বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ‘বিমান ফ্লাইট ক্যাটারিং সেন্টার’ (বিএফসিসি) হয়ে উঠেছে স্বর্ণপাচারের অন্যতম নিরাপদ স্থান। বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর জন্য খাবার সরবরাহের নামে এখানে চলছে চোরাচালান, যেখানে দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং নামমাত্র চেকিংয়ের সুযোগ নিচ্ছে একদল অসাধু কর্মকর্তা।
অপর্যাপ্ত নিরাপত্তাকর্মী এবং অপরিসর নিরাপত্তা গেটের কারণে বিএফসিসি স্বর্ণপাচারের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
অতি সম্প্রতি বিমানবন্দরে নিয়োজিত গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ক্যাটারিং সার্ভিসের আড়ালে স্বর্ণপাচারের বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সতর্ক করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেন, গ্রিন চ্যানেল কেন্দ্রিক গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর ফলে চোরাকারবারিরা এই কৌশল নিয়েছে। ক্যাটারিং সার্ভিসের গাড়ি ও পরে খাবারের উচ্ছিষ্ট নিয়ে যাওয়া গাড়িগুলো মনিটরিং এমনকি চেকিংয়ের আওতায় আনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
তবে বিমানের মুখপাত্র, জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঢালাও এ ধরনের অভিযোগের সুযোগ নেই। একেবারে যে হচ্ছে না সেটাও বলবো না। আমরা এ ধরনের অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে থাকি, এমনকি পুলিশেও দেই। পূর্বেও আমাদের এ ধরনের রেকর্ড রয়েছে।’
অভিযোগ আছে স্বর্ণ চোরাচালানের জন্যই এই ব্যবস্থা চালু রয়েছে
এমন ‘লঙ্গরখানা’র দৃশ্য প্রতিদিনই দেখা যায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ট্রানজিট এলাকায়। যেখানে যাত্রীরা ইমিগ্রেশন পার হয়ে অন্য দেশে যাওয়ার ফ্লাইটে ওঠার জন্য অপেক্ষা করেন, সেখানেই লঙ্গরখানা খুলে খাবার পরিবেশন করে বাংলাদেশ বিমানের বিএফসিসি কর্তৃপক্ষ। শুধু দেশের যাত্রীরাই নন বিদেশি পর্যটকরাও বাংলাদেশ বিমানের এই লঙ্গরখানা দেখে নিজ দেশে ফিরেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ট্রানজিট যাত্রী বা বিদেশে যাওয়া যাত্রীদের বিমানবন্দরের ভেতরে খাবার পরিবেশন করায় বিমানবন্দরের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশ বিমান ছাড়া অন্য এয়ারলাইন্সগুলো কুপনের মাধ্যমে খাবার পরিবেশন করলেও রহস্যজনকভাবে বাংলাদেশ বিমান লঙ্গরখানার নিয়ম অবলম্বন করছে। আর এই কারণে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের এই জাতীয় খাবার খেতে হচ্ছে। মুখোমুখি হতে হচ্ছে বাজে আচরণের।
অভিযোগ আছে আগ বাড়িয়ে লঙ্গরখানা করে বিএফসিসি’র খাবার দেওয়ার কারণ স্বর্ণ চোরাচালান। এর আগেও বহুবার বিএফসিসি’র বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাচালানের অভিযোগ পেয়েছে সরকার। খাবারের আবর্জনা নিতে আসা ট্রলির ভেতরে করে কোনও ধরনের নিরাপত্তা যাচাই ছাড়াই চলে আসতে পারে স্বর্ণ। এভাবে অনেকবারই ধরা পড়েছে কাস্টমসসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। আর এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশ বিমানেরই কর্মকর্তারা।
গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীর আলম নামে এক কর্মচারীকে ৪০টি স্বর্ণের বার (যার মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা)সহ গ্রেফতার করে ঢাকা কাস্টমস হাউজের প্রিভেনটিভ টিম। পরে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
ঢাকা কাস্টমস হাউজের প্রিভেনটিভ টিমের উপ-কমিশনার ইফতেখার আলম ভুঁইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সব প্রকার চোরাচালান রোধে আমাদের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে গ্রিন চ্যানেল কেন্দ্রিক ত্রিমাত্রিক গোয়েন্দা নজরদারি চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ট্রানজিট এলাকার ব্যাপাটারও আমাদের নজরদারিতে আছে। আমরা তাদের ময়লার গাড়িগুলোও নজরদারির মধ্যে আনার ব্যবস্থা করছি।’
এদিকে এভিয়েশন সিকিউরিটির (এভসেক) এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের গোয়েন্দা ইউনিট এটি নিয়ে কাজ করছে। আমাদের নজরদারি রয়েছে।’