দুবাই এমনিতে আকাশচুম্বী স্থাপত্যের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। এবার সেই শহরের মুকুটে যুক্ত হলো আরও একটি পালক। আনুষ্ঠানিকভাবে অতিথিদের জন্য খুলে গেল বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু হোটেল সিয়েল দুবাই মেরিনা। ইন্টার কন্টিনেন্টাল হোটেলস গ্রুপ বা আইএইচজির ভিনটেজ কালেকশনের অন্তর্ভুক্ত এই হোটেল দুবাইয়ের আকাশচুম্বী মেগা স্ট্রাকচারগুলোর তালিকায় নবতম সংযোজন।
বিস্ময়কর এই হোটেলের উচ্চতা ৩৭৭ মিটার। এতে রয়েছে ৮২টি তলা আর ১ হাজার ৪টি রুম ও স্যুট। এটি যেন দুবাইয়ের পর্যটন বুমের প্রতীক, যেখানে গত বছর ১৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন আন্তর্জাতিক পর্যটককে স্বাগত জানানো হয়েছে এবং বিলাসবহুল অভিজ্ঞতা দেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। হোটেলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেইনরিখ মোরিও এটিকে ‘দূরদর্শী ল্যান্ডমার্ক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘অসাধারণ এই হোটেল পর্যটন ও ব্যবসার বৈশ্বিক গন্তব্য হিসেবে দুবাইয়ের মর্যাদাকে প্রতিফলিত করে, যা একই সঙ্গে উন্নত ও অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা দেবে।’
স্থাপত্যের বিস্ময়: উচ্চতা ও উদ্ভাবন

এনওআরআর গ্রুপ স্থপতিদের ডিজাইন করা সুচালো আকৃতির এই কাঠামোর সবকিছুই যেন উচ্চতাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। প্রতিটি রুমেই রয়েছে মেঝে থেকে সিলিং পর্যন্ত বিস্তৃত কাচের জানালা, যেখান থেকে পাম জুমেইরাহ, দুবাই স্কাই লাইন এবং আরব উপসাগরের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যায়। এর ৭৬ তলায় আছে ইনফিনিটি পুল, যা এর অন্যতম আকর্ষণ। এটি সমুদ্রমুখী আউটডোর ইনফিনিটি পুল, যা বিশ্বের উচ্চতম পুলগুলোর মধ্যে অন্যতম। টাওয়ারের একেবারে শীর্ষে রয়েছে একটি পর্যবেক্ষণ ডেক, যেখান থেকে দিগন্ত পর্যন্ত বিস্তৃত আকাশ দেখা যায়।
স্থপতিরা বলছেন, সিয়েলর নকশা সম্পদ, দক্ষতা, স্থায়িত্বসহ অনেক জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে। তাদের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, সিয়েল একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্প, যেখানে টাওয়ারের সম্পূর্ণ উচ্চতা জুড়ে উল্লম্বভাবে বিন্যস্ত বাগান রয়েছে।
ভোজনরসিকদের জন্য আটটি গন্তব্য
হোটেলের অভ্যন্তরীণ সুযোগ-সুবিধা এর নকশার মতোই বিলাসবহুল। এখানে মোট আটটি ভিন্ন ভিন্ন ভোজনশালা রয়েছে, যা অতিথিদের বিশ্বভ্রমণের অভিজ্ঞতা দেবে।
ওয়েস্ট ১৩: ভূমধ্যসাগরীয় খাবারের স্বাদ পাওয়া যাবে এখানে। এর মেন্যুতে রয়েছে হাতে তৈরি পাস্তা, গাইরোস, টাকোস, মেজে এবং কারিগরি বেকারিসামগ্রী।
ওয়েস্ট ১৪: এই রেস্তোরাঁ এশিয়ান বুফে পরিবেশন করে। সেখানে লাইভ রামেন, ফো, সুশি, ডিম সামসহ বিভিন্ন ধরনের তরকারি পাওয়া যায়।
রাশান ক্যাফে অ্যান্ড আর্টিসেনাল বেকারি: এখানে সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার এবং সারা দিনের জন্য লাইভ পেস্ট্রি ও বিশেষ কফি পাওয়া যায়।
উচ্চতম এশিয়ান ডাইনিং অভিজ্ঞতা
হোটেলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো ট্যাটু। এটি একটি পুরস্কার বিজয়ী আধুনিক এশিয়ান কনসেপ্ট। এর তিনটি শাখা রয়েছে; ট্যাটু রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড বার, ট্যাটু স্কাই পুল ও ট্যাটু স্কাই পুল।
ট্যাটু রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড বার (৭৪ তলা): প্রাচীন পৌরাণিক কাহিনি, আধুনিক দক্ষতা এবং সমসাময়িক চায়নিজ ও জাপানিজ খাবারের এক মিশ্রিত জগৎ এটি।
ট্যাটু স্কাই পুল (৭৬ তলা): এটি ৩১০ মিটার ওপরে অবস্থিত। দিনের বেলায় আরামদায়ক ডে-বেড এবং জাপানিজ-ফিউশন স্ন্যাক্স পাওয়া যায় এখানে। সূর্যাস্তের পর ডিজে সেট শুরু হলে এখানকার পরিবেশ আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
ট্যাটু স্কাই পুল (৮১ তলা): এটি চূড়া। এখানে ককটেল, মিউজিক এবং চারপাশের ৩৬০-ডিগ্রি দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
এ ছাড়া স্কাই লাইন ভিউসহ একটি ২৪ ঘণ্টা উন্মুক্ত অত্যাধুনিক জিম রয়েছে এখানে। গ্রাউন্ড লেভেলে থাকা অতিথিরা পাম জুমেইরাহতে অবস্থিত সলুনা বিচ ক্লাব ব্যবহার করতে পারবেন। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৬১ তলায় স্পা সেন্টারটি চালু হবে।
সূত্র: ইউরো নিউজ