সারাবিশ্বে অনলাইন ট্রাভেলে এজেন্সি (ওটিএ) ট্রাভেল ব্যবসায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায় গতি বাড়ছে। জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এ ব্যবসা। বাংলাদেশে অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা খুব অল্প দিনেই ট্রাভেলারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। এই সুযোগে শুরুতেই কিছু অসাধু –সুযোগ সন্ধানীদের কবলে পড়েছে বাংলাদেশের অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা। হালট্রিপ কিংবা ২৪টিকেট ডট কমের মতো অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সির মতো কিছু প্রতিষ্ঠান অগ্রসরমূখী এ ব্যবসাকে নানাবিধ প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে।
তারপরও এগিয়ে যাবার পালা। সারাবিশ্বের লক্ষ লক্ষ হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট বুকিং এর জন্য ১৯৯৪ সালে প্রথম ট্রাভেলওয়েব ডট কম এর আবির্ভাব ঘটে। এ ছাড়া ১৯৯৫ সালে ওয়ার্ল্ডওয়াইড ওয়েবের মাধ্যমে ইন্টারনেট ট্রাভেল নেটওয়ার্ক প্রথম এয়ারলাইন টিকেট বিক্রয় করে অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সির ধারনার গোড়াপত্তন করে।
তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬ সালের অক্টোবরে এক্সপেডিয়া ডট কম নামের ব্যবসায়িক সফলতার জন্য অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সির যাত্রা শুরু হয়। দীর্ঘ প্রায় দু’দশক পর বাংলাদেশে অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসার পরিধি বিস্তৃতি লাভ করে। প্রযুক্তি উন্নয়নে বৈশ্বিক প্রবণতার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অনলাইনে ভ্রমণ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি বাংলাদেশ ট্রাভেল মার্কেটে এক বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটানোর জন্য চেষ্টা করছে। অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সিগুলো ভ্রমণ পিপাসু মানুষের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে সকল ধরনের সুবিধা নিয়ে পথ চলতে শুরু করেছে।
ট্রাভেলারগণ অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সির ওয়েবসাইটের মাধ্য পেমেন্টসহ নিজের টিকেট নিজেই সংগ্রহ করার স্বাধীনতা পেয়ে থাকেন। করোনা মহামারিতে কিংবা সময়ের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার পছন্দ মতো তারিখ, গন্তব্য, বাজেটের সীমাবদ্ধতা কথা বিবেচনা করে এয়ারলাইন্স, হোটেলসহ অন্যান্য সুবিধা পছন্দ করার সুযোগ রয়েছে। সকল সুবিধার মধ্যেই গ্রাহক ইমেইলের মাধ্যমে টিকেট সংগ্রহ করতে পারেন যে কোনো সময়।
গ্রাহকদের জন্য ২৪ ঘন্টা থাকছে অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সির সকল সেবা। অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি আপনার পছন্দমতো যেকোনো এয়ারলাইন্স, আসন চয়েসের জন্য ইকোনমি বা বিজনেস ক্লাস, হোটেল চয়েসের ক্ষেত্রে পাঁচ তারকা, চার তারকা কিংবা তিন তারকা যেকোনোটি হতে পারে আবার রুম চয়েসের ক্ষেত্রে ডিলাক্স, সুপার ডিলাক্স কিংবা স্যুট হতে পারে। সব কিছুই নির্ভর করে বাজেটের সীমাবদ্ধতার উপর।
যেকোনো পছন্দকে অগ্রাধিকার দিয়ে ওটিএ গুলো গ্রাহকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। ওটিএ-এর ওয়েব সাইটে একই সাথে এভেইলেবল সব এয়ারলাইন্স এর ভাড়াসহ অন্যান্য তথ্য পেয়ে যাবেন, যার কারনে আপনি টিকেট সংগ্রহের ব্যাপারে সহজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। স্টান্ডার্ড সব অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি থেকে সেবা নেয়ার জন্য যেকোনো ধরনের ভিসা, মাস্টার কার্ড, আমেরিকান এক্সপ্রেস, ইউনিয়ন পে, ডিবিবিএল নেক্সাস, সিটি টাচ এর মাধ্যমে অনলাইনে পেমেন্ট দেয়ার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া দেশে মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, রকেট, নগদ ইত্যাদি ব্যবহার করেও সহজে পেমেন্ট দেয়া সম্ভব। অস্বাভাবিক রকমের মূল্যছাড় কখনই অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সির জন্য সুস্থ ব্যবসা পরিবেশ তৈরী করতে পারে না।
অযৌক্তিক অফার প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বয়কট করে সুস্থ স্বাভাবিক ধারার পরিবেশ তৈরী করে জনপ্রিয় এ ব্যবসাকে বাংলাদেশে আরো গতিশীল করার সুযোগ রয়েছে। গুটি কয়েকটি এজেন্সির অপেশাদারী আচরণের কারণে জনপ্রিয় খাতটি বারবার প্রশ্নের সম্মুখিন হচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সবসময়ই মনিটরিং এর মধ্যে রাখা প্রয়োজন এ খাতটি। গ্রাহকদের সচেতন হওয়াটাও খুব জরুরী। যারা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গ্রাহকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে তাদের সুরক্ষা দেয়াও কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।
অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায় সম্প্রতি ইউএস-বাংলা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ট্রিপলাভার ডট কম আত্নপ্রকাশ করেছে। স্বল্প সময়ের মধ্য গ্রাহকদের মধ্যে আস্থা অর্জন করতেও সক্ষম হয়েছে। ট্রিপলাভারসহ বাংলাদেশে শেয়ারট্রিপ, গো যায়ান, ফ্লাইট এক্সপার্ট, বাইটিকেট সহ অনেকগুলো অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি ইতিমধ্যে বিভিন্ন এয়ারলাইন্স ও ট্রাভেল এজেন্সির সাথে ব্যবসায়িক সেতু বন্ধণ রচনা করতে সক্ষম হয়েছে। সুস্থ ধারার ট্রাভেল ব্যবসায় বিশ্বকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি। সারবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা জনপ্রিয় হয়ে উঠুক এই প্রত্যাশায় ট্রাভেল সংশ্লিষ্ট সকলে।
লেখক মোঃ কামরুল ইসলাম মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ ইউএস-বাংলা গ্রুপ