসলামিক স্টারের মতো, এর একেকটি কোণা হোটেলটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থলের দিকনির্দেশ করে – তিনটি রেস্টুরেন্ট, গেস্টরুমের মধ্যকার করিডোর।

মার্বেলে মোড়ানো সাদা টুসকান কলাম এবং সর্পিলাকার সিঁড়িগুলো ক্লাসিসিজম এবং আর্ট ন্যূভো’র অনন্য দৃষ্টান্ত। স্পা-কর্ণারের সমান একেকটি বাথরূম মোজাইক করা মেঝে আর দেয়াল আরবী জ্যামিতিক ফর্মের প্রভাবে পেয়েছে শিল্পনিপুণ ছোঁয়া, সে আরবী জ্যামিতি’র প্রভাব ভবনের অন্যসব কোণেও খুঁজে পাওয়া যায়। মেহমানকে দেয়া হয় একটি বিশেষ ধরনের কার্ড। কার্ডটি স্পর্শ করলেই সোনালী রঙের দরজাটি খুলে যায়। রিমোট কন্ট্রোলে চলে হোটেল স্যুটের ভেতরের দরজা, জানালার পর্দা খোলার কাজ। টিভি, টেলিফোন, ইন্টারনেট, লাইব্রেরীসহ হোটেলের ঘুমানোর জন্য খাটটিও ঘূর্ণায়মান।

“বুর্জ আল আরব” এর প্রতিটি রুমে রয়েছে ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের আইপ্যাড। হোটেলটির নানা তথ্যাদি সহ বিভিন্ন সেবাসমূহ আইপ্যাডে দেয়া থাকবে। হোটেল এর রেস্তোরাগুলোর খাবার মেনুসহ সব ধরনের সুবিধাদি আইপ্যাড থেকে একজন অতিথি জেনে নিতে পারবেন। এটি অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন ডিজাইন এবং অতুলনীয় গুণগত মানের যা অতিথিদের সন্তুষ্ট করবে। যদি কোন অতিথি হোটেলে থাকাকালীন ২৪ ক্যারেট সোনার আইপ্যাড নিজের করে পেতে চান তবে তাকে ডলার অতিরিক্ত গুণতে হবে। বাংলাদেশী টাকায় দিতে হবে ৮ লাখ টাকা। সোনার আইপ্যাড ছাড়াও স্বর্ণের আইপ্যাড মিনি, গোল্ড আইফোন ৫ এবং গোল্ড ব্ল্যাকবেরি কিউ টেনও কিনতে পারবেন বিলাসী অতিথীরা।

এই হোটেলের রেস্টুরেন্টও বিশেষ। প্রায় ৬৬০ ফুট উঁচু রেস্টুরেন্টের নাম আল মুত্তাহ। এখান থেকে দুবাইয়ের সৌন্দর্য দেখতে পারবেন। অল মাহরা নামক আরেকটি রেস্টুরেন্ট আছে। এই রেস্টুরেন্টে সাবমেরিনের মতো অনুভূতি হয়। সমুদ্রের দৃশ্য দেখতে দেখতে খাওয়ার স্বাদ নিতে পারবেন। শুধু তাই নয়,এই হোটেলের উপরেও হেলিপ্যাডও তৈরি করা হয়েছে। তবে এত কিছু রাজকীয় পরিষেবা উপভোগ করতে গেল আপনাকে প্রথমেই দুবাই যেতে হবে।

শুধু তাই নয়,এই হোটেলের উপরেও হেলিপ্যাডও তৈরি করা হয়েছে। এই হেলিপ্যাডে হোটেলটির ইতিহাসে স্মরনীয় কয়েকটি পাবলিক কর্মসুচি হয়েছে- আইরিশ গায়ক রোনান কিটিং তার মিউজিক ভিডিও’র শূটিং করেছেন এই হেলিপ্যাডে। ২০০৪ সালের মার্চ মাসে গল্‌ফার টাইগার উড এই হেলিপ্যাড থেকে পার্শিয়ান গালফ সাগরের দিকে বেশ কয়েকটি বল মেরেছেন।

২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারীতে টেনিস তারকা আন্দ্রে আগাসি এবং রজার ফেদেরার এই হেলিপ্যাডে একটি ম্যাচ খেলেছেন। তখন অস্থায়ীভাবে হেলিপ্যাডটিকে একটি ঘাসবহুল টেনিস কোর্টে রূপান্তর করা হয়েছিল। হেলিপ্যাডে কোন সীমানা কিংবা বেড়া নেই, তাই টেনিস বল যদি একবার কোর্টের বাইরে চলে যায় তবে সেটি ফিরিয়ে আনার কোন উপায় নেই। তবে এত কিছু রাজকীয় পরিষেবা উপভোগ করতে গেল আপনাকে প্রথমেই দুবাই যেতে হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com